ইস্টবেঙ্গল: ৩ (ক্লিটন-২, নন্দকুমার)
মোহনবাগান: ১ (হেক্টর)
Mohun Bagan Super Giant and East Bengal FC Match Report: কলিঙ্গ রাজ্যে মশাল বাহিনীর ঝড় উঠল। আর সেই ঝড়ে উড়ে গেল মোহনবাগানের বিশ্বখ্যাত দল। প্ৰথম সারির আট তারকা নেই। তবে কোটি কোটি টাকার বিদেশিরা তো রয়েছেন। তাঁদের সামনেই ওড়িশার স্টেডিয়ামে চলল মোহনবাগানকে লাঞ্ছনা করার পালা। দিমিত্রি পেত্রাতোস, হুগো বুমোস, ব্রেন্ডন হ্যামিল, হেক্টর ইউৎসে, আর্মান্দো সাদিকু তো বটেই পরে দ্বিতীয়ার্ধে নামলেন আইএসএল-এর সবথেকে দামি বিদেশি, জেসন কামিন্স। তবে ছয় বিদেশিই দেখলেন কীভাবে লাল হলুদ আগুন গ্রাস করছে তাঁদের দলকে। ক্লিটন সিলভা (Cleiton Silva) বুড়ো হাড়েও ফের ভেলকি দেখালেন। আর শুক্রবারের পর নন্দকুমারের নাম হওয়া উচিত ডার্বি-কুমার। ডুরান্ডের ডার্বির পর যিনি একদম ঠিক সময়ে গোল করে মোহনবাগানের প্রত্যাবর্তনের সমস্ত সম্ভবনা নিভিয়ে দিলেন।
ড্র করলেই সেমিফাইনাল। ম্যাচের আগেই এডভান্টেজ ছিল লাল হলুদ শিবির। তবে ক্যাপ্টেন ক্লিটন এবং কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত আগেই জানিয়েছিলেন, ড্র নয়, ছন্নছাড়া বাগানকে হারানোর লক্ষ্য নিয়েই নামছেন তাঁরা।
সেই লক্ষ্যেই টানা ৯০ মিনিট প্রেসিং ফুটবল খেলে গেলেন নন্দকুমার, সৌভিক থেকে সাউল ক্রেসপোরা। আর তাতেই কাত সবুজ মেরুন শিবির।
ম্যাচের শুরু থেকে অবশ্য যে একপেশে ফলাফল হবে, তা বোঝা যায়নি। মোহনবাগানই বরং বল পজেশন বেশি রেখে আক্রমণ করছিল লাল হলুদ বক্সে। হ্যামিল লং বলে হোক, ডান দিক থেকে কিয়ান ব্যতিব্যস্ত করছিলেন লাল হলুদ অর্ধকে। সেই চাপের কাছেই নতি স্বীকার করে ফেলে ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ। টানা আক্রমণে কর্নার কনসিড করতে হচ্ছিল রাকিপ, পারদোদের। পেত্রাতোসের সহায়তায় এভাবেই ইস্টবেঙ্গলের জালে ফ্লিক করে বল জড়িয়ে দিয়েছিলেন হেক্টর ইউৎসে।
তবে প্ৰথম গোল হজম করার মাত্র পাঁচ মিনিটের মাথাতেই ইস্টবেঙ্গল গোল পরিশোধ করে দেয়। মোহনবাগানের রক্ষণভাগের তারকারা নিজেদের অর্ধে ইস্টবেঙ্গলের এক নির্বিষ থ্রো ক্লিয়ার করতে পারেননি। আর তাতেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে যান লাল-হলুদের ব্রাজিলিয়ান বাঘ। ক্লিটনের গোলা আছড়ে পড়ে আনোয়ারের পাশ দিয়ে।
আর ৩৩ মিনিটেই ইস্টবেঙ্গল ২-১ করার মোক্ষম সুযোগ পেয়েছিল। বোরহা বক্সের বাইরে থেকে সুন্দর এক ক্রস রেখেছিলেন। সিভেরিও হেড করে সেই বল প্রায় গোলের জন্য সাজিয়ে দেন। তবে নন্দকুমার ফিনিশিং টাচ দিতে পারেননি।
বিরতির আগে এরপর বেশ কয়েকবার আক্রমণ করেও গোলের দেখা পায়নি ইস্টবেঙ্গল। তবে সংযোজিত সময়ের একদম শেষলগ্নে ইস্টবেঙ্গলের ফাঁড়া কাটে। কিয়ানের শট বক্সের মধ্যে হিজাজি হ্যান্ড বল করে বসায় পেনাল্টি পেয়েছিল মোহনবাগান। বাগানের প্রিয় দিমি প্ৰথম সুযোগে গোলও করে দেন। তবে নিয়মভাঙার জন্য পেনাল্টি রিটেক করতে হয়। আর দ্বিতীয়বারে অজি তারকার পেনাল্টি কিক আছড়ে পড়ে বারপোস্টে। রিবাউন্ড থেকে গোল করার জন্য হুগো এবং রাজ বাসফোরে এগিয়ে এলেও কাজের কাজ করতে পারেননি।
দ্বিতীয়ার্ধে জোড়া লাল কার্ড দেখতে পারত মোহনবাগান। তবে রেফারি কিছুটা সাহায্যই করেন সবুজ মেরুন শিবিরকে। রাজ বাসফোরে আগেই হলুদ কার্ড দেখে ফেলেছিলেন। দ্বিতীয়বার সিভেরিওকে হাই বুট শো করা ফাউল করলেও দ্বিতীয় ইয়েলো কার্ড দেখানোর সাহস পাননি রেফারি। তড়িঘড়ি তাঁকে তুলে রবি রানাকে নামিয়ে দেন কোচ ক্লিফোর্ড মিরান্দা।
একইভাবে প্ৰথমে একটি হলুদ কার্ড দেখে ফেলা গ্লেন মার্টিন্স সৌভিক চক্রবর্তীকে অফ দ্য বল ফাউল করেও 'বেঁচে যান'। রেফারির কাছে ক্ষমা চেয়েই মেলে রেহাই। কোচ মিরান্দা দেরি না করে গ্লেনকে তুলে নামিয়ে দেন জেমস কামিন্সকে।
রেফারির জোড়া বদন্যতার সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি বাগান। পরিবর্ত হিসেবে নামা রবি রানাই বাগানের হয়ে 'গোল' করে যান। প্রভসুখন গিলের লং বল ঠিকমত ক্লিয়ার করতে পারেননি রবি রানার। বক্সের ঠিক বাইরে থেকেই সেই লুজ বল ধরে শট নেন ক্লিটন। পোস্টে লেগে প্রতিহত হলেও রিবাউন্ড থেকে জালে বল জড়িয়ে দেন নন্দকুমার।
দ্বিতীয় গোল হজম করার পরেই মনোবল ভেঙে যায় বাগানের। কিয়ান নাসিরি, পেত্রাতোসদের সারাক্ষণ শান্ত রেখে গেলেন পারদো, নিশু কুমাররা। নিশু কুমারের কভারিং নজর কেড়ে গেল গোটা ম্যাচে।
৮০ মিনিটে ক্লিটন ৩-১ করে যান অর্শ আনোয়ারের ভুলে। বক্সের মধ্যে উড়ে আসা ক্রস হেড করে জালে রেখেছিলেন হিজাজি। তবে আনোয়ার গ্রিপ করতে পারেননি। ফস্কে যাওয়া বলই জালে জড়িয়ে দেন ক্লিটন।
ইস্টবেঙ্গল: প্রভসুখন, রাকিপ, পারদো, মাহের হিজাজি, নিশু কুমার, সাউল ক্রেসপো, সৌভিক চক্রবর্তী, বোরহা হেরেরা, নন্দকুমার, ক্লিটন সিলভা, জেভিয়ের সিভেরিও
মোহনবাগান এসজি: রাজ বাসফোরে, ব্রেন্ডন হ্যামিল, দিমিত্রি পেত্রাতোস, হুগো বুমোস, অভিষেক, কিয়ান নাসিরি, হেক্টর ইউৎসে, আর্শ আনোয়ার শেখ, গ্লেন মার্টিন্স, আশিস রাই, আর্মান্দো সাদিকু