বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে যে, বেশ কিছু সিনিয়র ক্রিকেটারের অনেক ব্যাপারেই মতের মিল হচ্ছে না, সে সম্বন্ধে আমরা সবাই অবগত। তাঁদের 'ম্যাচ ফি', 'কনট্র্যাক্ট,' বিজ্ঞাপন করা বা না করার মতো নানা সমস্যায় জড়িয়ে আছে দুই পক্ষ।
নতুন বাংলাদেশ দল
এরই মধ্যে বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডারের সাসপেনশন, বাংলাদেশের বোর্ডকে বাধ্য করে প্রায় ৬-৭ জন নতুন খেলোয়াড়কে আন্তর্জাতিক আঙিনায় আনতে। তাঁরা কিন্তু হতাশ করেন নি। ভারত যতই তাদের দল নিয়ে গবেষণা করুক না কেন, তারা ঘরের মাঠে যথেষ্ট শক্তিশালী দল। সদ্যসমাপ্ত টি-২০ সিরিজে বাংলাদেশ কিন্তু হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করল তথাকথিত দুর্বল দল নিয়ে।
তৃতীয় ও ফাইনাল টি-২০ ম্যাচে একটা সময় বাংলাদেশের ওভার পিছু ৮.৩৩ রান প্রয়োজন ছিল। ক্রিজে ছিলেন মহম্মদ নঈম ও মহম্মদ মিঠুন। হাতে ছিল আট আটটি উইকেট। ভারত কিন্তু তখন কোণঠাসা। বাংলাদেশ ইতিহাস সৃষ্টির দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে।
দীপক চাহার ও শিবম দুবের যুগলবন্দি
অধিনায়ক রোহিত গুরুনাথ শর্মা তখন ভাবছিলেন অন্য কথা। আক্রমণে ফিরিয়ে আনলেন তাঁর তুরুপের তাস দীপক চাহারকে। আমরা চাহারকে ভারত বা চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে পাওয়ার প্লে-তে দুরন্ত বল করতে দেখেছি। ফাইনালে বল করতে এসে প্রথম ওভারেই লিটন দাস ও সৌম্য সরকারকে তুলে নিয়েছিলেন। এইবার পাওয়ার-প্লের বাইরে যখন ভারত ও রোহিতের উইকেট প্রয়োজন, ঠিক তখনই এক বুদ্ধিদীপ্ত স্লোয়ার বলে ফিরিয়ে দিলেন মিঠুনকে।
এরপরেই রোহিত সবাইকে অবাক করে ফিরিয়ে আনলেন ২ ওভারে ২৩ রান দেওয়া শিবম দুবেকে। ম্যাচের অত্যন্ত স্পর্শকাতর মুহূর্তে। দুবে এসেই প্রথম বলে শূন্য রানে বোল্ড করে দিলেন গত ম্যাচের নায়ক মুশফিকুর রহিমকে। ১৫.৩ ওভারে এক অসাধারণ ইয়র্কারে তুলে নিলেন বিপজ্জনক নঈমকে। ১৫.৪ নম্বর বলে আফিফ হোসেনকে কট অ্যান্ড বোল্ড করে আউট করে, বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড ভেঙে দিলেন।
অধিনায়ক হিসেবে রোহিত শর্মা
আমরা রোহিতকে আইপিএলে দেখেছি মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে অনেক ছোট রানের টোটালকে প্রতিরোধ করতে বা আগলাতে। আবার এও দেখেছি আইপিএলে-র প্রথমার্ধে পয়েন্ট টেবিলে একদম নিচে থাকা মুম্বইকে চ্যাম্পিয়ন করতে। বাংলাদেশের স্কোর যখন ১১০/২ ছিল, তখন রোহিত একটা ছোট্ট টিম মিটিং করেন দলকে চাঙ্গা করার জন্য। আর এরপরেই চাহার-দুবের এই পারফরম্যান্স।
অত্যন্ত ক্ষুরধার মস্তিষ্কের অধিনায়ক রোহিত। জানেন, কীভাবে খেলোয়াড়দের থেকে সেরাটা বার করে আনতে হয়। চাপের মুখেও নিজের খেলোয়াড়়দের ওপর আস্থা রাখা ওঁর ক্যাপ্টেনসির বৈশিষ্ট্য। তাঁর রেকর্ডই বলে দিচ্ছে, কত বড় অধিনায়ক রোহিত। দেশের জার্সিতে টি-২০ ফরম্যাটে ৮০ শতাংশের ওপর জয় পেয়েছেন রোহিত। চার চারবার আইপিএল জেতা, একবার প্লেয়ার হিসাবে, তিনবার অধিনায়ক হিসাবে। চারটিখানি কথা নয়।
শিখর ধাওয়ানের ফর্ম চিন্তায় রাখবে
ভারত কিছুটা স্বস্তি পেল কেএল রাহুল, শ্রেয়স আয়ার, শিবম দুবে ও দীপক চাহারকে নিয়ে। কিন্তু চিন্তার ভ্রুকুটি রয়ে গেল শিখর ধাওয়ানের ধারাবাহিকতা নিয়ে। চার নম্বর জায়গা নিয়ে এখনও গবেষণা চলবে।
বাংলাদেশের প্রাপ্তি ও ভবিষ্যত
বাংলাদেশ পেল মহম্মদ নঈমের মতো অত্যন্ত প্রতিভাবান একজন ক্রিকেটারকে। এখন প্রশ্ন, তামিম ইকবাল দলে ফিরলে কি তারা নঈমকে খেলাবে? ভাল লাগল সইফুল ইসলামকে। রোহিত শর্মার মতো খেলোয়াড়কে দু'দুবার ব্যাট-প্যাডের গ্যাপ দিয়ে আউট করা সহজ নয়।
দ্বিতীয় টি-২০ ম্যাচে যখন রোহিত সংহার মূর্তি ধারণ করেছিলেন, তখন আমিনুল ইসলাম বিপ্লব, রাজকোটের মতো ব্যাটিং উইকেটে সুন্দর টার্ন ও বাউন্সে দু'টো উইকেট তুলে পার্টনারশিপ ভাঙেন। বোঝা গেল, মানসিক ভাবে শক্ত। সিনিয়র ক্রিকেটাররা আবার দলে ফিরে এলে বাংলাদেশ বেশ কিছু বড় টিমকে যে বেগ দেবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়ের নিয়মিত কলাম পড়ুন এখানে