scorecardresearch

বুমরা-বিহীন দলে কি পরীক্ষার জায়গা রয়েছে?

সদ্যসমাপ্ত টি-২০ সিরিজ থেকে বুমরার চোট, পন্থের সাম্প্রতিক ফর্ম হয়ে ধোনির ভবিষ্যত। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলায় তাঁর নিয়মিত কলামে ক্রিকেট দুনিয়ার রাউন্ডআপ করলেন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়।

saradindu-mukherjee-cricket-column
অলঙ্করণ: অভিজিত বিশ্বাস

দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে সদ্যসমাপ্ত ভারতের তৃতীয় টি-২০ ম্যাচের কথা দিয়ে আজকের লেখাটা শুরু করব। বেঙ্গালুরুর এমএ চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে টসের পর যখন সঞ্জয় মঞ্জরেকর বিরাট কোহলির ইন্টারভিউ নিচ্ছিলেন, তখন তিনি বললেন, এটা বুঝতে বুদ্ধির প্রয়োজন নেই যে এই উইকেটে টস জিতে ক্যাপ্টেন কী করবে। অর্থাৎ মঞ্জরেকর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ভারত টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করবে। কিন্তু সকলকে চমকে দিয়ে বিরাট বললেন তিনি প্রথমে ব্যাট করবেন।

বিরাট কারণ দর্শিয়ে বললেন, টিমকে আরামদায়ক জায়গা অর্থাৎ ‘কমফোর্ট জোন’ থেকে বার করে নিয়ে আসতে চান। ডিফারেন্ট সিচুয়েশনে ব্যাটিং-বোলিং করতে চান তাঁরা। মিশন টি-২০-র (পড়ুন টোয়েন্টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ) কথা মাথায় রেখেই কোহলির এই সিদ্ধান্ত। ফলে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ভারত টসে জিতে ব্যাটিং/বোলিং যাই করুক না কেন, দল যেন প্রস্তুত থাকে। রেকর্ড বলছিল ছ’বারের মধ্যে ছ’বারই পরে ব্যাট করা দল চিন্নাস্বামীতে জিতেছে। এটা পরিষ্কার বোঝা গিয়েছিল, ভারত এখন এক্সপেরিমেন্টের পথেই হাঁটবে। যদিও সেটা সফল হল না আপাতত।

এটাও জলের মতো পরিষ্কার যে, এখনও জসপ্রীত বুমরার বিকল্পের খোঁজ চলছে ভারতীয় দলে। গতকাল সংবাদ মাধ্যমেই এই অত্যন্ত দুঃখের খবর পেলাম যে বুমরা লোয়ার ব্যাক স্ট্রেস ফ্র্যাকচারের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ থেকে ছিটকে গিয়েছে।

আরও পড়ুন: ক্রিকেটে আর ‘আম্পায়ার্স কল’ রাখার অর্থ কী?

ওর যে চোটটা লেগেছে সেটা কিন্তু সারতে অনেকটা সময় লাগে। যদিও আমাদের আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা এখন আগের থেকে অনেক উন্নত। কিন্তু পিঠ শরীরের এমন একটা জায়গা যার দিকে আলাদা নজর থাকে। কারণ পিঠের ওপরেই পুরো শরীরটা দাঁড়িয়ে থাকে। ফাস্ট বোলারদের কোমরটা ঠিক না থাকলে তারা একশ শতাংশ দিতে পারে না।

আর এই স্ট্রেস ফ্র্যাকচার সারাতে গেলে দরকার বিশ্রাম ও রিহ্যাবিলিটেশন। অবশ্যই প্রচুর ফিজিওথেরাপি। বিশেষজ্ঞ ফিজিও-র জন্য বুমরাকে বিদেশে পাঠাতে হলেও হতে পারে। কারণ একটা ফিট বুমরা টি-২০ বিশ্বকাপে বাকিদের তুলনায় অনেকটা ফারাক গড়ে দেবে। এটা বলতে কোনও দ্বিধা নেই যে, ভারতে রিহ্যাবের প্রক্রিয়াটা এখন উন্নত মানের হলেও স্পোর্টস ইনজুরির অপারেশনের ক্ষেত্রে বিদেশ অনেকটাই এগিয়ে। উন্নত ট্রিটমেন্টের জন্য ইউরোপ বা আমেরিকাতেই যেতেই হবে। খেয়াল করে দেখুন, সুরেশ রায়নাও কিন্তু হল্যান্ডে গিয়েই অপারেশন করিয়ে এলো। বুমরাকে যদি বিদেশে পাঠাতে হয় তাহলে ভারতীয় দলের নতুন ফিজিও নিতীন প্যাটেলের সঙ্গে বিদেশের ফিজিও-র নিয়মিত যোগাযোগ থাকবে। দুই ফিজিওর পরামর্শ মেনেই বুমরার চিকিৎসা চলবে।

বেঙ্গালুরুতে দেখলাম ওয়াশিংটন সুন্দর, রবীন্দ্র জাদেজার মতো স্পিনারদের খেলাল ভারত। টিম ম্যানেজমেন্ট দেখে নিতে চাইছে যে, কুলদীপ যাদব বা যুজবেন্দ্র চাহালের মধ্যে কেউ যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে দ্বিতীয় স্পিনার কে হতে পারে। আমি বলব জাদেজার নাম। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিংয়ের জোরে এদের মধ্যে সবার থেকে এগিয়ে জাদেজা।

একটা জিনিস বোঝা যাচ্ছে যে, টি-২০ বিশ্বকাপের আগে ভারত কুলচা জুটিকে প্রকাশ্যে আনতে চাইছে না। বিশ্বকাপের আগেই কিন্তু তাদের দলে ফেরানো হবে। এখন থেকে এক বছর কুলচাকে খেলালে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো ওদের বোলিংয়ে অভ্যস্ত হয়ে যাবে, বুঝে যাবে। কিন্তু ৬-৭ মাস বাইরে রাখলে ওদের বিরুদ্ধে প্র্যাকটিস পাবে না বিপক্ষ টিম। ফলে নতুন করে বিশ্বকাপে ওদের খেলতে অসুবিধা হবে বাকিদের। টি-২০ বিশ্বকাপে কুলদীপ-চাহাল এবং জাদেজা ভারতের ট্রাম্প কার্ড হতে চলেছে। ওদের প্রত্যেকের চার ওভার কিন্তু ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

অস্ট্রেলিয়ার পিচে চায়নাম্যান অত্যন্ত কার্যকরী। খেয়াল করলে দেখা যাবে, অতীতে গারফিল্ড সোবার্স বা সাম্প্রতিক সময়ে ব্র্যাড হজরা কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে চায়নাম্যান বোলিং করেই যথেষ্ট সফল হয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টার্ন আর বাউন্স, দুটোই পাওয়া যায়। কুলদীপের হাতে একে আছে চায়নাম্যান, তার ওপর ও রিস্টস্পিনার। টি-২০ ফরম্যাটে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ওকে খেলতে রীতিমত বেগ পেতে হবে সকলকে।

এবার একজনের কথা বলতেই হবে। সেটা ঋষভ পন্থ। সম্প্রতি যার ফর্ম নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। আমি কিন্তু ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার হয়ে যখন থেকে বিশ্বকাপের কলাম লেখা শুরু করি, তখন থেকেই বলে আসছি যে, পন্থ চারে খেলার ব্যাটসম্যান নয়। ওকে খেলার জন্য ফ্রি লাইসেন্স দিতে হবেই। ফলে ছয় বা সাত নম্বর জায়গাটাই ওর। অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডে ওর টেস্ট শতরান আছে ঠিকই। কিন্তু ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম ফরম্যাটে ও ইনিংসটা এখনও বিল্ড-আপ করতে শেখে নি। ও তিরিশ বল খেলে চারটে ছয় মেরে হিসাব বদলে দেবে। এটাই পন্থ। বিশেষত ধোনি যখন দলে নেই, ওকেই দায়িত্ব নিতে হবে। আর ধোনি আদৌ দলে থাকবেন কি থাকবেন না সেটা স্বয়ং ঈশ্বরই জানেন। আদৌ কামব্যাক করবেন কি না আমরা জানি না। ধোনি নিজে অবশ্য বলেছেন যে, নভেম্বর বা ডিসেম্বরে সিদ্ধান্ত নেবেন।

আরেকটা বিষয় বলব। চার নম্বর জায়গাটা নিয়ে এখনও পরীক্ষা চলছে। এখানে খেলার জন্য রয়েছে শ্রেয়স আয়ার, মণীশ পাণ্ডে ও সঞ্জু স্যামসন। অথবা বিজয় হাজারে ট্রফি বা ঘরোয়া ক্রিকেটে ফর্মে থাকা কোনও ব্যাটসম্যানকেই ভাবতে হবে। আমি বলতে চাইছি চারে খেলুক ‘ম্যান ইন ফর্ম’। পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলতেই থাকবে যতক্ষণ না কম্বিনেশন ঠিক হচ্ছে। ১২-১৩ জন দলে থাকে, কিন্তু তিন-চারজনকে নিয়েই চলে পরীক্ষা।

পরিশেষে একটা কথা বলব, ভারতকে কিন্তু সাদা বলের ক্রিকেটে বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মার ছায়া থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এবার সময় এসেছে যুব খেলোয়াড়দের দায়িত্ব নেওয়ার।

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Sports news download Indian Express Bengali App.

Web Title: Saradindu mukherjee cricket column