Sourav Ganguly: সম্প্রতি ২০২৫ মহিলা ক্রিকেট বিশ্বকাপ (Indian women cricket world cup) জয় করেছে টিম ইন্ডিয়া (Indian Women Cricket Team)। ৫২ বছর পর অবশেষে ঘটেছে শাপমোচন। ফাইনাল ম্য়াচে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল দক্ষিণ আফ্রিকার (IND W vs SA W) বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিল। গ্রুপ পর্বে যে প্রোটিয়া ব্রিগেডের কাছে তারা হেরে গিয়েছিল, প্রতিশোধের ফাইনালে তাদেরই ৫২ রানে দুরমুশ করে খেতাব জয় করেছে। এই সাফল্যের পর ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর অফিশিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলে শুভেচ্ছা জানান। আর এই একটা শুভেচ্ছাকে কেন্দ্র করেই আপাতত তোলপাড় বঙ্গ ক্রিকেট মহল। ১২ বছর আগে সৌরভের একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করেছে।
কোন প্রসঙ্গে কথাটি বলেছিলেন সৌরভ?
১২ বছর আগে এবিপি আনন্দ-র একটি আলোচনা সভায় এসেছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। মুম্বইয়ের মেরিন ড্রাইভে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। তখন সবেমাত্র আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন শচীন তেন্ডুলকর (Sachin Tendulkar)। এই পরিস্থিতিতে শচীন পুত্র অর্জুনের উপরই যে যাবতীয় প্রচারের আলো ছিল, তা বলাই বাহুল্য। সঙ্গে ছিল ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকদের প্রত্যাশার একরাশ বোঝা। তো, এই অনুষ্ঠানে টিম ইন্ডিয়ায় স্টার কিডদের উপর সমর্থকদের প্রত্যাশা এবং অযাচিত চাপ নিয়ে কথা হচ্ছিল। কথায় কথায় ওঠে অর্জুন তেন্ডুলকরের প্রসঙ্গ। ভারতীয় 'ক্রিকেট ঈশ্বর' শচীন তেন্ডুলকরের ছেলে তিনি। বাবার সাফল্যের প্রত্যাশা যে ছেলের উপরেও থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। ১২ বছর আগের কথা না হয় বাদই দেওয়া গেল, ভারতীয় ক্রিকেটে আজ পর্যন্ত অর্জুন পায়ের নীচে ভিত শক্ত করতে পারেননি। যাইহোক, সেদিনের ওই অনুষ্ঠানে ঠিক মন্তব্য করেছিলেন সৌরভ? ওই মন্তব্যের আগে এবং পরেই বা প্রেক্ষাপট কী ছিল? আসুন, সেই ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করে নেওয়া যাক।
দিনটা ছিল ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর। শচীন তেন্ডুলকরের অবসর নিয়ে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানের নাম ছিল 'মাস্টার ম্য়াজিক'। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পাশাপাশি ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন -- শান্তনু মৈত্র, শান, অভিজিৎ ভট্টাচার্য, আশীষ বিদ্যার্থীর মতো কৃতী ব্যক্তিত্বরা। ওই অনুষ্ঠানেই শচীন তেন্ডুলকরের পুত্র অর্জুনের উপর চাপ নিয়ে প্রশ্নটা উঠেছিল। সেইসময় সৌরভকে সানার প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। সানা (Sana Ganguly) যদি ক্রিকেটার হতে চায়, তাহলে কি মেনে নেবেন সৌরভ? জবাবে সেদিন সৌরভ ঠিক কী বলেছিলেন, আসুন সেই ব্যাপারেই বিস্তারিত আলোচনা করে নেওয়া যাক। জেনে নিন, একেবারে আসল ঘটনাটি।
Deepti Sharma Sucess Story: 'মেয়ে হয়ে ক্রিকেট খেলো না...', সহজ ছিল না রাস্তা, কাঁদিয়ে দেবে এই তারকা ক্রিকেটারের সাফল্যের গল্প
সেদিন ওই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সৌরভের কাছে প্রশ্ন করেছিলেন, 'গত রবিবার অর্জুন তেন্ডুলকর ১ রানে আউট হয়েছে। সেটা নিয়েও এখানকার সমস্ত কাগজে খবর হয়েছে। কতটা চাপ থাকে এই স্টার কিডদের উপরে? সানা যদি কোনওদিন বলে যে ও ক্রিকেট খেলতে চায়, তাহলে তোমার প্রতিক্রিয়া কী হবে?'
'মেয়েদের ক্রিকেট খেলার কোনও দরকার নেই'
স্টার কিডদের উপর ওই চাপ প্রসঙ্গেই সৌরভ হাসতে হাসতে বলেছিলেন, 'আমি তাকে আগে বারণ করব। কারণ, মেয়েদের ক্রিকেট খেলার কোনও দরকার নেই।' সঙ্গে সৌরভ আরও যোগ করেন, এই চাপটা কিছুদিন অবশ্য়ই থাকবে। এটাই ভবিতব্য। আমি আগে শচীন তেন্ডুলকরের একটা লেখা পড়েছিলাম। শচীন নিজেও বেশ কয়েকবার বলেছে যে অর্জুনকে ওর মতো একা ছেড়ে দাও। আর কয়েকদিনের মধ্যে সেটা হয়েও যাবে। এখন অর্জুনের উপর শচীন তেন্ডুলকরের ছায়া রয়েছে। সেকারণে ওকে অনেক অসুবিধার মুখেও পড়তে হয়। কয়েকদিন আগে অর্জুনকে বোম্বে (অধুনা মুম্বই) অনূর্ধ্ব-১৪ দলে অর্জুনকে সিলেক্ট করা হয়েছিল। তখন অন্য একজন ক্রিকেটারের মা এসে অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর ছেলেকে নেওয়া হয়নি। শচীন তেন্ডুলকরের ছেলে বলেই অর্জুনকে দলে নেওয়া হয়েছে। ফলে এই স্টার কিড হওয়ার যেমন একটা ভাল দিক রয়েছে, ঠিক তেমনই খারাপ দিকও রয়েছে। এটা নিয়েই ওকে চলতে হবে।
Kranti Goud World Cup Journey: গয়না বন্ধক রাখতে হয়েছিল মাকে, বাবা হয়েছিলেন সাসপেন্ড, তবু থামেননি ক্রান্তি, আজ তিনি বিশ্বজয়ী!
অর্জুনকে কভার ড্রাইভ শিখিয়ে ছিলেন সৌরভ
সৌরভ আরও বলেন, 'অর্জুন অত্যন্ত খেলা পাগল একটা ছেলে। বাঁ-হাতে ব্যাট করে। আমার এখনও মনে আছে, সালটা ছিল ২০০৭। মোহালিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আমরা খেলছিলাম। ওই টেস্ট ম্য়াাচে আমি শতরান করেছিলাম। আর শচীন বোধহয় ৮৮ রান করেছিল। আমরা যে হোটেলে ছিলাম, সেই ফ্লোরে সবার ঘরে দরজা খোলা ছিল। ৬ বছর আগে অর্জুন তখন আরও ছোট ছিল। হঠাৎ দেখি আমার ঘরে ঢুকেছে। আমাকে বলেছিল, কীভাবে কভার ড্রাইভ মারতে হয়, একটু শিখিয়ে দেবে? ও যে বাঁ-হাতে ব্যাট করে, সেটা আমি তখনও জানতাম না। একেবারে ছোট দেখেছিলাম। কোন হাতে ব্যাট ধরে, সেটা অতটা লক্ষ্য়ও করিনি। সেদিন আচমকা দেখি আমার কাছে কভার ড্রাইভ শেখার জন্য এসেছে। আমি তখন একটু মজা করে বলেছিলাম, তোমার বাবাই তো বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্য়ান। তুমি এখানে কী করছ? জবাবে অর্জুন আমাকে বলেছিল, বাবা তো আর বাঁ হাতে ব্যাট করতে পারে না। আমি বলেছিলাম, এটা অবশ্যই একটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। এরপর আমি শচীনকে ফোন করে বলি, কী করছ তুমি? ছেলেকে সময় দিচ্ছ না? অর্জুন আমার ঘরে বাঁ হাতে কভার ড্রাইভ শিখতে এসেছে। জবাবে শচীন আমাকে বলেছিল, আমি ওকে বহুবার শেখানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু, ও আমাকে বলেছে যে তুমি বাঁ হাতে ব্যাট করতে জানো না। আমি সৌরভ আঙ্কলের থেকেই শিখব।'
Harmanpreet Kaur News Update: 'হারের যন্ত্রণা জানি, এবার জিততে চাই...', ফাইনালের আগে হুঙ্কার হরমনপ্রীতের
এই কথা শুনেই উপস্থিত সকলে হেসে ফেলেন। সৌরভের কথায়, 'অর্জুনের মধ্যে ক্রিকেট খেলার প্রতি যথেষ্টই ভালবাসা রয়েছে। শচীন তেন্ডুলকর মাঝেমধ্যেই ইংল্যান্ডে বেড়াতে যান। ওঁর বাড়িটা ঠিক লর্ডসের পাশেই। ওঁর ছেলেকে দেখি, সারাদিন বোলিং মেশিনের সামনে দাঁড়িয়ে অনুশীলন করছে। আশা করব, ও যদি শচীন তেন্ডুলকরের ৩০ শতাংশও ক্রিকেট খেলতে পারে, তাহলে ৩০-৪০ বছর পর মনে করতে পারবে যে ও এই খেলায় সফল হতে পেরেছে। কিন্তু, অর্জুনের উপর অবশ্যই চাপ থাকবে। 'শচীন তেন্ডুলকরের ছেলে' এই তকমাটা মুছবে না।'
ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে নেটে অনুশীলন অর্জুনের, উঠেছিল বিতর্ক
এরপর সৌরভকে জিজ্ঞাসা করা হয়, অর্জুন তো ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে নেটে বোলিং অনুশীলন করে। এটা নিয়েও যথেষ্ট বিতর্ক হচ্ছে। এই ব্যাপারটাকে তিনি কীভাবে দেখছেন? জবাবে টিম ইন্ডিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক বলেন, 'এমন জিনিস আগে কখনও হয়নি। সব ঘটনারই ব্যতিক্রম রয়েছে। এই ভেবেই গোটা বিষয়টাকে দেখা উচিত। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় না যে এটা খুব একটা বড় সমস্যার কথা। কারণ, নেটে বোলিং করার জন্য আমরা অনেক সময়ই বাইরে থেকে বোলার ডাকি। টিম ইন্ডিয়ার সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্কই থাকে না। তারা বাইরে থেকে এসে ভারতীয় ক্রিকেটারদের সাহায্য করে। সেক্ষেত্রে একজন ক্রিকেটারের ছেলে কিংবা মেয়ে আসতেই পারে। এটা একটা বৃহত্তর পরিবার। অস্ট্রেলিয়ায় আমরা দেখেছি, বক্সিং ডে টেস্ট ম্যাচে রিকি পন্টিং তাঁর ছেলেদের নিয়ে MCG-তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এটা খুব একটা বড় ঘটনা নয়। নেটে এসে যদি কোনও ডিসটার্ব না করে, তাহলে তো অসুবিধে থাকার কোনও কথা নয়।'
Shafali Verma: “ছোরি নে দিখা দিয়া…” — এক বাবার গর্ব, এক মেয়ের মহাকাব্যিক প্রত্যাবর্তন! বিশ্বজয়ী শেফালির অবিশ্বাস্য কামব্যাক
সৌরভ আরও বলেছিলেন, 'আমার বাবা যখন সিএবি সচিব ছিলেন, সেই সময় আমি ৫ বছর বয়সে আমি নেটের সামনে দাঁড়িয়ে কেন ব্য়ারিংটনের অনুশীলন দেখতাম। এই অ্যাডভান্টেজ তো থাকবেই। তবে এটাকে অ্যাডভান্টেজ বলাও ঠিক হবে না। কারণ যে ক্রিকেটার দেশের হয়ে এত বছর ধরে খেলেছে, তার ছেলের আর কীই বা যায় আসে?'
সানার মধ্যে ক্রিকেটার হওয়ার ইচ্ছে নেই : সৌরভ
শেষকালে ওই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ফের সানার প্রসঙ্গ খুঁচিয়ে তোলেন। তখন সৌরভ বলেন, 'সানার মধ্যে আপাতত ক্রিকেটার হওয়ার কোনও ইচ্ছেই নেই। আমি যখন টেস্ট ম্য়াচ খেলতাম, ততদিন ওর কোনও আগ্রহই ছিল না। যদিও IPL-এর সময় রোজ মাঠে যেত। প্রথমবার আমাকে প্রশ্ন করেছিল, বাবা আজ কেন হারলে? এখন তো আমিও আর আইপিএল খেলি না। সেকারণেই IPL-এর উপর থেকেও ক্রমশ আগ্রহ হারাচ্ছে সানা। সবথেকে বড় কথা, ও এখন বড় হচ্ছে। একটা মেয়ে এবং ছেলের মধ্যে অনেক তফাৎ রয়েছে। দুজনের আগ্রহ আলাদা। ও নাচ শিখতে ভালবাসে। এখন অনেক কিছু করে। শেষপর্যন্ত কোনটা করবে, আমি জানি না।'
Sourav Ganguly Controversy: বিশ্বজয়ী রিচা-হরমনপ্রীতরা, সৌরভের পুরনো মন্তব্যে আগুন নেটদুনিয়ায়! সেদিন ঠিক কী বলেছিলেন মহারাজ?
Sourav Ganguly Controversy: ফের বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ১২ বছর আগে তাঁকে একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করেছে। আসুন, এই ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
Sourav Ganguly Controversy: ফের বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ১২ বছর আগে তাঁকে একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করেছে। আসুন, এই ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
মহিলা ক্রিকেট নিয়ে ভাইরাল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য
Sourav Ganguly: সম্প্রতি ২০২৫ মহিলা ক্রিকেট বিশ্বকাপ (Indian women cricket world cup) জয় করেছে টিম ইন্ডিয়া (Indian Women Cricket Team)। ৫২ বছর পর অবশেষে ঘটেছে শাপমোচন। ফাইনাল ম্য়াচে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল দক্ষিণ আফ্রিকার (IND W vs SA W) বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিল। গ্রুপ পর্বে যে প্রোটিয়া ব্রিগেডের কাছে তারা হেরে গিয়েছিল, প্রতিশোধের ফাইনালে তাদেরই ৫২ রানে দুরমুশ করে খেতাব জয় করেছে। এই সাফল্যের পর ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর অফিশিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলে শুভেচ্ছা জানান। আর এই একটা শুভেচ্ছাকে কেন্দ্র করেই আপাতত তোলপাড় বঙ্গ ক্রিকেট মহল। ১২ বছর আগে সৌরভের একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করেছে।
কোন প্রসঙ্গে কথাটি বলেছিলেন সৌরভ?
১২ বছর আগে এবিপি আনন্দ-র একটি আলোচনা সভায় এসেছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। মুম্বইয়ের মেরিন ড্রাইভে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। তখন সবেমাত্র আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন শচীন তেন্ডুলকর (Sachin Tendulkar)। এই পরিস্থিতিতে শচীন পুত্র অর্জুনের উপরই যে যাবতীয় প্রচারের আলো ছিল, তা বলাই বাহুল্য। সঙ্গে ছিল ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকদের প্রত্যাশার একরাশ বোঝা। তো, এই অনুষ্ঠানে টিম ইন্ডিয়ায় স্টার কিডদের উপর সমর্থকদের প্রত্যাশা এবং অযাচিত চাপ নিয়ে কথা হচ্ছিল। কথায় কথায় ওঠে অর্জুন তেন্ডুলকরের প্রসঙ্গ। ভারতীয় 'ক্রিকেট ঈশ্বর' শচীন তেন্ডুলকরের ছেলে তিনি। বাবার সাফল্যের প্রত্যাশা যে ছেলের উপরেও থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। ১২ বছর আগের কথা না হয় বাদই দেওয়া গেল, ভারতীয় ক্রিকেটে আজ পর্যন্ত অর্জুন পায়ের নীচে ভিত শক্ত করতে পারেননি। যাইহোক, সেদিনের ওই অনুষ্ঠানে ঠিক মন্তব্য করেছিলেন সৌরভ? ওই মন্তব্যের আগে এবং পরেই বা প্রেক্ষাপট কী ছিল? আসুন, সেই ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করে নেওয়া যাক।
দিনটা ছিল ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর। শচীন তেন্ডুলকরের অবসর নিয়ে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানের নাম ছিল 'মাস্টার ম্য়াজিক'। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পাশাপাশি ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন -- শান্তনু মৈত্র, শান, অভিজিৎ ভট্টাচার্য, আশীষ বিদ্যার্থীর মতো কৃতী ব্যক্তিত্বরা। ওই অনুষ্ঠানেই শচীন তেন্ডুলকরের পুত্র অর্জুনের উপর চাপ নিয়ে প্রশ্নটা উঠেছিল। সেইসময় সৌরভকে সানার প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। সানা (Sana Ganguly) যদি ক্রিকেটার হতে চায়, তাহলে কি মেনে নেবেন সৌরভ? জবাবে সেদিন সৌরভ ঠিক কী বলেছিলেন, আসুন সেই ব্যাপারেই বিস্তারিত আলোচনা করে নেওয়া যাক। জেনে নিন, একেবারে আসল ঘটনাটি।
Deepti Sharma Sucess Story: 'মেয়ে হয়ে ক্রিকেট খেলো না...', সহজ ছিল না রাস্তা, কাঁদিয়ে দেবে এই তারকা ক্রিকেটারের সাফল্যের গল্প
সেদিন ওই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সৌরভের কাছে প্রশ্ন করেছিলেন, 'গত রবিবার অর্জুন তেন্ডুলকর ১ রানে আউট হয়েছে। সেটা নিয়েও এখানকার সমস্ত কাগজে খবর হয়েছে। কতটা চাপ থাকে এই স্টার কিডদের উপরে? সানা যদি কোনওদিন বলে যে ও ক্রিকেট খেলতে চায়, তাহলে তোমার প্রতিক্রিয়া কী হবে?'
'মেয়েদের ক্রিকেট খেলার কোনও দরকার নেই'
স্টার কিডদের উপর ওই চাপ প্রসঙ্গেই সৌরভ হাসতে হাসতে বলেছিলেন, 'আমি তাকে আগে বারণ করব। কারণ, মেয়েদের ক্রিকেট খেলার কোনও দরকার নেই।' সঙ্গে সৌরভ আরও যোগ করেন, এই চাপটা কিছুদিন অবশ্য়ই থাকবে। এটাই ভবিতব্য। আমি আগে শচীন তেন্ডুলকরের একটা লেখা পড়েছিলাম। শচীন নিজেও বেশ কয়েকবার বলেছে যে অর্জুনকে ওর মতো একা ছেড়ে দাও। আর কয়েকদিনের মধ্যে সেটা হয়েও যাবে। এখন অর্জুনের উপর শচীন তেন্ডুলকরের ছায়া রয়েছে। সেকারণে ওকে অনেক অসুবিধার মুখেও পড়তে হয়। কয়েকদিন আগে অর্জুনকে বোম্বে (অধুনা মুম্বই) অনূর্ধ্ব-১৪ দলে অর্জুনকে সিলেক্ট করা হয়েছিল। তখন অন্য একজন ক্রিকেটারের মা এসে অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর ছেলেকে নেওয়া হয়নি। শচীন তেন্ডুলকরের ছেলে বলেই অর্জুনকে দলে নেওয়া হয়েছে। ফলে এই স্টার কিড হওয়ার যেমন একটা ভাল দিক রয়েছে, ঠিক তেমনই খারাপ দিকও রয়েছে। এটা নিয়েই ওকে চলতে হবে।
Kranti Goud World Cup Journey: গয়না বন্ধক রাখতে হয়েছিল মাকে, বাবা হয়েছিলেন সাসপেন্ড, তবু থামেননি ক্রান্তি, আজ তিনি বিশ্বজয়ী!
অর্জুনকে কভার ড্রাইভ শিখিয়ে ছিলেন সৌরভ
সৌরভ আরও বলেন, 'অর্জুন অত্যন্ত খেলা পাগল একটা ছেলে। বাঁ-হাতে ব্যাট করে। আমার এখনও মনে আছে, সালটা ছিল ২০০৭। মোহালিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আমরা খেলছিলাম। ওই টেস্ট ম্য়াাচে আমি শতরান করেছিলাম। আর শচীন বোধহয় ৮৮ রান করেছিল। আমরা যে হোটেলে ছিলাম, সেই ফ্লোরে সবার ঘরে দরজা খোলা ছিল। ৬ বছর আগে অর্জুন তখন আরও ছোট ছিল। হঠাৎ দেখি আমার ঘরে ঢুকেছে। আমাকে বলেছিল, কীভাবে কভার ড্রাইভ মারতে হয়, একটু শিখিয়ে দেবে? ও যে বাঁ-হাতে ব্যাট করে, সেটা আমি তখনও জানতাম না। একেবারে ছোট দেখেছিলাম। কোন হাতে ব্যাট ধরে, সেটা অতটা লক্ষ্য়ও করিনি। সেদিন আচমকা দেখি আমার কাছে কভার ড্রাইভ শেখার জন্য এসেছে। আমি তখন একটু মজা করে বলেছিলাম, তোমার বাবাই তো বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্য়ান। তুমি এখানে কী করছ? জবাবে অর্জুন আমাকে বলেছিল, বাবা তো আর বাঁ হাতে ব্যাট করতে পারে না। আমি বলেছিলাম, এটা অবশ্যই একটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। এরপর আমি শচীনকে ফোন করে বলি, কী করছ তুমি? ছেলেকে সময় দিচ্ছ না? অর্জুন আমার ঘরে বাঁ হাতে কভার ড্রাইভ শিখতে এসেছে। জবাবে শচীন আমাকে বলেছিল, আমি ওকে বহুবার শেখানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু, ও আমাকে বলেছে যে তুমি বাঁ হাতে ব্যাট করতে জানো না। আমি সৌরভ আঙ্কলের থেকেই শিখব।'
Harmanpreet Kaur News Update: 'হারের যন্ত্রণা জানি, এবার জিততে চাই...', ফাইনালের আগে হুঙ্কার হরমনপ্রীতের
এই কথা শুনেই উপস্থিত সকলে হেসে ফেলেন। সৌরভের কথায়, 'অর্জুনের মধ্যে ক্রিকেট খেলার প্রতি যথেষ্টই ভালবাসা রয়েছে। শচীন তেন্ডুলকর মাঝেমধ্যেই ইংল্যান্ডে বেড়াতে যান। ওঁর বাড়িটা ঠিক লর্ডসের পাশেই। ওঁর ছেলেকে দেখি, সারাদিন বোলিং মেশিনের সামনে দাঁড়িয়ে অনুশীলন করছে। আশা করব, ও যদি শচীন তেন্ডুলকরের ৩০ শতাংশও ক্রিকেট খেলতে পারে, তাহলে ৩০-৪০ বছর পর মনে করতে পারবে যে ও এই খেলায় সফল হতে পেরেছে। কিন্তু, অর্জুনের উপর অবশ্যই চাপ থাকবে। 'শচীন তেন্ডুলকরের ছেলে' এই তকমাটা মুছবে না।'
ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে নেটে অনুশীলন অর্জুনের, উঠেছিল বিতর্ক
এরপর সৌরভকে জিজ্ঞাসা করা হয়, অর্জুন তো ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে নেটে বোলিং অনুশীলন করে। এটা নিয়েও যথেষ্ট বিতর্ক হচ্ছে। এই ব্যাপারটাকে তিনি কীভাবে দেখছেন? জবাবে টিম ইন্ডিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক বলেন, 'এমন জিনিস আগে কখনও হয়নি। সব ঘটনারই ব্যতিক্রম রয়েছে। এই ভেবেই গোটা বিষয়টাকে দেখা উচিত। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় না যে এটা খুব একটা বড় সমস্যার কথা। কারণ, নেটে বোলিং করার জন্য আমরা অনেক সময়ই বাইরে থেকে বোলার ডাকি। টিম ইন্ডিয়ার সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্কই থাকে না। তারা বাইরে থেকে এসে ভারতীয় ক্রিকেটারদের সাহায্য করে। সেক্ষেত্রে একজন ক্রিকেটারের ছেলে কিংবা মেয়ে আসতেই পারে। এটা একটা বৃহত্তর পরিবার। অস্ট্রেলিয়ায় আমরা দেখেছি, বক্সিং ডে টেস্ট ম্যাচে রিকি পন্টিং তাঁর ছেলেদের নিয়ে MCG-তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এটা খুব একটা বড় ঘটনা নয়। নেটে এসে যদি কোনও ডিসটার্ব না করে, তাহলে তো অসুবিধে থাকার কোনও কথা নয়।'
Shafali Verma: “ছোরি নে দিখা দিয়া…” — এক বাবার গর্ব, এক মেয়ের মহাকাব্যিক প্রত্যাবর্তন! বিশ্বজয়ী শেফালির অবিশ্বাস্য কামব্যাক
সৌরভ আরও বলেছিলেন, 'আমার বাবা যখন সিএবি সচিব ছিলেন, সেই সময় আমি ৫ বছর বয়সে আমি নেটের সামনে দাঁড়িয়ে কেন ব্য়ারিংটনের অনুশীলন দেখতাম। এই অ্যাডভান্টেজ তো থাকবেই। তবে এটাকে অ্যাডভান্টেজ বলাও ঠিক হবে না। কারণ যে ক্রিকেটার দেশের হয়ে এত বছর ধরে খেলেছে, তার ছেলের আর কীই বা যায় আসে?'
সানার মধ্যে ক্রিকেটার হওয়ার ইচ্ছে নেই : সৌরভ
শেষকালে ওই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ফের সানার প্রসঙ্গ খুঁচিয়ে তোলেন। তখন সৌরভ বলেন, 'সানার মধ্যে আপাতত ক্রিকেটার হওয়ার কোনও ইচ্ছেই নেই। আমি যখন টেস্ট ম্য়াচ খেলতাম, ততদিন ওর কোনও আগ্রহই ছিল না। যদিও IPL-এর সময় রোজ মাঠে যেত। প্রথমবার আমাকে প্রশ্ন করেছিল, বাবা আজ কেন হারলে? এখন তো আমিও আর আইপিএল খেলি না। সেকারণেই IPL-এর উপর থেকেও ক্রমশ আগ্রহ হারাচ্ছে সানা। সবথেকে বড় কথা, ও এখন বড় হচ্ছে। একটা মেয়ে এবং ছেলের মধ্যে অনেক তফাৎ রয়েছে। দুজনের আগ্রহ আলাদা। ও নাচ শিখতে ভালবাসে। এখন অনেক কিছু করে। শেষপর্যন্ত কোনটা করবে, আমি জানি না।'