হরিপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
গুরুতর অসুস্থ ছিলেন, এটা সত্যি, কিন্তু শনিবার সাতসকালেই যে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন, সেটা ভাবতে পারা যায় নি। তিনি, মানে সুভাষ ভৌমিক। ৭০ দশকের অপ্রতিরোধ্য ফুটবলার এবং নয়ের দশকের একেবারে শুরু থেকে বছর চারেক আগে পর্যন্তও এক দাপুটে কোচ। ফুটবলার হিসেবে যতটা বর্ণময়, তার চেয়েও বেশি আধিপত্য তিনি দেখিয়েছেন কোচ হিসাবে।
সুভাষের জন্ম ১৯৫০এর ২ অক্টোবর, মৃত্যু শনিবার, ২০২২ এর ২২ জানুয়ারি। উত্তরবঙ্গ থেকে তাঁর কলকাতায় আগমন ১৯৬৮-তে। রাজস্থান দিয়ে শুরু। ৬৯-এ ইস্টবেঙ্গল। ৭০ থেকে ৭২ মোহনবাগান। ৭৩-এ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোচিংয়ে ইস্টবেঙ্গল যোগ দিয়েই ঝড় তুলে দেন তিনি । ২৪ গোল করে টপ স্কোরার হন।
আরও পড়ুন: বস, তুমি আজীবন আমার হৃদয়েই থাকবে!
৭৬-এ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই আবার মোহনবাগানে। দীর্ঘ ৬ বছর পর আবার কলকাতা লিগ সেবার জেতে বাগান। পিকে-র সংস্পর্শে উজ্জীবিত সুভাষ সেবার ১৮ গোল করেন ।
খেলোয়াড় সুভাষ একবার ত্রিমুকুট জিতেছেন। প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোচিংয়েই ৭৭ সালে।
ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, বাংলা ,ভারতের হয়ে তাঁর মোট গোল ২০০। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে ১২ এবং মোহনবাগানের হয়ে ১৬ - মোট ২৮টি ট্রফি জিতেছেন সুভাষ। বাংলার হয়ে সন্তোষ ট্রফি জিতেছেন চারবার।
দেশের হয়ে তাঁর কীর্তি - ৭০এর ব্যাংকক এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ জয়ী দলের সদস্য । ৭০ এর মারদেকা ফুটবলে তৃতীয় স্থান । ৭১-এ সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত পেস্টটা সুকান কাপে যুগ্ম জয়ী ভারতের হয়ে তাঁর মোট গোল -৯।
আরও পড়ুন: ৭৫-এর মহাকাব্য থেকে খসল আবেগের পাতা! বন্ধুর বিদায়ে শোকস্তব্ধ সেই ম্যাচের সৈনিকরা
এশিয়ান গেমসে ২, মারদেকায় ৫, পেস্টটা সুকানে ২। ৭১-এ মারদেকায় ফিলিপিন্সের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন কোচ সুভাষ। ফুটবলার সুভাষের চেয়ে কোচ সুভাষের দাপট ছিল আরও বেশি। তাঁর কোচিং জীবন শুরু ৯১ সালে মোহনবাগানের হয়ে। সাফল্য বলতে শুধু গভর্নস গোল্ড কাপ। মোহনবাগানের হয়ে কোচ হিসেবে তার ট্রফি এই একটিই ।
ট্রফির সাফল্য তাঁর পুরোটাই ইস্টবেঙ্গলের কোচ হিসাবে। ৯৯-২০০০ মরশুমে শুধু কলকাতা লিগে থেমে থাকতে হলেও দু বছর পর ট্রফির স্রোত বয়ে যায় ইস্টবেঙ্গলে। ২০০২-০৩ মরশুমে কলকাতা লিগ, ইনডিপেনডেন্স কাপ , দুরান্ড কাপ , আইএফএ শিল্ড, জাতীয় ফুটবল লিগ - পাঁচটি টুর্নামেন্টে খেলে পাঁচটিতেই চ্যাম্পিয়ন সুভাষের লাল হলুদ।
২০০৩-০৪ মরশুমে কলকাতা লিগ , আসিয়ান ক্লাব কাপ, এবং জাতীয় ফুটবল লিগ ঘরে তোলে ইস্টবেঙ্গল। সন্দেহাতীত ভাবে কোচ হিসাবে তার সেরা সাফল্য এই আসিয়ান ক্লাব কাপ জয়।
২০০৪-০৫ মরশুমে কলকাতা লিগ , ডুরান্ড কাপ এবং স্যান মিগুয়েল কাপ জেতে ইস্টবেঙ্গল।
এরপর অবশ্য ইস্টবেঙ্গল কোচ হিসাবে আর কোনো সাফল্য তিনি পান নি।
আরও পড়ুন- সুভাষ ভৌমিকের চিকিৎসা হবে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে, পাশে দাঁড়ালেন ক্রীড়ামন্ত্রী
খেলোয়াড় সুভাষ শুধু দুই প্রধানের হয়েই খেলেছেন, তবে কোচিং করিয়েছেন তিন প্রধানকেই, তবে সাফল্য পান নি। তিন প্রধানের বাইরে তিনি সালগাওকর, চার্চিল এবং কলকাতার টালিগঞ্জ অগ্রগামীর মত দলকে কোচিং করিয়েছেন।
আরও পড়ুন: না ফেরার দেশে সুভাষ! ময়দানি ফুটবলের এক যুগের অবসান
১৯৮৯ সালে ঢাকার প্রেসিডেন্ট গোল্ড কাপে ভারতীয় দলকে কোচিং করিয়েছেন। ২০০১ সালের মুম্বই সন্তোষ ট্রফিতে ছিলেন বাংলা দলের কোচ। তবে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে অর্জিত তুমুল সাফল্যের পর একমাত্র চার্চিলের হয়েই তিনি ট্রফি জিততে পেরেছেন। ২০১২-১৩ মরশুমে চার্চিলের ঘরে তিনি আই লিগ এনে দিয়েছেন।
২০১৩-১৪ মরশুমে তিনি চার্চিলের হয়ে জিতেছেন ফেড কাপ, তবে পারিবারিক কারণে দলের সঙ্গে তিনি যেতে পারেন নি। ৯১ থেকে ২০১৮ - দীর্ঘ ২৭ বছর তিনি প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। যে কৃতিত্ব খুব কম কোচেরই রয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন