ভিতরে ভিতরে ফুঁসছিলেন। তিন বছর মুখ বুজে সহ্য করেছিলেন। আর আসল সময়েই মোক্ষম আঘাত হেনেছেন নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন। বোর্ডের মিটিংয়ে তেড়েফুঁড়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে কোণঠাসা করব দিয়েছেন। যাতে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিদায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। ২০১৯-এ শ্রীনিবাসন ব্রিজেশ প্যাটেলকে প্রায় বোর্ডের প্রেসিডেন্টের পদে বসিয়ে দিয়েছিলেন। তবে একদম শেষ মুহূর্তে পাশার চাল উল্টে যায়।
হঠাৎ করেই ব্রিজেশ প্যাটেলের বদলে বোর্ডের মসনদে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণা করা হয়। তখন মেনে নিয়েছিলেন শ্রীনিবাসন। তবে অতীতের সেই জ্বালা যে তিনি ভোলেননি, ভারতীয় ক্রিকেটের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। গত মঙ্গলবার মুম্বইয়ের ট্রাইডেন্ট হোটেলে বোর্ডের মিটিংয়ে সৌরভকে ব্যাপকভাবে হেনস্তা করা হয়। যে আক্রমণের নেপথ্যে ছিলেন নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন। তিনি সরাসরি সৌরভকে নন-পারফর্মার বলে দাগিয়ে দেন। বলে দেন প্রত্যাশিত মাত্রায় পারফর্ম করতে পারেননি তিনি।
আরও পড়ুন: একদিনে মোদি-আম্বানি হওয়া যায় না! বোর্ড-বিদায়ের পর প্ৰথমবার মুখ খুললেন ‘অভিমানী’ সৌরভ
সুপ্রিমকোর্টের কুলিং অফ নিয়মে শিথিলতার পরে সৌরভ কার্যত নিশ্চিত ছিলেন যে তিনিই আরও একবার বোর্ডের মসনদে বসবেন। তবে গত মঙ্গলবারের আচমকা বৈঠকে সমস্ত পরিস্থিতি ইউ-টার্ন নিয়ে নেয়। আচম্বিতে অবস্থা বদলের আন্দাজ আগে থেকে পাননি সৌরভ। সেই বৈঠকেই সৌরভকে চেয়ার খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। বোর্ডের তরফে কোনও ব্যাকিং না পেয়ে বৈঠকেই মুষড়ে পড়েন সৌরভ।
চেন্নাই সুপার কিংসের মালিক শ্রীনিবাসন বোর্ডের বৈঠকে এসেছিলেন তামিলনাড়ু ক্রিকেট সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে। বোর্ডের ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী প্রেসিডেন্ট হিসেবে এমনিতেই তিনি বিসিসিআইয়ের রাজনীতি সম্পর্কে ভালোরকম ওয়াকিবহাল। একসময় বোর্ড চলত তাঁর অঙ্গুলিলেহনে। এবারেও সৌরভকে সরিয়ে বোর্ড রজার বিনির নাম প্রস্তাব করেন তিনি। যাতে সায় দেন বোর্ডের বাকি সদস্যরা। তারপরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বলাবলি শুরু হয়ে যায়, সৌরভকে সরিয়ে আসল মাস্টারস্ট্রোক দিয়ে গেলেন শ্রীনিবাসনই।
আরও পড়ুন: বোর্ড থেকে সরার পরেই বড় দায়িত্বে সৌরভ! যোগ দিলেন বড় সংস্থায়
তবে শ্রীনিবাসনকে জবাব দিতে বেশি দেরি করলেন না মহারাজ। বৃহস্পতিবার সৌরভ বন্ধন ব্যাঙ্কের এক অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে বলে দেন, "ক্রিকেটারদের প্রশাসক হিসাবে নিজেকে তুলে ধরেছি। আমার আমলে বহু ভালো ঘটনা ঘটেছে, যেমন করোনার সময় আইপিএল আয়োজন, আইপিএলের টিভি স্বত্ত্ব, অনুর্দ্ধ-১৯ দলের বিশ্বকাপ জয়, মহিলা দলের রানার্স হওয়া, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতের জয়! প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি উপভোগই করেছি।"
সরাসরি শ্রীনিবাসনের নাম না বললেও সৌরভের ইঙ্গিত যে কার দিকে, তা বুঝতে সমস্যা হয় না। ক্রিকেট মহলের ব্যাখ্যা শ্রীনিবাসন যেভাবে তাঁকে 'নন-পারফর্মার' বলে দাগিয়ে দিয়েছেন, তারই পাল্টা এই বিবৃতি।
আরও পড়ুন: বোর্ডে সৌরভকে ‘পিছন থেকে ছুরি মারলেন’ ইনিই! মহারাজকে ‘হেনস্তা’ করার মাস্টারমাইন্ডকে চিনুন
সেই সঙ্গে তাঁর আরও সংযোজন, “জীবনের সেরা সময় কাটিয়েছি জাতীয় দলের হয়ে খেলার সময়। বিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট হয়েছি। এবার আরও বড় কিছু করব। চিরকালের জন্য কেউ ক্রিকেটার, প্রশাসক থাকতে পারে না। দুই ক্ষেত্রেই দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে।”
সৌরভ আগামী দিনে নতুন কোন অবতারে হাজির হন, তা নিয়ে এখন থেকেই জল্পনা তুঙ্গে।