সনাতনী ক্রিকেটের কফিনে প্রথম পেরেকটা পুঁতে দিল ইডেনে গোলাপি টেস্ট

ইডেন গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত ভারতের প্রথম দিন-রাতের টেস্টের পোস্টমর্টেম করলেন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়। বলছেন ক্রিকেটহীন গোলাপি আড়ম্বর!

ইডেন গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত ভারতের প্রথম দিন-রাতের টেস্টের পোস্টমর্টেম করলেন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়। বলছেন ক্রিকেটহীন গোলাপি আড়ম্বর!

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Saradindu Mukherjee on Pink ball test at Eden Gardens Kolkata in his cricket column

সনাতনী ক্রিকেটের কফিনে প্রথম পেরেকটা পুঁতে দিল ইডেনে গোলাপি টেস্ট (অলঙ্করণ-অভিজিত বিশ্বাস)

১৬০.৮ ওভার, ২ দিন, ৪৭ মিনিট ও ৫২ বল। প্রথম ড্রিকংসের আগেই ইতিহাস সৃষ্টিকারী ভারতের প্রথম গোলাপি বলে দিবা-রাত্র টেস্টের যবনিকা পতন হয়ে যায়। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের বাণী অক্ষরে অক্ষরে সত্য় প্রমাণিত করে তিন দিনও পৌঁছল না এই টেস্ট ম্য়াচ।

Advertisment

দর্শক এল, ক্রিকেট পেল কি তাঁরা?

প্রথম দিন দর্শক সংখ্য়া ছাড়িয়েছিল ৫২ হাজারেরও বেশি। দ্বিতীয় দিনে ৪২ হাজারেরও বেশি। কিন্তু গোলাপি মোড়কে মোড়া ভিতরের স্বপ্নের সামগ্রী আসলে ছিল অত্য়ন্ত সাদামাটা। বলতে চাইছি খেলার মুখ্য় উদ্দেশ্য় যে ক্রিকেট, সেটাই ম্লান করে দিল চোখ ঠিকরানো গোলাপি রঙটাকে।

Advertisment

শুধুই গোলাপি...

কল্লোলিনী কলকাতায় ছিল সাজো সাজে রব। টাটা সেন্টার, দ্য় ফরটিটু, শহিদ মিনার, উডল্য়ান্ডস হসপিটাল, এমনকী বাস-ট্রাম-ফেরিতে দেখতে পেলাম গোলাপি রঙের ছটা।মাঠে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন অধিনায়কদের মধ্য়ে কপিল দেব, দিলীপ বেঙ্গসরকার, শচীন তেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড়ের মতো ব্য়ক্তিত্বরা। ছিল ২০০০ সালের এপার বাংলা, ওপার বাংলার টিম। প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায় ও তাঁর টিমের ক্লান্তিহীন প্রচেষ্টা এই টেস্টকে পাঁচদিন টেনে নিয়ে যেতে পারল না।

বাংলাদেশ কি আদৌ পিঙ্ক টেস্ট খেলার যোগ্য়?

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে বাংলাদেশের মতো দুর্বল প্রতিপক্ষ, যাঁদের লাল বলের টেস্ট রেকর্ড উল্লেখযোগ্য় নয়, তারা কি পিঙ্ক বলে ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলার যোগ্য? এই টেস্টের ফলাফলই দিয়ে দিচ্ছে উত্তরটা।

নিউজিল্য়ান্ডের সঙ্গে পিঙ্ক টেস্ট খেলা যেত না?

যদি এই টেস্ট ম্য়াচটা অদলবদল করে ফেব্রুয়ারিতে আসা নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারত খেলত তাহলে কেমন হতো?বিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্টের নাম যখন সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায়, তখন বিসিসিআইয়ের ক্য়ালেন্ডার বদল করা কঠিন, কিন্তু একেবারে অসম্ভব ছিল কি?

ঠিক যেভাবে আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে প্রথম টি-২০ ম্য়াচটা মুম্বই থেকে হায়দরাবাদে সরে গেল। মুম্বই পুলিশ জানিয়ে দিয়েছিল যে, আগামী ৬ ডিসেম্বর বিআর আম্বেদকরের জন্মবার্ষিকী। ফলে ওই দিন নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়।

অবশ্য় সমগ্র ব্য়াপারটা নির্ভর করতো ভারত-নিউজিল্য়ান্ডের সঙ্গে পিঙ্ক বলে খেলতে চাইত কি না? অস্ট্রেলিয়াতে বিরাট কোহলি গোলাপি বলে টেস্ট খেলতে রাজি ছিলেন না। বিরাট তাঁর ব্য়াখ্য়ায় বলেছিলেন যে, একটা দেশের ৭০ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সিরিজ জেতার সম্ভাবনা থাকে, তখন তিনি বিনা প্র্যাকটিসে পিঙ্ক বলে খেলতে চাননি তিনি। যথেষ্ট যুক্তি ছিল বিরাটের কথায়।

দর্শকদের অতৃপ্তি রয়েই গেল

ভারত যেখানে বিশ্ব টেস্ট চ্য়াম্পিয়নশিপের পয়েন্টের তালিকায় শীর্ষে তখন নিউজিল্য়ান্ডের সঙ্গে খেলাই যেতে পারত। ভারত-নিউজিল্য়ান্ড টেস্ট যদি তিন দিনেও শেষ হতো, দর্শকরা একটা তৃপ্তির আস্বাদ পেত। যা বাংলাদেশকে হারিয়ে পেল না। ভুলে গেলে চলবে না ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অ্যাডিলেডে এই নিউজিল্য়ান্ডই কিন্তু বাইশ গজের প্রথম ডে-নাইট টেস্ট খেলেছিল পিঙ্ক বলে।

সনাতনী ক্রিকেটের শেষের শুরু

অপরদিক দিয়ে যদি দেখা যায়, গোলাপি আলোর ছটা, আতসবাজির রোশনাই, গান-বাজনা, গণ্য়মান্য় ব্য়ক্তির উপস্থিতি, উত্তেজনা ও উন্মেদনা। তারপর দর্শক সমাগম। প্রেসিডেন্ট সৌরভ, বিসিসিআই ও সিএবি-র নিরলস পরিশ্রম মাতিয়ে দিয়েছিল ক্রিকেটের নন্দনকানন ইডেনকে। পিঙ্ক বল মাঠে দর্শক টানার যদি এই দিশা দেখায়, তাহলে সনাতনী ক্রিকেটের কফিনে প্রথম পেরেকটা পোঁতা হয়ে গেল ইডেন এই টেস্টে।

শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়ের নিয়মিত কলাম পড়ুন এখানে

Virat Kohli Sourav Ganguly Eden Gardens