আসন্ন মরশুমের দলগঠন তীব্র গতিতে এগিয়ে চলেছে। স্কোয়াডে বাকি রয়েছে স্রেফ বিদেশি স্ট্রাইকার। মোহনবাগান দিবসও এর মাত্র কয়েকদিন। টানা দু-বছর বিশেষ দিনে সেলিব্রেশন বন্ধ থেকেছিল। এবার আবার ক্লাব তাঁবুতে রং-মিলান্তি অনুষ্ঠান। এখন থেকেই কাউন্ট-ডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে সমর্থকদের মধ্যে।
এর মধ্যেই বিতর্কের কালো পোচ লেগে গেল আসন্ন মোহনবাগান দিবসের অনুষ্ঠানের গায়ে। কয়েকদিন আগেই ক্লাব তাঁবুতে কর্মকর্তারা মহাসমারোহে ঘোষণা করে দিয়েছেন বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের খুঁটিনাটি। বর্ষসেরা ফুটবলার হিসাবে লিস্টন কোলাসোর হাতে তুলে দেওয়া হবে শিবদাস ভাদুড়ির নামাঙ্কিত পুরস্কার। তবে ঘটনা হল মূল অনুষ্ঠানে এখনও পর্যন্ত আমন্ত্রিতই নন ১৯১১-র শিল্ডজয়ী দলের ক্যাপ্টেনের পরিবার। কিংবদন্তির নামের পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে তাঁর পরিবারের উপস্থিতি ছাড়াই।
আরও পড়ুন: ATKMB তারকা হ্যামিলের পুরোনো প্রতিপক্ষ এবার ISL-এ! এ লিগের দুর্ধর্ষ দ্বৈরথ এবার ভারতেও
অভিমানাহত গলায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে শিবদাস ভাদুড়ির প্রপৌত্রী দেবিকা ভাদুড়ি রায় জানালেন, "২০১০ সালে শেষবার শিল্ডজয়ী দলের পরিবারকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। সেটাই শেষ। তারপর থেকেই ক্লাবের তরফে আমাদের আর আমন্ত্রণ জানানো হয় না। এবারেও শুনলাম শিবদাস ভাদুড়ির নামাঙ্কিত পুরস্কার দেওয়া হবে। তবে ক্লাবের তরফে এখনও আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়নি।"
ক্লাবের দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কোনও স্বীকৃতিই জোটেনি। ভারতে যুব বিশ্বকাপের আগে শিবদাস ভাদুড়ির পরিবারকে বেনজির স্বীকৃতি দিয়েছিল স্বয়ং ফিফা। টুর্নামেন্টের প্ৰথম টিকিট তুলে দেওয়া হয়েছিল দেবিকা ভাদুড়ির হাতে। তুলে দিয়েছিলেন স্পেনের জাতীয় দলের একসময়ের মহাতারকা কার্লোস পুওল। ফিফা সম্মান প্রদর্শনে কার্পণ্য না করলেও মোহনবাগানের তরফে এই 'অসৌজন্য' বেশ দৃষ্টিকটু মনে করছে কিংবদন্তির পরিবার।
দেবিকা ভাদুড়ি বলছিলেন, "ফিফা আমাদের দারুণভাবে সম্মান জানিয়েছিল। এতটাও প্রত্যাশা ছিল না আমাদের। তবে ক্লাব অন্তত প্রত্যেক বছর মোহনবাগান দিবসের দিনে একবার আমন্ত্রণ জানাতেই পারে। পাড়া-প্রতিবেশী হোক বা অফিস- সর্বত্রই মোহনবাগান দিবসের দিনে শুনতে হয়, আমরা কেন ক্লাবে যাই না!"
আরও পড়ুন: কলকাতায় এবার মেসির দেশের ফুটবলার! ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে গোল করা তারকাই খেলবেন CFL-এ
ক্লাবের লাইফ মেম্বার নন শিল্ডজয়ী দলের ফুটবলারদের কোনও পরিবারের সদস্য। আশা ছিল ক্লাবের তরফে লাইম মেম্বার দেওয়া হবে। সেই প্রত্যাশাও পূরণ হয়নি। "ক্লাব কর্পোরেট ধাঁচে চলছে। অনেক আধুনিকীকরণ ঘটেছে। তবে আমরা বিস্মৃত হয়ে যাচ্ছি ক্রমশ। শিবদাস ভাদুড়ির অবদান ক্লাব তো বটেই দেশের ফুটবল ইতিহাসেও জ্বলজ্বল করছে। শিল্ডজয়ী দলের পরিবারের সদস্যদের লাইফ মেম্বার করা উচিত ছিল। সেটাও তো হয়নি। এটুকু স্বীকৃতি তো ক্লাবের ইতিহাস গৌরবান্বিত করা ফুটবলারদের প্রাপ্য।" গলায় বাষ্প রেখে বলে চলেছিলেন বিখ্যাত ভাদুড়ি পরিবারের সদস্য।
শিল্ড জয়ী দলের পরিবারের ক্ষোভের মুখে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে মোহনবাগানের নতুন সচিব দেবাশিস দত্ত অবশ্য বলছেন, "ক্লাবের অনুষ্ঠান এখনও বেশ কিছুদিন বাকি। কয়েকদিনের মধ্যেই সকলের কাছে আমন্ত্রণ চলে যাবে। মুখ্যমন্ত্রী সহ কাউকেই এখনও আমন্ত্রণ জানিয়ে ওঠা হয়নি। তাছাড়া প্রত্যেক তারকার স্বপ্ন থাকে বিখ্যাত ফুটবলারদের হাত থেকে পুরস্কার নেওয়ার। সুব্রত ভট্টাচার্যের মত কিংবদন্তিদের হাত থেকে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে ফুটবলারদের হাতে। মোহনবাগান একটি সাধারণ ক্লাব নয়, একটা প্ৰতিষ্ঠান। এটা সকলকে বুঝতে হবে।"
সবমিলিয়ে মোহনবাগান দিবসের আগেই বিতর্কের হে চড়া আবহ তৈরি হয়ে গেল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।