/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2022/01/Subhash_Bhowmick.jpeg)
৪৭ বছর পরে সেই হাহাকার এখনও কানে বাজে মোহনবাগান তাঁবুতে। সেই যন্ত্রণা, সেই আর্তনাদ এখনও মোছেনি সবুজ মেরুনের সুদীর্ঘ ফুটবল ইতিহাসে। তখন সাবেকি ডার্বিয়ানার উদয় হয়নি কলকাতা ফুটবলে। ইস্ট-মোহন ম্যাচের নামেই ভিড় জমত মাঠে, গ্যালারিতে। উত্তাল হত গ্যালারি। আবেগে ভাসত শহর।
১৯৭৫-এ ৩০ সেপ্টেম্বরে শিল্ড ফাইনালের সেই বড় ম্যাচ। কে-ই বা ভুলতে পেরেছে! ইস্টবেঙ্গল- ৫, মোহনবাগান-০ সেই স্কোরলাইন গর্বের মশাল হয়ে আছড়ে পড়েছিল ভারতীয় ফুটবলে। মোহনবাগানের ইতিহাসে এখনও নিকৃষ্টতম পরাজয়ের গ্লানি বহন করে সেই দিন। ময়দানি ফুটবলের অসংখ্য গল্পগাথার সম্ভার নিয়ে আলোচিত হতে থাকা সেই দিনের এক নক্ষত্র চিরতরে বিদায় নিলেন শনিবার। কথায় বলে শিল্পীর মৃত্যু হয় না। শিল্পী বেঁচে থাকেন তাঁর শিল্পকর্মে। ঠিক তেমনই সুভাষ ভৌমিক এই পার্থিব জগত ছেড়ে চলে গেলেও তিনি বেঁচে থাকবেন তাঁর রেখে যাওয়া অসংখ্য স্মৃতিতে। ৭৫-এর সেই শিল্ড ফাইনালই যেমন!
𝗜𝗙𝗔 𝗦𝗛𝗜𝗘𝗟𝗗 𝗙𝗜𝗡𝗔𝗟
𝟯𝟬𝘁𝗵 𝗦𝗲𝗽𝘁𝗲𝗺𝗯𝗲𝗿, 𝟭𝟵𝟳𝟱
𝗘𝗮𝘀𝘁 𝗕𝗲𝗻𝗴𝗮𝗹 - 𝟱
𝗠𝗼𝗵𝘂𝗻 𝗕𝗮𝗴𝗮𝗻 - 𝟬
🔴🟡#JoyEastBengal🔥 #EBRP
🔴🟡 pic.twitter.com/3JbWLcpQMz— EAST BENGAL the REAL POWER (EBRP)❤💛 (@EBRPFC) September 30, 2021
সেই ম্যাচে একটাও গোল করেননি ময়দানের প্রিয় ভোম্বলদা। তবুও সেই ম্যাচের পরে অবিসংবাদী নায়কের মর্যাদায় তাঁকে বরণ করে নিয়েছিল লাল-হলুদ জনতা। কথিত আছে তিনি নাকি ডেকে ডেকে সতীর্থদের দিয়ে গোল করিয়েছিলেন।
মোহনবাগানের অভিশপ্ত সেই ম্যাচে কাস্টডিয়ানের ভূমিকায় ছিলেন ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়। কিংবদন্তি গোলকিপার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলছিলেন, "ওই ম্যাচে ভোম্বলদা দলের ফুটবলারদের ডেকে ডেকে গোল করিয়েছিলেন। এখনও মনে রয়েছে।"
46 years ago on this day ie 30.09.1975 East Bengal defeated Mohun Bagan 5-0 in the IFA Shield final to record the highest margin of Derby win.Below Shyam Thapa scoring the second goal at the Mohun Bagan ground. pic.twitter.com/jX1kWNTWc6
— Gautam Roy (@gautamfootball) September 30, 2021
ম্যাচের পরে কলকাতার কাগজে বিধ্বস্ত ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই ফ্রেম এখনও আলোচনায় উঠে আসে। যেখানে তেকাঠির নিচে নুইয়ে পড়া ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়কে হাত ধরে তুলতে দেখা গিয়েছিল স্বয়ং সুব্রত ভট্টাচার্যকে।
#OnThisDay in 1975, East Bengal defeated Mohun Bagan 5-0 in IFA Shield final, a record victory margin in Kolkata derby. Goals scored by Shyam Thapa (2), Subhankar Sanyal, Surajit Sengupta & Ranjit Mukherjee. Coach PK Banerjee being carried by fans post match #IndianFootball pic.twitter.com/IvZytTZayE
— IndianFootball_History (@IndianfootballH) September 30, 2020
East Bengal rocketed to the highest margin in a Kolkata derby in an IFA Shield final, in 1975. A Mohun Bagan supporter Umakanta Paladhi committed suicide after the match. In his suicide note, he wrote that he would exact revenge as a Bagan player in his next birth. pic.twitter.com/298m1s7tMB
— memoryindia (@memoryindia) November 9, 2020
East Bengal's two finest wins in the last 101 years- On left East Bengal's 1-0 triumph vs PAS Club (Iran) against an International team in 1970 IFA Shield final.)On right the Club's 5-0 Derby Win vs Mohun Bagan in 1975 IFA Shield Final.Below Asean Cup triumph. pic.twitter.com/FUi7wEAaQM
— Gautam Roy (@gautamfootball) August 1, 2021
Shyam Thapa was one of the top performers in East Bengal's 5-0 win over Mohun Bagan in 1975 IFA Shield final. He scored twice. He also came agonizingly close to become the first player to bag a Kolkata Derby hattrick, post independence, missing a penalty kick #IndianFootball pic.twitter.com/dqKifGjokz
— IndianFootball_History (@IndianfootballH) April 12, 2021
শনিবারের ট্র্যাজেডির দিনে সেই কালো সময়ের স্মৃতি এখন আর মনে করতে চান না ময়দানের প্রিয় বাবলু দা। পাল্টা বলে দেন, "ভোম্বলদার এই রংমশাল জ্বালানো কীর্তি থাকতে সেই ঘটনাই মনে এল? ওই ঘটনা আর স্মরণ করতে চাই না।"
জনরোষ আর উন্মত্ত সমর্থকদের হাত থেকে বাঁচতে তিনি নাকি মাঝগঙ্গায় নৌকায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। মিথ নাকি সত্যি? সেই বিষয়ে আজও মুখ খোলেননি সুব্রত ভট্টাচার্য। শনিবার সতীর্থ-চির প্রতিপক্ষ-বন্ধুর প্রয়াণের দিনেও নীরব রইলেন। স্রেফ বললেন, "৬৯-এর পরে ৭৪-এ বাংলা সন্তোষে চ্যাম্পিয়ন হয়। সেবার ভোম্বলদার সঙ্গেই প্ৰথমবার বাংলার জার্সিতে কেরালায় খেলতে গিয়েছিলাম। ত্রিচুরে ওঁর গোলেই আমরা চ্যাম্পিয়ন হই।"
আরও পড়ুন: বস, তুমি আজীবন আমার হৃদয়ে থাকবে!
৭৫-এর কলঙ্কের স্মৃতি নিয়ে সুব্রত মিউট বাটন প্রেস করে দিলেও, স্মৃতি হাতড়াতে হাতড়াতে ভাস্কর বলছিলেন, "সেই সময় বড় ম্যাচে সবসময়ই হেরে যাওয়া দলের ফুটবলারদের কাছে আতঙ্ক নিয়ে হাজির হতেন সমর্থকরা। হামলা-হেনস্থার ভয়ে পুলিশের প্রহরায় আমরা মাঠ ছাড়তাম। আমি এবং বেশ কয়েকজন ফুটবলার সেদিন পুলিশের সাহায্যে মোহনবাগান মেসে হাজির হই। সুব্রত কোথায় ছিল, এখনও জানি না!"
বড় ম্যাচ, আবেগের লাভাস্রোত আর রাতারাতি ময়দানের হার্টথ্রব বনে যাওয়া! ৭৫'এর সেই ম্যাচ দু হাত উপুড় করে দিয়েছিল সুভাষ ভৌমিককে। অবিশ্বাস্য পাঁচ গোলের স্কোরশিটে যাঁর নাম গন্ধও ছিল না। সেই ম্যাচে জোড়া গোল করেন শ্যাম থাপা।
আরও পড়ুন- সুভাষ ভৌমিকের চিকিৎসা হবে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে, পাশে দাঁড়ালেন ক্রীড়ামন্ত্রী
সুভাষের আকস্মিক চলে যাওয়ার দিনে আরও আক্ষেপ যেন বেড়ে যায় ময়দানি ফুটবলের ব্যাকভলি স্রষ্টার জনকের। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-য় শ্যাম থাপা বলে দেন, "ভোম্বলদা ম্যাচের আগেই বলেছিলেন, তুই আজ হ্যাটট্রিক করবি। দুটো গোল করেছিলাম। শেষে পেনাল্টি মিস না করলে সেদিনই বড় ম্যাচে প্ৰথম হ্যাটট্রিককারী হিসাবে নাম লিখিয়ে ফেলতে পারতাম। বাইচুং নয়।"
"বহুবার আমরা একে অন্যের পেনাল্টি নিয়েছি। ৭৫-এর ম্যাচেও সুভাষের পেনাল্টি নেওয়ার কথা ছিল। তবে ও-ই আমাকে বলেছিল, তোর হ্যাটট্রিক, তুই মার। দুর্ভাগ্যের পেনাল্টিটা মিস করে বসি।"
৭৫-এর ম্যাচ উঠলেই উচ্ছ্বাসে বাঁধনহারা হয়ে যান শ্যাম। অনর্গল বলে যান, "এখনকার মত তখন এত সেলিব্রেশনের রেওয়াজ ছিল না। তবে আমরা টেন্টে ফিরে হুল্লোড় করেছিলাম, এখনও মনে রয়েছে। তাঁবুর চারপাশে ভিড় করেছিল হাজারো হাজারো জনতা। এসব দিন কি ভোলা যায়!"
"আজকের প্রজন্ম কতজন সুভাষ ভৌমিকের খেলা দেখেছেন, জানি না। তবে আমাদের সময়ে সুভাষ প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের কাছে সাক্ষাৎ ত্রাস নিয়ে হাজির হত। রোবাস্ট স্ট্রাইকার বলতে যা বোঝায় সেটাই ছিলেন উনি। ব্যাংককে এশিয়ান গেমসে দেখেছি দুজন ফুটবলারকে ডজ করে দুর্ধর্ষ গোল করতে। শরীরের যত্ন নিত না। একাধিকবার ওঁকে জানিয়েওছি। শেষে কিনা ও-ই চলে গেল এভাবে!"
আরও পড়ুন: না ফেরার দেশে সুভাষ! ময়দানি ফুটবলের এক যুগের অবসান
সেই ঐতিহাসিক ম্যাচের অংশ হয়ে যাওয়া গৌতম সরকার শোকে মুহ্যমান। কার্যত কথাই বলতে পারলেন না প্রিয় বন্ধুর প্রয়াণে। ৭৫-র উন্মাদনা ঘেরা স্মৃতির সরণি হেঁটে স্রেফ বলে গেলেন, "সেই সময় সুব্রত উঠতি তারকা। সুভাষ ভৌমিক তো বটেই, আমরা সকলেই দাপটে খেলেছিলাম। অলরাউন্ড ফুটবল বলতে যা বোঝায়। সুরজিৎ, শ্যামের সঙ্গে গোল পেয়েছিল শুভংকর স্যন্যালও।"
সেই স্মৃতি, সেই নস্ট্যালজিয়া বুক পকেটে সঙ্গে নিয়ে তারাদের আকাশে একবুক ইতিহাস হয়ে গেলেন সুভাষ ভৌমিক। কালান্তর শনিবারেই।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন