যতই আমরা এই টি-২০ আন্তর্জাতিক সিরিজকে 'মৈত্রেয়ী সিরিজ' আখ্যা দিই না কেন, বাংলাদেশ কিন্তু হারতে আসেনি ভারতে। ভারতীয় দলও যতই টিম নিয়ে গবেষণা করুক না কেন, তারাও প্রথম ম্য়াচে হারটাকে ভাল চোখে দেখবে না।
বিরাট কোহলিকে বিশ্রাম দেওয়ায় অধিনায়কত্ব করছেন রোহিত শর্মা। দিল্লি ম্য়াচের পর তিনি সঞ্চালক সঞ্জয় মঞ্জরেকরকে বলে দিলেন ব্য়াটিং ও ফিল্ডিং নিয়ে তিনি মোটেই খুশি নন। অধিনায়ক হিসাবে রোহিতের টি-২০ অধিনায়কত্বে ৮০ শতাংশ জয় ছিল। যা সত্য়িই ঈর্ষণীয়। বাংলাদেশ এর আগে ভারতের কাছে ৮-০ পিছিয়ে ছিল। সেই রেকর্ড নবর্নিমিত অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে পাল্টে দিল বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন-বাংলাদেশি বাঘকে বশ্যতা মানানোই চ্যালেঞ্জ রোহিতদের
গত সপ্তাহে টানাপোড়েনের পর বাংলাদেশ খেলল যেন এক আহত বাঘের মতো। ভারতে তাদের ব্য়াটিং ও বোলিং লাইনআপ নিয়ে গবেষণা করেছে ঠিকই। কিন্তু তাও বেশ শক্তিশালী দল ইন্ডিয়া। বাংলাদেশ এহেন ভারতকেই ১৪৮/৬ রানে বেঁধে রাখার পর পরিকল্পিত ও দুর্দান্ত ভাবে ভারতের বিরুদ্ধে সাত উইকেটে প্রথম আন্তর্জাতিক টি-২০ জিতল। পাশাপাশি বাংলাদেশ একটা ফরমান পাঠাল, যেন পূর্ব পরিসংখ্য়ান দেখে তাঁদের হেলাফেলা করলে ভুগতে হবে।
প্রথম টি-২০ ম্য়াচে দুই দলের পারফরম্য়ান্স কী চোখে দেখছেন?
শফিউল, আফিফরা দুর্দান্ত বোলিং করলেন। তাঁদের যোগ্য় সঙ্গ দিলেন অভিজ্ঞ 'FIZZ', ওরফে মুস্তাফিজুর রহমান। ব্য়াটিং ইনিংসে মহম্মদ নঈম তাঁর অভিষেক ম্য়াচে দুরন্ত একটা শুরু করে দিয়ে গিলেন। আর তারপর সৌম্য় সরকার, 'STREET FIGHTETR', মুশফিকুর রহিম ৬০ রানে অপরাজিত থেকে জয়ের লক্ষ্য়ে পৌঁছে দিলেন বাংলাদেশকে। ছোটখাটো চেহারার মুশফিকুর মানসিক দিক থেকে এত দৃঢ় যে, ভারতের বিরুদ্ধে যখনই খেলেন একটা রেখাপাত করে যান। অপরদিকে রোহিত শর্মা আউট হওয়ার পর কিছুটা হাল ধরেন শিখর ধাওয়ান ৪১ করে। মিডল অর্ডারে শ্রেয়স আয়ার এসেই সংহার মূর্তি ধারণ করে ২৩ রানে বিদায় নেন।
প্রসঙ্গ: পন্থ ও ডিআরএস,
দিল্লিতে ঋষভ পন্থের দেখে ভাল লাগল। মন্থর উইকেটে বিপরীতধর্মী ইনিংস খেলে ২৪ রান করলেন তিনি। প্রথমে বড় শট খেলে উইকেট ছুঁড়ে না দিয়ে ইনিংসে হাল ধরার চেষ্টা দেখা গেল ঋষভের ব্য়াটিংয়ে। তাঁর প্রতিভা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। চাই পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্য়াটিং।
পন্থকে উইকেটকিপিংয়ে আরও খাটতে হবে। ঋদ্ধিমান সাহার সঙ্গে টেস্ট দলে থাকা ঋষভকে কিন্তু ঋদ্ধির থেকে অনেক কিছু শিখতে হবে। ডিআরএস সম্পর্কে আরও ওয়াকিবহাল হতে হবে। চাহালের বলে মুস্তাফিজুর রহমান আউট ছিলেন। সেই রিভিউ না নিয়ে সৌম্য় সরকারের আউটের রিভিউ নিয়ে রিভিউটা নষ্ট করলেন। কোথাও এখনও ধোনির অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ক্ষুরধার ক্রিকেট বুদ্ধি, সঠিক রিভিউ নেওয়ার ক্ষমতা, সর্বোপরি চাপের মধ্য়ে হিমশীতল থাকাটা 'মিস' করি এখনও।
আরও পড়ুন-দিল্লির দূষণে অসুস্থ বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা
ম্য়াচের টার্নিং পয়েন্ট
কেউ ইচ্ছা করে ক্য়াচ ফসকায়, সেটা আমি মনে করি না। ১৭.৩ ওভারে ক্রনাল পাণ্ডিয়া মুশফিকুরের ক্য়াচ ফসকানোটাই ম্য়াচের টার্নিং পয়েন্ট। আন্তর্জাতিক ম্য়াচে এরকম ক্যাচ হাতছাড়া করলে মাশুল গুণতেই হবে। হলোই সেটাই। মুশফিকুরের ব্য়াটে ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ প্রথম জয় ছিনিয়ে আনল।
ভারতীয় সমর্থক হিসাবে এই হার বেদনাদায়ক। তাও বলতে হবে ক্রিকেটের জয় হবে। ভারত ঘুরে দাঁড়াবে নিশ্চিত। অকুন্ঠ প্রশংসা জানিয়ে বলতেই হবে সাবাশ বাংলাদেশ।
শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়ের নিয়মিত কলাম পড়ুন এখানে