শয্যাশায়ী জিমনাস্টের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই, হুইল চেয়ার বসেই পুনেতে প্যারা অ্যাথলেটিক চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ। সৌমিতা সাফল্যে গর্ব হবে। একসময়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছে ফ্লোর। ট্রেনার হিসাবেও সফল। হঠাৎ করেই ছন্দপতন। বিরল স্নায়ু রোগে আক্রান্ত হয়ে একেবারে শয্যাশায়ী। হাঁটাচলার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেন বছর ৩৫-এর এই ক্রিড়াবিদ।
চোখের সামনে মেয়ের কষ্ট তিলে তিলে দেখেছেন ৭২ বছরের বৃদ্ধ বাবা। এবার ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। অদম্য জেদ আর ইচ্ছাশক্তিতে ভর করেই ১৬ মার্চ পুনেতে প্যারা অ্যাথলেটিক চ্যাম্পিয়নশিপে শটপাট ইভেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সৌমিতা। ১৯৯৮ থেকে শুরু করে একটানা ২০০৮ ছুটিয়ে পারফর্ম করে গেছেন সৌমিতা।
ঝুলিতে এসেছে একের পর এক পদক। হঠাৎ করেই জীবনের ছন্দপতন। বিরল স্নায়ুরোগে আক্রান্ত হয়ে একেবারে শয্যাশায়ী। কেবল জিমনাস্ট হিসাবেই নয়। ট্রেনার হিসাবেও তিনি সফল। ২০০৮ সালে ট্রেনার হিসাবে প্রশিক্ষণ শেষ করে চেন্নাইতে প্রশিক্ষক হিসাবে চাকরিতে যোগদান। ২০১০ দিল্লি কমনওয়েলথ গেমসে বিচারকের আসনে থেকে দেশ জোড়া খ্যাতি পান তিনি। ২০১২ সালেই সৌমিতার জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। বিরল এক স্নায়ু রোগে আক্রান্ত হন তিনি। চেন্নাই পরে কলকাতাতে হয় চিকিৎসা। তাতে অবশ্য কিছু লাভ হয়নি। ধীরে ধীরে হাঁটার শক্তি হারিয়ে ফেলেন। চেন্নাইতে থাকাকালীন প্রশিক্ষক হিসাবে তার হাতে তৈরি হয় বেশ কিছু সেরা নক্ষত্র। আর সেই থেকে তিনি চেন্নাই সরকারের নজরে আসেন।
২০১৫ সালে সৌমিতা যখন কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন সেই সময় জয়ললিতা সরকার এসে পাঁচ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন তার পরিবারের হাতে। এরপর তড়িঘড়ি সৌমিতার চিকিৎসার ব্যয়ভার গ্রহণ করে রাজ্যসরকার। যদিও তারপর থেকে আর কেউ ফিরে তাকায় নি। বাড়িতে অসুস্থ বাবার সঙ্গেই কোনমতে দিন কাটান তিনি।
সৌমিতা বলেন, ‘একটা সময় ছিল যখন জিমনাস্ট হিসাবে সেই সঙ্গে ট্রেনার হিসাবে ফ্লোর দাপিয়ে বেড়াতাম। হঠাৎ করেই ভাগ্যের চাকা অন্যদিকে ঘুরতে শুরু করে। ২০১২ সালেই জটিল স্নায়ুরোগে আক্রান্ত হই। তারপর থেকে ধীরে ধীরে পরিচিতরাও মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করে। চিকিৎসায় সর্বস্ব হারিয়ে আজ কোনমতে বেঁচে রয়েছি। প্যারা অ্যাথলেটিক চ্যাম্পিয়নশিপ আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জ। আমি প্রমাণ করতে চাই প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে অদম্য জেদ আর ইচ্ছাশক্তি দিয়েও জীবনে অনেক কিছুই পাওয়া সম্ভব’।