রবিউল ইসলাম বিদ্যুৎ, ঢাকা
বিতর্কে জড়িয়েই সেরাটা বের করে আনেন সাকিব। শুনতে অদ্ভুত লাগতে পারে! নিজেকে নিংড়ে দেয়ার জন্যই বিতর্ক জড়িয়ে পরেন সাকিব আল হাসান! এমনটা আগেও দেখা গিয়েছে। বিতর্কে জড়িয়েছেন, তার প্রভাব মাঠে পরতে দেননি বাংলাদেশের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
এবারও বিপিএল শুরুর আগে যা-তা মন্তব্য করে বিসিবিকে শূলে চড়িয়েছিলেন সাকিব। একটা কোম্পানির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হয়ে একদিনের জন্য সেই কোম্পানির সিইও হয়েছিলেন বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রীড়াবিদ। তখন সাংবাদিকরা সাকিবের কাছে জানতে চান, বিপিএল আয়োজনের দায়িত্ব পেলে কি করবেন? সাকিব রাখঢাক না রেখে জানিয়ে দেন,“ আমাকে যদি সিইওর দায়িত্ব দেওয়া হয়, আমার বেশি দিন লাগবে না। সব ঠিক করতে সর্বোচ্চ এক থেকে দুই মাস লাগবে।”
সাকিব বিপিএল নিয়ে এতটাই বিরক্ত সেটা তার পরের বক্তব্যে আরও স্পষ্ট হয়ে যায়, “একটা যা-তা অবস্থা। এর থেকে আমাদের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ আরও ভালোভাবে হয়। কারণ আগে থেকেই দল গোছাতে পারে। আগে থেকে জানে দলটা কি হচ্ছে তারা সেভাবে দলটা গোছাতে পারে।”
সাকিবের এই মন্তব্যের পর বিসিবি রীতিমতো সংবাদ সম্মেলন করে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে। ওই সংবাদ সম্মেলন থেকে সাকিবকে বিপিএলের সিইও হওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়। সেখানে বিসিবির কর্তাব্যক্তিদের চোখমুখ দেখে বোঝা যাচ্ছিল, তারা কতটা ক্ষুব্ধ সাকিবের ওপর। কিন্তু কিছুই করার নেই! কারণ সাকিব বিশ্বক্রিকেটে এমন জায়গায় নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন স্বয়ং বোর্ড প্রেসিডেন্টকেও সাকিবের বিরুদ্ধে কিছু বলার আগে দু’বার ভাবতে হয়।
ওই মন্তব্যের পর মাঠেও সাকিব বিতর্কে জড়িয়েছেন। আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মনঃপুত না হওয়ায় যেভাবে মেজাজ হারিয়ে আম্পায়ারকে শাসিয়েছেন সেটি ছিল অন্যায়। এখানেই শেষ নয়, রংপুর রাইডার্সের বিরুদ্ধে অনভিপ্রেত ঘটনায় আম্পায়ারের অনুমতি না নিয়েই মাঠে প্রবেশ করেন সাকিব। এত কাণ্ডের পরও সাকিবের বিরুদ্ধে বড় কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। কারণ নাম তার সাকিব আল হাসান। এজন্যই বোধহয় সাকিবের মাঠের পারফরম্যান্সে বিতর্ক কোন প্রভাবই ফেলতে পারে না। যার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছেন বিপিএলের প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই।
বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) চট্টগ্রামে রংপুর রাইডার্সের বিরুদ্ধে মাত্র ৪৩ বলে খেলেন ৮৯ রানের ইনিংস। ৯ বাউন্ডারির সঙ্গে ছক্কাই মেরেছেন ছয়টি। ৪৬ রানে ৪ উইকেট হারানো বরিশালকে টেনে তোলে সাকিব ও ইফতিকার। পঞ্চম উইকেটে দুজনে যোগ করেন ১৯২ রান। টি-টোয়েন্টিতে সাকিব-ইফতিকারের পঞ্চম উইকেটে ১৯২ রানই এখন সর্বোচ্চ। সেঞ্চুরি না পেলেও টি-টোয়েন্টিতে অপরাজিত এই ৮৯ রানই সাকিবের সর্বোচ্চ।
শুধু এই ইনিংসই নয়, এবারের বিপিএলে সাকিব শুরু থেকে মারকাটারি ব্যাটিং করছেন। নিজেদের প্রথম ম্যাচে সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিরুদ্ধে মাত্র ৩২ বলে খেলেন ৬৭ রানের বিষ্ফোরক ইনিংস। যদিও ম্যাচটি বরিশালকে হারতে হয়েছিল ৬ উইকেটে। নিজের চতুর্থ ম্যাচে আবার ব্যাট হাতে তেড়েফুঁড়ে রান করেন সাকিব। এবার ৪৫ বলে অপরাজিত থেকে করলেন ৮১ রান
বরিশালও পেয়ে যায় ১২ রানের জয়। নিজের সেরাটা বের করার জন্য যদি কোনো বিতর্ক ছড়াতে হয় সেটা তো সাকিবের জন্য ভালোই। বিতর্ক যে তার জন্য পয়মন্ত। মাঠে একের পর এক বিষ্ফোরক ইনিংস খেলে অতীতের মতো এই বিপিএলেও তার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছেন সাকিব। এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ২২৮ রান এসেছে তার ব্যাট থেকেই। যে ফর্মে আছেন সাকিব সেটি আইপিএলে টেনে নিতে পারলে দারুণ কিছু করতে পারবেন কেকেআরের হয়ে। কেকেআরের হয়ে বিপিএলের এই ফর্ম তারকা দেখাতে পারবেন কিনা, সেটা সময়ই বলবে।