Sarfaraz Khan debut for Team India : এ যেন এক মরণপণ লড়াইয়ের প্রতিজ্ঞা। এই প্রতিজ্ঞা ভারতীয় দলের উদীয়মান তারকা সরফরাজ খানের। যিনি একটা সময় তাঁর বাবা নওশাদকে খানকে কথা দিয়েছিলেন, হয় জাতীয় দলের হয়ে খেলবেন। নয়তো, লোকাল ট্রেনে চেপে প্যান্ট বিক্রির রাস্তা বেছে নেবেন।
এভাবেই জেদকে সঙ্গী করে উঠে আসা সরফরাজ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন রাজকোট টেস্ট শুরুর ঠিক আগে। রাজকোটে ভারত-ইংল্যান্ডের মধ্যে তৃতীয় টেস্ট ম্যাচ হয়েছে। তার ঠিক আগেই সরফরাজকে নিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচের টুপি উপহার দিয়েছিলেন কিংবদন্তি ক্রিকেটার অনিল কুম্বলে। যা ছিল, সরফরাজের জীবনে এক বিরাট পাওয়া। সেই টুপি পেয়ে সরফরাজ চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। সেই সময় তাঁর পাশে ছিলেন স্ত্রী। স্বামীকে সামলাবেন কী, তিনিও তখন সরফরাজের মতই আবেগপ্রবণ। এরপরই দেখা যায়, সরফরাজ ছুটে যান তাঁর বাবা নওশাদের কাছে। তাঁকে জড়িয়ে ধরেন। সরফরাজ তাঁর কথা রেখেছেন। কারণ, একটা সময় তিনি দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছিলেন, 'আমি যখন আমার দেশের হয়ে খেলব, তখন সারাদিন কাঁদব।' রাজকোটের কান্নায় যেন সেই প্রতিজ্ঞাই পালন করলেন সরফরাজ।
দেশের হয়ে তিনি শেষ পর্যন্ত খেলেছেন। আর ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজের তৃতীয় তথা সরফরাজের অভিষেক টেস্ট ম্যাচে দিন যত গড়িয়েছে, সরফরাজের কান্নার ছোঁয়া যেন লেগে গিয়েছিল ইংল্যান্ডের বোলারদের চোখে। প্রথম ইনিংসে তাঁর ৬২ বলে ৬৬ রান ভারতকে ৫ উইকেটে ৩২৬ রানে পৌঁছে দেয়। তাঁর সাহস, সংযম, ইচ্ছাশক্তি বুঝিয়ে দিয়েছে, সরফরাজ টেস্ট ক্রিকেটে অনবদ্য। ইংল্যান্ডের বোলাররা তাঁদের যাবতীয় অস্ত্র প্রয়োগ করেছিলেন। পেস, সিম করানো, বিভিন্ন ধরনের স্পিন, ফিল্ড প্লেসিং। কিন্তু, কোনও লাভ হয়নি।
আরও পড়ুন- ১৯ বছরের মেয়েকে টেনে ‘অপদস্থ’ ইংরেজ তারকাকে! বড় নিশানায় শাস্ত্রী-কার্তিক
ইংল্যান্ডের বোলারদের অস্ত্র কাজ করেনি, কারণ ঘরোয়া ক্রিকেটের রান মেশিন সরফরাজ, আবেগ আর অধ্যবসায়ের এক আকর্ষণীয় গল্প। প্রায় ১৫ বছর ধরে, তিনি প্রতিদিন পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠতেন, যাতে সকাল ৬টা ৩০-এ অনুশীলনের জন্য ক্রস ময়দানে পৌঁছতে পারেন। ধুলোময় পিচে তাঁর ব্যাটিং অনুশীলন চালিয়ে যেতেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সেই দিনগুলি তিনি আজও ভুলতে পারেননি। তাঁর ভাই মুশির অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী। নওশাদ তাঁর বাড়ির ঠিক বাইরে তৈরি করে দিয়েছিলেন একটি বিশেষ ক্রিকেটিং পিচ। যেখানে মুশির আর সরফরাজ ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনুশীলন করেছেন। নওশাদ ঘণ্টার পর ঘণ্টা বল করতেন। বিভিন্ন স্থানীয় দলকে টাকা দিয়ে ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলাতে নিয়ে আসতেন। শর্ত ছিল একটাই, সরফরাজের দল হারুক বা না-ই হারুক, পুরো ইনিংসে সরফরাজ ব্যাট করবেন। আর, তেমনটাই হত।