জাতীয় কুস্তি ফেডারেশনের (ডব্লিউএফআই) সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিং-এর বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হয়রানির প্রতিবাদে দিল্লির রাজপথে নেমে প্রতিবাদে সামিল দেশের তাবড় কুস্তিগীররা। একাধিক রাজনৈতিক দল ক্রিড়াবিদদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। ভারতের রেসলিং ফেডারেশনের প্রধান বিজেপি সাংসদ ব্রিজ ভূষণ শরণ সিং-এর বিরুদ্ধে দেশের শীর্ষস্থানীয় কুস্তিগীরদের তোলা যৌন হয়রানির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গঠন করা হয়েছে বিশেষ পরিদর্শক কমিটি যাঁর মাথায় কিংবদন্তি মহিলা বক্সার মেরি কম।
জানা গিয়েছে ২০১৩ সালের প্রিভেনশন অফ সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট (PoSH) আইন অনুসারে সেখানে নেই কোন অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি (Internal Complaints Committee (ICC)। জাতীয় কুস্তি ফেডারেশনই শুধু নয়, (ডব্লিউএফআই) ৩০টি জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশনের মধ্যে ১৬টিতেই নেই কোন অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তদন্তে উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। এবার এই নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে NHRC।
ক্রিড়া সংস্থায় যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইন নিয়ে অবহেলার বিষয়ে কঠোর NHRC। ক্রিড়া মন্ত্রক, ফেডারেশন সহ SAI, BCCI-কে ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে একটি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শুধু কুস্তি ফেডারেশনই নয়, ভারতে অনেক ক্রীড়া সংস্থাই যৌন হয়রানি প্রতিরোধ সংক্রান্ত অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি (আইসিসি) গঠন করেনি। কেন আইসিসি কমিটি গঠন করা হয়নি, সে বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট জানতে চেয়েছে NHRC
২০১৩ সালের যৌন হয়রানি প্রতিরোধবিষয়ক আইনে বলা হয়েছে, সব সরকারি–বেসরকারি সংস্থাকে আইসিসি গঠন করতে হবে। অন্তত ৩০টি জাতীয় ক্রিড়া সংস্থার মধ্যে মধ্যে ১৫টির বেশিতে সেই আইন মেনে আইসিসি গঠন করা হয়নি। এই নিয়ে এবার গর্জে উঠলো NHRC এর মধ্যে বিসিসিআই-ও রয়েছে। বিষয়টিকে আইনের অবমাননা বলে চিহ্নিত করে কমিশন বলেছে, এটি উদ্বেগের বিষয়। কারণ, এর ফলে খেলোয়াড়দের আইনি অধিকার ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
আইন লঙ্ঘনের কারণে কমিশন নোটিশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রক, স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়া, বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া এবং আলাদাভাবে কুস্তি, হ্যান্ডবল, ভলিবল, বাস্কেটবল, ভারোত্তোলন, ইয়টিং, জিমন্যাস্টিকস, টেবিল টেনিস, বিলিয়ার্ডস, স্নুকার, কায়াকিং, ক্যানোয়িং, জুডো, স্কোয়াশ, ট্রায়াথলন, কাবাডি, ব্যাডমিন্টন, তিরন্দাজি সহ ১৫টি জাতীয় ক্রীড়া সংস্থাকে। বিবৃতিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বলেছে, প্রতিষ্ঠানগুলির কাছে আইসিসির বর্তমান অবস্থার পাশাপাশি সমস্যা সমাধানের জন্য নেওয়া বা প্রস্তাব করা পদক্ষেপসহ বিস্তারিত রিপোর্ট চার সপ্তাহের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (NHRC) দেশের অনেক ক্রীড়া সংস্থায় যৌন হয়রানি প্রতিরোধ (PoSH) আইনের লঙ্ঘনের বিষয়ে এবার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এনএইচআরসি ক্রিড়া মন্ত্রকের পাশাপাশি ক্রীড়া সংস্থাগুলিকেও নোটিশ পাঠিয়েছে। ভারতের স্পোর্টস অথরিটি এবং বোর্ড অফ কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়াকেও নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
'ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস'-জেনেছে NHRC, আইন লঙ্ঘনের বিষয়ে স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (SAI) এবং বোর্ড অফ কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়াকে (BCCI) ইতিমধ্যেই নোটিশ পাঠিয়েছে। একই সঙ্গে ক্রীড়া সংস্থাগুলিকে একটি বিশদ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য চার সপ্তাহ সময় দিয়ে, এনএইচআরসি বলেছে যে POSH আইন বাস্তবায়িত না হওয়া একটি "উদ্বেগের বিষয়"। যা 'খেলোয়াড়দের আইনি অধিকার ও সম্মানকে প্রভাবিত করতে পারে'
গত মাসে, মেরি কমের নেতৃত্বে একটি সরকার-নিযুক্ত কমিটি রেসলিং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (ডব্লিউএফআই) প্রধান এবং বিজেপি সাংসদ ব্রিজ ভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হয়রানির অভিযোগের তদন্ত করেছে। ঠিক তখনই সামনে আসে রেসলিং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়াতে নেই কোন আইসিসি। ২০১৩ সালের POSH আইন অনুযায়ী, আইসিসি থাকা বাধ্যতামূলক।
রেসলিং ফেডারেশনই নয় এর পাশাপাশি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস তদন্তে জানতে পারে আরও ১৫টি জাতীয় ক্রিড়া সংস্থায় নেই কোন আইসিসি। এনএইচআরসি বলেছে যে যদি মিডিয়া রিপোর্ট সত্য হয়, তবে এটি আইন লঙ্ঘনের বিষয় এবং এটি উদ্বেগের বিষয়। কারণ এটি খেলোয়াড়দের আইনি অধিকার এবং তাদের মর্যাদাকে প্রভাবিত করতে পারে। ডাব্লুএফআই, এসএআই এবং বিসিসিআই ছাড়াও এনএইচআরসি ক্রীড়া বিভাগের সচিব সহ আরও ১৫ টি ক্রিড়া সংস্থাকে নোটিশ পাঠিয়েছে। সবাইকে আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।