Bangladesh’s Fastest Woman Shirin Akhter: বাংলাদেশে ৪৮তম জাতীয় অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে ফের দ্রুততম নারীর খেতাব জিতলেন শিরিন আখতার। এই নিয়ে ১৬ বার তিনি এই খেতাব জিতলেন। সাফল্যটা বিরাট হলেও, তাঁর এই পথচলা মোটেই সহজ ছিল না। অসংখ্য প্রতিকূলতা পেরিয়ে আজকের সাফল্যে পৌঁছেছেন তিনি।
শুরুর গল্প: এক ফোন কল, সুযোগ
২০০৬ সালের এক বিকেলে, যখন স্কুল বন্ধ ছিল, শিরিন আখতার ফোন করেছিলেন কোচ আকবর আলিকে। স্যার জানিয়েছিলেন, সেদিন অনুশীলন নেই, তবে একটি প্রতিযোগিতা আছে। কোচ ফোনে জানতে চেয়েছিলেন, 'এখনই আসতে পারবে?' শিরিনের উত্তর ছিল, 'পারব!'
বড় বোনের থেকে ১০ টাকা নিয়ে গ্রামের বাজারে গিয়ে ফোন করেছিলেন শিরিন। ফোনের বিল দিয়ে হাতে মাত্র ৩ টাকা থাকায় কিছুটা পথ বাসে যান, বাকি পথ দৌড়ে স্টেডিয়ামে পৌঁছন। সেই দৌড়ের মাঝেই ছিঁড়ে গিয়েছিল তাঁর স্যান্ডেল! তবুও হাল না ছেড়ে তিনি খালি পায়ে ছুটে গিয়েছিলেন।
ছেলেদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা, প্রথমবার সেরা হওয়া
স্টেডিয়ামে পৌঁছে দেখেন, মেয়েদের ট্রায়াল শেষ হয়ে গেছে। কোচ তাঁকে ছেলেদের সঙ্গে দৌড়নোর প্রস্তাব দেন। সাহস করে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন শিরিন। ফলাফল? তিনি সবার সেরা হন! সেখান থেকেই শুরু হয় শিরিনের দৌড়। জানতে পারেন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (BKSP)-এর কথা। সুযোগ পান সেখানে ট্রায়ালের।
গ্রামে চিঠি আসার ইতিহাস, বিকেএসপি (BKSP)-তে ভর্তি হওয়া
বিকেএসপি-তে নির্বাচিত হলে চিঠির মাধ্যমে জানানো হত। একদিন গ্রামে হইচই শুরু হয়। কারণ, 'শিরিনের নামে সরকারি চিঠি এসেছে!' এটি ছিল গ্রামবাসীদের কাছে বিরাট খবর। কিন্তু আনন্দের বদলে শিরিনের মা-বাবার মনে দুশ্চিন্তা ভিড় করেছিল। তাঁরা চাননি মেয়েকে এত দূরে পাঠাতে। তখন আকবর আলি স্যার নিজে গিয়ে তাঁদের বোঝান। অবশেষে ছোট চাচার সঙ্গে শিরিন বিকেএসপি-তে রওনা হন। পথে চাচা বারবার প্রশ্ন করেছিলেন, 'ভর্তি হবি না ফিরে যাবি?' কিন্তু, শিরিন ফেরেননি। তিনি বিকেএসপিতে ভর্তি হয়ে ক্লাস সেভেনে পড়াশোনা শুরু করেন।
প্রথম জাতীয় প্রতিযোগিতা ও জ্ঞান হারানো
ভর্তির কয়েক মাস পর একটি ৪০০ মিটারের দৌড়ে অংশ নিতে বলা হয়েছিল শিরিনকে। তিনি রাজি হন। কিন্তু, ৩০০ মিটার পার করার পরই অজ্ঞান হয়ে গেছিলেন। যখন জ্ঞান ফিরেছিল, চারপাশ থেকে চিৎকার শুনতে পান— 'তুমি প্রথম হয়েছ!' এই জয়ের পর বিকেএসপিতেতে শিরিন পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন।
দেশের দ্রুততম নারী হওয়া এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যোগদান
২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে দ্রুতগামী কিশোরী ও জুনিয়র অ্যাথলিট ছিলেন তিনি। ২০১৪ সালে জাতীয় অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০ মিটার দৌড়ে স্বর্ণপদক জিতে বাংলাদেশের দ্রুততম নারী হন শিরিন। এরপর বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে অ্যাথলিট হিসেবে যোগদানের সুযোগ পান তিনি।
প্রত্যেকবার একই অনুভূতি!
২০১৪ সালে ‘দ্রুততম নারী’ খেতাব পাওয়ার সময় যেমন অনুভূতি হয়েছিল, এবার ১৬তম বার জেতার পরও ঠিক একই অনুভূতি হয়েছে। এমনটাই জানিয়েছেন শিরিন। তিনি বলেছেন, 'আমার পরিবার, বিশেষ করে বাবা-মা এখন গর্বিত। সমাজে তাঁদের সম্মান বেড়েছে। আমার ছোট বোনেরা এখন জেসোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। আমিও রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে স্নাতকোত্তর শেষ করে এখন ক্রীড়া বিজ্ঞানে মাস্টার্স করছি।'
আরও পড়ুন- চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ভারত-নিউজিল্যান্ড হাইভোল্টেজ ম্যাচে বদলে গেল পিচ? কী হাল দুই দলের?
অনুপ্রেরণার গল্প, হাজারো মেয়ের আদর্শ
আজ অনেক মেয়ে তাঁকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়। অনেকেই বলে, 'মেয়ে হলে শিরিনের মতো হও!' সাংবাদিকদের শিরিন বলেছেন, 'এটি আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দেয়, শক্তি জোগায়।' তাঁর এই অদম্য লড়াই এবং দৌড় এখনও চলছে। আর তা চলবে বলে এই অ্যাথলিট জানিয়েছেন।