শাকিব ভুল করে ফেলেছে। তবে 'সরল' মনে। বলে দিচ্ছেন মুস্তাফা কামাল। বিসিবি, তারপর আইসিসি। এবং এখন বাংলাদেশের আওয়ামি লিগ সরকারের মন্ত্রী। মুস্তাফা কামালের পরিচয়ের সংক্ষিপ্ত নির্যাস এটাই। আধুনিক বাংলাদেশ ক্রিকেটের পুরোধা ধরা হয় আ হ ম মুস্তাফা কামালকে। মুশফিকুর রহিম, শাকিব আল হাসান, মাহমুদ্দুল্লাদের কেরিয়ার তুঙ্গে থাকার সময়েই বিসিবির শীর্ষ কর্তা ছিলেন তিনি। তারপরে আইসিসি সভাপতি।
আইসিসি মেয়াদ পর্বেই মুস্তাফা কামালের সঙ্গে ঠাণ্ডা যুদ্ধ শুরু হয়েছিল তৎকালীন চেয়ারম্যান এন শ্রীনিবাসনের সঙ্গে। ২০১৫ বিশ্বকাপে বিজয়ী দলকে ট্রফি তুলে দিয়েছিলেন চেয়ারম্যান শ্রীনি। সাধারণত, আইসিসি-র সভাপতি বিশ্বকাপের বিজয়ী দলকে ট্রফি দিয়ে থাকেন। সেই ঐতিহ্যে বদল ঘটেছিল শ্রীনি-মুস্তাফা কামালের দ্বৈরথে।
তারপরেই আইসিসির সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়িয়ে শ্রীনিকে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশ ক্রিকেটের এমন বর্ণময় প্রশাসকই এবার শাকিবের দোষ স্বীকার করে নিচ্ছেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র প্রতিনিধিকে তিনি জানিয়ে দেন, "সরল ভেবে শাকিব এমন করে ফেলেছে। এক বছর শাকিবের সার্ভিস বাংলাদেশ ক্রিকেট পাবে না, এটা বড় ক্ষতি।" বর্তমানে বাংলাদেশের মন্ত্রিত্ব সামলাচ্ছেন মুস্তাফা কামাল। নির্বাচিত হয়েছেন কুমিল্লা জেলা থেকে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) তাঁর দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের দেখভাল করেন মেয়ে নাফিসা কামাল।
আরও পড়ুন ভারত সফরে হয়তো নেই শাকিব
তিনি অবশ্য বাংলাদেশ ক্রিকেটের এমন টালমাটাল মুহূর্তে শাকিবের পাশেই দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শাকিব বিশ্বজোড়া নাম। তিনি পরিণত। তিনি বিষয়টি আগে জানালেন না কেন, সেই প্রশ্নে প্রাক্তন ক্রিকেট প্রশাসক জানাচ্ছেন, "শাকিব তাঁর সততার পরিচয় দিয়েছে। সে সত্যি স্বীকার করে নিয়েছে। তবে শাকিবের উচিত ছিল বোর্ড অথবা প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জানানো। যদিও আইসিসিকে এ বিষয়ে অনুরোধ করলে কতটা লাভ হত, তা জানি না।"
একের পর এক ঝড়ে টালমাটাল বাংলাদেশের ক্রিকেট। শুরুটা হয়েছিল ক্রিকেটারদের ধর্মঘট দিয়ে। সেখানে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে ক্রিকেটাররা ১৩ দফা দাবি জানিয়েছিল বিসিবির কাছে। এর অধিকাংশই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) মেনে নেওয়ায় ধর্মঘট তুলে নিয়েছিল ক্রিকেটাররা। ধর্মঘটের মাঝেই একটি টেলিকম কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে বোর্ডের চক্ষুশূল হন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
আরও পড়ুন দু’বছরের জন্য শাকিব আল হাসানকে নির্বাসিত করল আইসিসি
তারপরেই ঝটকা! বিসিবি বনাম শাকিব আল হাসানের স্নায়ুযুদ্ধ যখন চূড়ান্ত, সেই সময়েই অপ্রত্যাশিত ধাক্কা। বাংলাদেশের শীর্ষ দৈনিক ‘সমকাল’ বোমাটা ফাটিয়ে দিয়েছিল মাঝরাতে। মঙ্গলবারের ভোরটা শুরু হলো ওই আঁতকে ওঠা শিরোনাম দেখে, "১৮ মাস নিষিদ্ধ হচ্ছেন সাকিব"। রাত গড়াতেই বিসিবির দপ্তরে পৌঁছে গেল আইসিসির মেইল। তারপরেই দুই বছরের নির্বাসনে সাকিব। ঠিক ভারত সফরের আগেই।
দু-বছর নির্বাসন থাকলেও, শাস্তি কমতেই পারে। আইসিসির দেওয়া শর্ত ঠিকঠাক পালন করলে আগামী বছরের ২৯ অক্টোবর থেকে মাঠে নামতে পারবেন শাকিব। আইসিসির প্রাক্তন শীর্ষ কর্তা অবশ্য শাকিবের শাস্তি কমার কোনও লক্ষণ দেখছেন না। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানাচ্ছেন, "আইসিসি কোনও দিন শাস্তি কমায়নি এই বিষয়ে। তাই এখানেও সুযোগ নেই। তবে সাকিব যদি ভালোভাবে আইসিসিকে সহযোগিতা করে তাহলে দ্বিতীয় বছর থেকে খেলতেই পারে। সেই সম্ভবনা খোলা রয়েছে।"
শাকিব-বিরহে আপাতত কাতর গোটা বাংলাদেশ। মানববন্ধন থেকে মিছিল করেছেন শাকিব ভক্তরা। শোকে মূহ্যমান গোটা দেশ। এমন আবহেই জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা থেকে শুরু করে মুশফিকুর রহিম-মাহমুদউল্লাহ-মোস্তাফিজুররা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আবেগঘন পোস্ট দিয়ে সাকিবের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন।
শাকিবের দুর্দিন কবে মেটে সেদিকেই আপাতত তাকিয়ে পদ্মাপাড়ের ক্রিকেট মহল।