/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/12/Dhoni.jpg)
গুজরাট টাইটান্স-এ খেলবেন রবিন মিঞ্জ (টুইটার)
৪৮ বছর বয়সি অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী ফ্রান্সিস জেভিয়ার মিঞ্জের জন্য এটি ছিল বিশেষ মঙ্গলবার। রাঁচি বিমানবন্দরে বর্তমানে বেসরকারি সংস্থা নিযুক্ত এই নিরাপত্তারক্ষী মঙ্গলবারও ডিউটিতে ছিলেন। যাত্রীদের বোর্ডিং পাস দিয়ে সাহায্য করছিলেন। সেই সময় গুজরাট টাইটানস তাঁর ২১ বছরের ছেলে রবিনকে মুম্বই ইন্ডিয়ানসের সঙ্গে তীব্র নিলাম যুদ্ধের পর ৩.৬০ কোটি টাকায় ছিনিয়ে নেয়। ফ্রান্সিস ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, 'সহকর্মী এক সিআইএসএফ জওয়ান এসে খবরটা দিল। হঠাৎ এসে দেখি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলছে, আরে ফ্রান্সিস স্যার, আপনি তো কোটিপতি হয়ে গেলেন।'
ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী অধ্যুষিত গুমলা জেলার গ্রাম তেলগাঁওতে মিঞ্জ পরিবারের শিকড়। ক্রিকেট কিন্তু, এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় খেলা না। বরং, এখান থেকে বেশ কয়েকজন বিশ্বমানের হকি খেলোয়াড় তৈরি হয়েছে। লাকরা ভাইবোন বিমল, বীরেন্দ্র এবং অসুন্তা গুমলার বাসিন্দা। ফ্রান্সিসও খেলাধুলায় ছিলেন। অ্যাথলেটিক্সের প্রতি তাঁর ভালোবাসাই চাকরি দিয়েছিল সেনাবাহিনীতে। সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদানের পর পরিবার রাঁচিতে চলে আসে। এখানেই রবিনের ক্রিকেট-খড়ি। ওর বয়সি বেশিরভাগ শিশুর মতই রবিনেরও আদর্শ, রাঁচি থেকে উঠে আসা দেশের আইকন এমএস ধোনি।
ধোনির ছোটবেলার কোচ চঞ্চল ভট্টাচার্য, রবিনেরও কোচ। অল্পবয়সি ছেলেটাকে উইকেট-কিপিংয়ের শিক্ষা দেন। সঙ্গে, ব্যাটটা ভালো করে করতে শেখান। চঞ্চল বললেন, 'মাহি যখন জাতীয় দলে চান্স পেল, তখন রাঁচিতে একটি মাত্র ক্রিকেট একাডেমি ছিল। এখন ১৫টা। আমি এটা বলে অতিরঞ্জিত করছি না যে রাঁচিতে উইকেট-কিপিং গ্লাভসের চাহিদা বেশি। আর, তরুণ ক্রিকেটাররা লম্বা চুল রাখতে পছন্দ করে।' রবিনের বাবা ফ্রান্সিসের সঙ্গেও ধোনির দেখা হয়েছে। ফ্রান্সিস বললেন, 'সম্প্রতি এয়ারপোর্টে ধোনির সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। উনি আমাকে বললেন, ফ্রান্সিসজি কোই না লেগা তো হাম লে লেঙ্গে (যদি কেউ ওকে না নেয়, তবে আমরা নিয়ে নেব)।'
রবিন রাঁচির সনেট ক্রিকেট ক্লাবে তিন জন কোচের কাছে ট্রেনিং করেন। আসিফ হক ব্যাটিং শেখান। আসিফ তো রবিনের ব্যাপারে উচ্ছ্বসিত। তুলনা করেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান পাওয়ার হাউস ক্রিস গেইলের সঙ্গে। আসিফের কথায়, 'আমরা ওকে রাঁচি কা গেইল বলে ডাকি। বাঁহাতি, বড় ছক্কা মারে। এমন এক নতুন যুগের ক্রিকেটার, যে প্রথম বল থেকেই বোলারদের মোকাবিলা করতে ভালোবাসে। ওর টার্গেট ১০০ না, ২০০ রান করা। আমি এবং এসপি গৌতম (বিহারের প্রাক্তন ক্রিকেটার) ওকে ব্যাটিং শেখাই। মাটিতে শট খেলতে হবে। সেটা বোঝানোর চেষ্টা করি। মাটিতে শট খেলা খুবই কঠিন কাজ। কিন্তু, চঞ্চলদা যেমন বলেছেন, ও কমবয়সি মাহির কথা মনে করিয়ে দেয়। ৩ থেকে ৭ নম্বর, যে কোনও জায়গায় ব্যাট করতে পারে।' চঞ্চল বলেন, 'রাঁচির ক্রিকেটাররা মানেই মাহির পুরোনো রূপ। যার লম্বা চুল, আর বড় ছক্কা হাঁকানোই লক্ষ্য।'
রবিনের মত, ঝাড়খণ্ডের আরও একজন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান কুমার কুশাগ্র। ১৯ বছরের কুশাগ্রকে মঙ্গলবারের নিলামে নিয়েছে দিল্লি ক্যাপিটালস। দিচ্ছে ৭.২০ কোটি টাকা। কয়েক বছর আগে, মুম্বাই ইন্ডিয়ানস ১৫.২৫ কোটি টাকায় রাঁচির আরেক উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান ইশান কিশানকে চুক্তিবদ্ধ করেছিল। চঞ্চল বললেন, 'ধোনির পর আমরা ইশানকে ভারতের হয়ে খেলতে দেখেছি। এই নিলামে কুশাগ্র আর রবিন জায়গা পেয়েছে। এরা সবাই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান।' কোচ চঞ্চল ও আসিফ জানিয়েছেন, রাঁচির জেএসসিএ স্টেডিয়ামে একটি ক্যাম্পের সময় ধোনি রবিনকে পরামর্শ দিয়েছিল। আসিফ বললেন পরামর্শটা হল, 'আপনি একজন ভালো খেলোয়াড় হতে পারেন। কিন্তু, ক্রিজে আপনাকে সময় কাটাতে হবে। উইকেট ছুড়ে আসলে হবে না। একটা ছক্কা মারার পর সিঙ্গেল নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এক ওভারে ছয়টি ছয় মারার চেষ্টা করলে চলবে না।'
কোচ চঞ্চল হেসে বললেন, 'ও অনেকটা ছোটবেলার মাহির মত। নির্ভীক, আর সব বোলারকেই আক্রমণ করতে ভালোবাসে। ও ক্রিজে যতটা সময় কাটিয়েছে, তার চেয়ে কতটা ছক্কা মেরেছে তা নিয়ে বেশি চিন্তিত। রবিন ওঁর বাবার ধাঁচ পেয়েছে।' রাঁচি বিমানবন্দরে সিনিয়র মিঞ্জ ছেলের দৌলতে ইতিমধ্যে সেলিব্রিটি হয়ে উঠেছেন। কিন্তু, সেই হাওয়ায় তিনি ভাসতে নারাজ। বুঝিয়ে দিলেন তাঁর পা আছে মাটিতেই।
ফ্রান্সিস বললেন, 'রবিন যখন আইপিএল খেলতে উড়বে, তখন আমি এখানেই থাকব। আমার একটা চাকরি আছে। দুই মেয়ে লেখাপড়া করছে। আমি চাই রবিনও স্নাতকস্তরের লেখাপড়া শেষ করুক।' ফ্রান্সিস জানালেন, তিনি ছিলেন ৯ বিহার রেজিমেন্টে। যা শিখেছেন, তা-ই তিনি রবিনকে শিখিয়েছেন। গর্বিত বাবা বললেন, 'আমি তাঁকে সততা এবং আনুগত্য শিখিয়েছি। আমি আশা করি সে স্থির থাকবে। তার স্বপ্নের পিছনে ছুটবে। নিজের ১০০ শতাংশ দেবে। কঠোর পরিশ্রম করবে। ৯ বিহার রেজিমেন্টে আমাদের রণহুংকার হল- করম হি ধরম হ্যায়। আমি ওকে এটা সব সময় মনে রাখতে বলেছি।'