দাবা, স্নুকার, কবাডির মতো খেলার জন্ম ভারতে হলেও এখন ক্রিকেট-ফুটবল নিয়েই এখানে বেশি মাতামাতি। কিন্তু এরকম অনেক খেলাই আছে যেগুলো দেশের গ্রামীণ এলাকায় যথেষ্ট জনপ্রিয়। সেরকম কয়েকটি অজানা খেলা নিয়েই এই প্রতিবেদন। জালিকাটটু, পচিশি/পাশা, টিপক্য়াট/গিলি-ডান্ডা, কে নাং হুয়ান, কাম্বালা বাফেলো রেসের নামই অনেকের কাছে হয়তো অজানা। কিন্তু আবহমান কাল ধরেই ভারতে এই খেলাগুলি চলে আসছে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক খেলাগুলি কেমন।
জালিকাটটু (সাল্লিকাটটু): দেশের অন্য়তম বিতর্কিত খেলা জালিকাটটু, যা সাল্লিকাটটু নামেও পরিচিত। অনেকে আবার একে এরু থাঝুভুথাল/ মনজু বিরাটটু নামেও চেনেন। তেড়ে আসা একটি ষাঁড়কে নিয়ন্ত্রণে আনাই খেলার নিয়ম। এক বিশেষ প্রজাতির ষাঁড়ই এই খেলার অঙ্গ। পুলিকুলাম বা কঙ্গম ষাঁড়দেরই এই খেলায় ব্য়বহার করা হয়। এক বা একাধিক মানুষ অংশ নেন জালিকাটটুতে। ষাঁড়ের উপর উঠে তার শিং ধরে শান্ত করার প্রচেষ্টা চালান খেলোয়াড়রা। কেউ আবার ষাঁড়ের সিং ধরেও ঝুলে পড়েন। যিনি যত বেশি সময় ধরে শিং ধরে ঝুলে থেকে ষাঁড়কে থামাতে পারবেন, তিনিই এ খেলায় বিজয়ী হবেন। অনেক সময়ে ষাঁড়ের সিংয়ের মাথা থেকে পতাকাও খুলে নিতে হয়। তামিলনাড়ুতে এই খেলার প্রচলন বেশি। পোঙ্গল উদযাপনের সময় মাটটু পোঙ্গল দিনেই এই খেলা হয়। এই খেলাতে প্রাণহানির ও চোট-আঘাতের প্রবল সম্ভাবনা থাকে। পশুর অধিকার নিয়ে যে সংগঠনগুলি কাজ করে তারা শেষ কয়েক বছর ধরে এই খেলা বন্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছে। আদালতের নির্দেশেও বেশ কয়েকবার জালিকাট্টু সাময়িক ভাবে স্থগিত রাখা হয়েছিল। কিন্তু ২০১৭-তে নতুন অর্ডিন্য়ান্স জারি করে ফের খেলা চালানো হয়।
দেশের অন্য়তম বিতর্কিত খেলা জালিকাটটু. সাল্লিকাটটু নামেও পরিচিত.
ষাঁড় দৌড় (কাম্বালা): জালিকাটটুর মতোই অত্য়ন্ত বিতর্কিত এই ষাঁড় দৌড়। ফি বছর কর্ণাটকের সমুদ্র উপকূলবর্তী কাম্বালায় এই ষাঁড় দৌড় হয়। অষ্টম শতকের শুরু থেকেই এই খেলা চলে আসছে বলে মনে করা হয়। দু'জোড়া ষাঁড়ের মধ্য়ে এই দৌড় প্রতিযোগিতা হয়। একজন জকি ষাঁড়গুলিকে দৌড় করান। দৌড় হয় জল-কাদা ভর্তি ট্র্য়াকে। ১২-১৩ সেকেন্ডের মধ্য়ে ১৪০-১৬০ মিটার দৌড় করানো হয় ষাঁড়গুলিকে। যাঁডের মালিক কৃষকরা চেষ্টা করেন যাতে তাঁদের নিজেদের ষাঁড়গুলি স্বর্ণপদক জিতে ফিরতে পারে। সোনার পদক ছাড়াও ঐতিহ্য় মেনে নারকেল দেওয়া হয় বিজয়ী ষাঁড়ের জুটিকে। পশুর অধিকার নিয়ে যে সংগঠনগুলি কাজ করে তারাই এই খেলার বিরোধী। তাদের মতে ষাঁড়ের নাকের সঙ্গে দড়ি বেঁধে এই নৃশংসতা মেনে নেওয়া যায় না। সুপ্রিম কোর্ট অতীতে এই খেলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। কর্ণাটক সরকার পুণ রায় এই খেলা ফেরানোর দাবিতে সোচ্চার হয়েছে। তারা চাইছে জালিকাটটুর মতোই যেন এই খেলা থেকেও নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।
জালিকাটটুর মতোই অত্য়ন্ত বিতর্কিত এই ষাঁড় দৌড়, ফি বছর কর্নাটকের সমুদ্র উপকূলবর্তী কাম্বালায় এই ষাঁড় দৌড় হয়.
গিল্লি-ডান্ডা বা টিপ ক্য়াট: গিলি ডান্ডা বা টিপ ক্য়াট, যাকে অধিকাংশ বাঙালি ডাংগুলি নামে চেনেন, তা শুধু ভারতেই নয়, বাংলাদেশ, নেপাল, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, কম্বোডিয়া, তুরস্ক ও দক্ষিণ আফ্রিকাতেও অত্য়ন্ত জনপ্রিয়। একে ভারতের প্রাচীনতম খেলা বললেও ভুল বলা হবে না। প্রায় ২৫০০ বছর আগে এই খেলার জন্ম বলে জানা যায়। মূলত দুটি লাঠি দিয়ে এই খেলা হয়। একটা ছোট, আরেকটা বড়। বড়টাকে ডান্ডা বা ডাং ও ছোট ডিম্বাকৃতির লাঠিটিকে গিল্লি বা গুলি বলা হয়।
গিলি ডান্ডা, টিপ ক্য়াট বা ডাংগুলি শুধু ভারতেই নয়, বাংলাদেশ, নেপাল, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, কম্বোডিয়া, তুরস্ক ও দক্ষিণ আফ্রিকাতেও অত্য়ন্ত জনপ্রিয়
পাচিশি বা পাশা: পাচিশি খেলাই পাশা নামে পরিচিত। মধ্য়যুগীয় ভারতে এই বোর্ড গেম চালু হয়েছিল। ভারতের জাতীয় খেলা হিসেবেই বর্ণিত হয়েছিল এক সময়। ছটি বা সাতটি কড়ি সাজিয়ে সমান্তরাল বোর্ডে খেলা হয়। উপরে উঠে যাওয়া কড়ির সংখ্যা স্থানান্তরের স্থানগুলির সংখ্যা নির্দেশ করে। খেলাটির নাম হিন্দি শব্দ পচিশ থেকে এসেছে। এ খেলা টোয়েন্টি ফাইভ নামেও পরিচিত।এই খেলারই আরেকটি সংস্করণ চৌপার। বিদেশে পারচেসি, সরি ও লুডো নামেও এ খেলা ধীরেধীরে প্রচলিত হয়েছে। স্পেন, মরক্কো ও কলম্বিয়াতেও এ খেলার কদর রয়েছে।
পাচিশি খেলাই পাশা নামে পরিচিত। মধ্য়যুগীয় ভারতে এই বোর্ড গেম চালু হয়েছিল.
কে নাং হাউন: ভারতে একটি অত্য়ন্ত জনপ্রিয় খেলা কে নাং হাউন। মূলত আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জের আদিবাসীদের অত্য়ন্ত পছন্দের খেলা এটি। দুটি শূকরের লড়াইভিত্তিক এ খেলা বিভিন্ন উৎসবেও দেখা যায়। একটি বাঁশের খাঁচার মধ্য়ে বুনো শূকরকে আটকে রেখে, তার একটি পা নাইলনের লম্বা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। এরপর কুঠার দিয়ে খাঁচাটি ভেঙে শূকরটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। শূকরটি তখন সামনে যাকে দেখে তার উপরেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। দু থেকে তিন জন দড়ি দিয়ে শূকরটিকে নিয়ন্ত্রণ করেন, এছাড়াও দুজন পুরুষ শূকরগুলির সঙ্গে লড়াই করেন। শূকরের কান টেনে তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। যিনি এ কাজে সমর্থ হন, তাঁকে সেরা যোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সূর্যোদয়ের ঠিক পরেই এ খেলা শুরু করার নিয়ম রয়েছে।