জবি ইস্টবেঙ্গল ছেড়েছেন। সমর্থকদের আশঙ্কা ছিল জবি-র জায়গা ভরাট করা যাবে তো? বিদ্যাসাগর সিং এবার ডুরান্ডের তিন ম্যাচেই বুঝিয়ে দিলেন জবি-র জায়গা নিতে প্রস্তুত তিনি। প্রথম ম্যাচে আর্মি রেডের বিপক্ষে বিদ্যাসাগর সিংয়ের শেষ মুহূর্তের গোলে জয় নিশ্চিত হয়েছিল। জামশেদপুর ম্যাচেও তো বিস্ফোরক ফর্মে ছিলেন মণিপুরী স্ট্রাইকার। আর বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধেও ত্রাতা তিনি।
প্রথমার্ধেই অজয় ছেত্রীর গোলে পিছিয়ে পড়েছিল ইস্টবেঙ্গল। প্রথমার্ধে ছন্নছাড়া ফুটবল জমাট বাঁধল বিরতির পরে। আর দ্বিতীয়ার্ধেই জোড়া গোল করে নায়ক তিনি। পিছিয়ে থেকে শেষ পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ শেষ করল ২-১ এ জিতে। এতেই সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে ফেলল লাল-হলুদ ব্রিগেড।
জামশেদপুর এফসি-র বিপক্ষে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল হাইমে স্যান্টোস কোলাডোকে। সেই হাইমেকে এদিন প্রথম একাদশে রেখে দল সাজিয়েছিলেন কোচ আলেয়ান্দ্রো। বোরহা, কাশিম এবং হাইমেকে প্রথম একাদশে নামিয়ে বেঙ্গালুরু জয়ের পরিকল্পনা করেছিলেন স্প্যানিশ কোচ। তবে শুরুতেই ঝটকা বেঙ্গালুরুর। নিজেদের রিজার্ভ দল নিয়ে টুর্নামেন্টে খেলতে এসেছে নৌশাদ মুসার দল। এই টুর্নামেন্ট জুনিয়রদের অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্যই। সেই দলের বিপক্ষেই ১৭ মিনিটে ইস্টবেঙ্গল ০-১।
আরও পড়ুন
ঘরের মাঠে বিস্ফোরণ লাল-হলুদের! হাফডজন গোলে চূর্ণ জামশেদপুর
আলেয়ান্দ্রোকে টেনশনমুক্ত করলেন কোলাডো! সেনাদের হারাল সেই স্প্যানিশ কানেকশনই
ডান প্রান্তিক আক্রমণে লিওন অগাস্টাইন ক্রস বাড়িয়েছিলেন এডমন্ড লালরিন্ডিকাকে। ডিকা লাল-হলুদ গোলকিপারকে পরাস্ত করলেও ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। রিবাউন্ড থেকে গোল করে যান অজয় ছেত্রী। শুরুতেই গোল হজম করে হতোদ্যম হয়ে পড়েছিল লাল-হলুদ।
তবে বিরতির পরেই মাস্টারস্ট্রোক দেন কোচ আলেয়ান্দ্রো। পাসিং ফুটবলে জোর দিয়ে মাঝমাঠে লোক বাড়ান। বৈথাং হাওকিপকে তুলে বিদ্যাসাগর সিংকে নামিয়ে দেন। শুরুর ৪-৩-৩ ছক বিরতির পরে পাল্টে যায় ৪-২-২ এ। এতেই মোড় ঘুরল খেলার। সুপার-সাব বিদ্যাসাগরের পায়ে ভর করেই এল জয়। ক্রমাগত লাল-হলুদ ঝড় আক্রমণে উঠছিল। বেঙ্গালুরুর রক্ষণে আক্রমণের ঝড় তুলেছিল। অন্যদিকে, বেঙ্গালুরু আবার প্রতি আক্রমণে গোলের প্রচেষ্টা জারি রেখেছিল।
এমন আক্রমণ-পালটা আক্রমণের তোড় থেকেই ইস্টবেঙ্গলের প্রথম গোল বিদ্যাসাগর সিংয়ের। বেঙ্গালুরু বল নিয়ে ইস্টবেঙ্গলের অর্ধে উঠে গিয়েছিল। সেখান থেকে কাউন্টার অ্যাটাকে ডান প্রান্ত থেকে বল পেয়ে যখন দুর্বল ডান পায়ের ভলিতে গোল করলেন, তখন বেঙ্গালুরুর ডিফেন্ডারকে ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছেন। ৫৭ মিনিটে প্রথম গোলের পরে দ্বিতীয় গোল এল ৭৪ মিনিটে। মাঝমাঠ থেকে থ্রু বল পেয়ে দুই ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে বিদ্যাসাগরের দ্বিতীয় গোল।
এদিন জিতলেও আলেয়ান্দ্রোর কপালে অবশ্য ভাঁজ ফেলছে ব্লকার পজিশন। কাশিম আইদারা একদমই ব্যর্থ পিভট হিসেবে খেলতে। ডান প্রান্তে পিন্টু মাহাতো, ডিকাও এদিন প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ। অন্যদিকে, বেঙ্গালুরু এফসি-র রিজার্ভ দল হারলেও হৃদয় জিতে নিল। বাঙালি গোলকিপার আদিত্য পাত্র নজর কাড়লেন একাধিক ভাল সেভ করে।
তবে সব ছাপিয়ে ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকদের নয়নের মণি আপাতত জুনিয়র দল থেকে উঠে আসা বিদ্যাসাগর সিং। যিনি নিজের আবির্ভাব ঘোষণা করে দিলেন এদিনই, জোড়া গোল করে।
ইস্টবেঙ্গলঃ মাওইয়া, আশির আখতার, বোরহা গোমেজ, কমলপ্রীত, হাইমে স্যান্টোস, বৈথাং হাওকিপ, পিন্টু মাহাতো, কাসিম আইদারা, লালরিনডিকা (তনদম্বা সিং), ব্রেন্ডন
বেঙ্গালুরু এফসিঃ আদিত্য পাত্র, সাইরুয়াত কিমা, পরশ শ্রীবাস, বিশ্ব দর্জি, নওরেম রোশন সিং, নামগিয়াল ভুটিয়া, অজয় ছেত্রী, সুরেশ ওয়াংজম, লিওন অগাস্টাইন, গুরসিমরত সিং গিল