সালটা ১৯৯৩। অ্যাসেজে সেবারেই ইতিহাস লিখে ফেললেন শ্যেন কিথ ওয়ার্ন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নবাগত স্পিনার ম্যাঞ্চেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে মাইক গ্যাটিংয়ে যে ঘূর্ণিতে আউট করলেন, তা ক্রিকেট বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছিল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ঠিক এক বছর আগেই অভিষেক ঘটেছিল ওয়ার্নের। ব্লন্ড চুল, কানে দুল নিয়ে আনকোরা ছোকরা যে আবির্ভাবের অ্যাসেজেই ক্রিকেট বিশ্বে শোরগোল ফেলে দেবেন, কেই বা ভাবতে পেরেছিল!
অ্যালান বর্ডারের নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলীয় দল ১৯৯২/৯৩'এ ইংল্যান্ডে অ্যাসেজে খেলতে গিয়েছিল। মাত্র ১১ টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে ইংল্যান্ডে খেলতে এসেছিলেন সদ্য কুড়ি পেরোনো সেই তরুণ। আর অ্যাসেজের প্ৰথম বলেই ম্যাজিক। শুধু মাইক গ্যাটিং-ই নন, গোটা ক্রিকেট জগৎ মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল অবিশ্বাস্য সেই ডেলিভারিতে।
আরও পড়ুন: স্তম্ভিত, হতবাক, দুঃখজনক! বন্ধু ওয়ার্নের মৃত্যুতে ভেঙে পড়লেন শচীন
একদম লেগস্ট্যাম্প ঘেঁষে বল পিচ করেছিলেন। অবিশ্বাস্য টার্ন নিয়ে সেই বল-ই গ্যাটিংয়ের অফস্ট্যাম্পে মৃত্যু চুম্বন দিয়ে যায়। এমনটাও যে হতে পারে, তা কার্যত বিশ্বাসই হচ্ছিল না ইংল্যান্ডের তারকা ব্যাটসম্যানের।
কেউই বুঝতে পারেনি, সেই বল মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে এভাবে হাজির হবে। ধারাভাষ্যকাররা তো বাকরুদ্ধ হয়ে যান গোটা ঘটনা প্রত্যক্ষ করে। আর সেই বল-ই রাতারাতি ওয়ার্নকে খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছে দেয়। শতকের সেরা বল-ও বিবেচিত হয় সেই ডেলিভারি। সেই সিরিজে ইংল্যান্ডকে নাকানিচোবানি খাইয়ে যান ওয়ার্ন। অস্ট্রেলিয়া চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে সেই অ্যাসেজের দখল নিয়েছিল।
আরও পড়ুন: নিয়ম ভেঙে বারবার নির্বাচক কমিটির বৈঠকে সৌরভ! বিষ্ফোরক অভিযোগে তোলপাড় ভারতীয় ক্রিকেট
পরে আইসিসির কাছে শতকসেরা বলের বিষয়ে ওয়ার্ন বলে দেন, "সেঞ্চুরির সেরা বল পুরোটাই ফ্লুক ছিল। সত্যি এরকমটা আর কখনও করতে পারিনি। ওই বলটা জাস্ট হয়ে গিয়েছিল। লেগস্পিনার হিসাবে আমাদের লক্ষ্যই থাকে নিখুঁত লেগস্পিন করানোর। আর এই বলটা মাঠ, মাঠের বাইরে আমার জীবন পুরো বদলে দিয়েছিল। ইংল্যান্ড দলে মাইক গ্যাটিং স্পিন বল খেলায় সবথেকে দক্ষ ছিলেন। তাই সেই মুহূর্তটা বরাবরের মত স্প্যেশ্যাল হয়ে থাকবে।"
ম্যাঞ্চেস্টারের প্ৰথম ইনিংসে ওয়ার্ন ৫৫ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসেও ৪ উইকেট নেন ৮৬ রান খরচ করে। দুই ই ইনিংস মিলিয়ে ওয়ার্নের ৮ উইকেট অস্ট্রেলিয়াকে ১৭৯ রানের বিশাল ব্যবধানে জয় এনে দেয়। ১৯৯৩-এর অ্যাসেজে অস্ট্রেলিয়া ৪-১ ব্যবধানে দুরমুশ করে ইংল্যান্ডকে। সিরিজের সেরা হন ওয়ার্ন। ব্যাগি গ্রিনের হয়ে ১৪৫ টেস্টে ৭০৮ উইকেট নিয়েছেন।
তবে তাঁর জীবনের স্পিন যে মাত্র ৫২-এ থামবে, তিনি নিজেই কি ভাবতে পেরেছিলেন!