/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2021/12/Suryakumar-Yadav.jpeg)
গত কয়েক বছরে ভারতীয় ক্রিকেটে উল্কার গতিতে উত্থান ঘটেছে সূর্যকুমার যাদবের। কেকেআরের অনিয়মিত প্লেয়ার থেকে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের তারকা খচিত দলের অন্যতম বড় তারকা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তারপরে টিম ইন্ডিয়ার সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নিজের জায়গা পাকা করেছেন স্কাই। মুম্বইয়ের রিটেনশন তালিকাতেও ঠাঁই পেয়েছেন তিনি।
২০২০-তে মুম্বইকে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেন সূর্যকুমার যাদব। আর সেই সিজনেই আরসিবির বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে ধুন্ধুমার পারফরম্যান্স মেলে ধরেন তিনি। কঠিন অবস্থায় রান চেজ করতে নেমে আরসিবির বিরুদ্ধে ৪৩ বলে ৭৯ রানের ইনিংস খেলে যান তিনি। মরশুমের অন্যতম সেরা ব্যাটিং পারফরম্যান্স ছিল সেটাই। আর তারপরে সূর্যকুমারের সেই উদ্দাম সেলিব্রেশন নিমেষে ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়।
উইনিং স্ট্রোক হাঁকানোর পরে সূর্যকুমারের অভিব্যক্তি ছিল অনেকটা এরকম- "চিন্তা কোরো না, আমি রয়েছি।" সেই সময় অস্ট্রেলিয়া সফরের স্কোয়াডে সূর্যকুমারের জায়গা না পাওয়া নিয়ে বেশ ভালোরকম বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। তার মধ্যেই সূর্যকুমারের এমন ভঙ্গিতে সেলিব্রেশন নয়া আলোচনার জন্ম দেয়।
স্পোর্টসক্রীড়ায় এক সাক্ষাৎকারে সূর্যকুমার সম্প্রতি পুরোনো সেই ঘটনার উল্লেখ করেছেন। "সেই সময় আমার পরিবার বলছিল, সেটাই ছিল সাম্প্রতিককালের অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স। সেই টুর্নামেন্ট চলাকালীন সকলেই আমাকে বলছিল- তুমি রান করছ, প্রত্যেক ম্যাচে দলের জয়ে অবদান রাখছ, তবে আমরা তোমাকে ম্যাচ ফিনিশার হিসাবে দেখতে চাই।" বলেছেন সূর্যকুমার।
"আইপিএলের মাঝামাঝি সেই ইনিংস খেলেছিলাম। এখনও মনে রয়েছে, অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্য ভারতীয় দল ঘোষণার কথা ছিল। ২০১৯, ২০২০ আইপিএলে আমার পারফরম্যান্স বেশ ভাল ছিল। তাছাড়া ঘরোয়া ক্রিকেটেও নিয়মিত রান পাচ্ছিলাম।"
"আশা করেছিলাম, জাতীয় দলে ডাক পাব। আমি ডাক পেতে চলেছি- এরকম উদ্ধত মানসিকতা যদিও আমার ছিল না। তবে মনের মধ্যে কোথাও ঘোরাফেরা করছিল- দীর্ঘ সময়ের শেষে প্রতীক্ষার অবসান হয়ত ঘটতে চলেছে। তবে স্কোয়াড ঘোষণার পরে যখন নিজের নাম খুঁজে পেলাম না, বেশ হতাশ হই। আমার তরফ থেকে চেষ্টার খামতি ছিল না। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বিচে ঘুরতে যেতাম, কয়েকটা প্র্যাকটিস সেশনও মিস করি। সেই সময় সবসময়েই জাতীয় দলের কথা ঘোরাফেরা করছিল মাথায়।"
জাতীয় দলে ফের একবার ব্রাত্য হওয়ার পরে সূর্যকুমারের পাশে দাঁড়ান মুম্বইয়ের হেড কোচ মাহেলা জয়াবর্ধনে এবং বোলিং কোচ জাহির খান। দুজনেই তাঁকে আরসিবি ম্যাচে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে বলেন। স্কাই জানিয়েছেন, "সেই সময় একদিন মাহেলা এবং জ্যাক (জাহির খান) আমার কাছে এসে বলেন, আরসিবি ম্যাচই নিজেকে চেনানোর সেরা সুযোগ। আমি মুখে সেই চ্যালেঞ্জ নিতে রাজি হয়ে গেলেও আমি হতাশায় ভেঙে পড়েছিলাম। সবাই আমার কথা বললেও আমি ভবিষ্যতের জন্য সন্দিগ্ধ হয়ে পড়ি।"
এরপরেই ম্যাচে সেই কুখ্যাত সেলিব্রেশন। তবে সেলিব্রেশন নিয়ে আগাম কোনও পরিকল্পনা ছিল না তাঁর, এমনটাই জানালেন তিনি, "আমরা প্ৰথমে বোলিং করি। জয়ের জন্য আমাদের সামনে ১৬৫ রানের টার্গেট দেয় আরসিবি। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে ব্যাট করতে নামি। মনে মনে স্রেফ একটাই কথা বলছিলাম- নিজেকে চেনানোর এটাই সেরা সুযোগ। তখনই নিজের টার্গেট সেট করে নিই। অপরাজিত থেকে দলকে জেতাতে হবে। শুরুতে সতর্ক থাকলেও পরে চাহাল, ডেল স্টেইনকে টার্গেট করি। ম্যাচ জেতানোর পরে গ্যালারির সেই অংশে তাকিয়ে ছিলাম, যেখানে আমার পরিবারের বসে থাকার কথা। সমস্ত কিছুই স্বাভাবিকভাবে এসেছিল। আগাম পরিকল্পনা ছাড়া। যা ঘটছিল, পুরোটাই ছিল স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়ায়।"
শেষমেষ সমস্ত বাধা পেরিয়ে ইংল্যান্ড সিরিজে টি২০-তে অভিষেক ঘটে তারকা ক্রিকেটারের। আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের অভিষেকেই জোফ্রা আর্চারের বলে ছক্কা হাঁকান, প্ৰথম ইনিংসেই করেন হাফসেঞ্চুরি। স্বপ্নের অভিষেক ঘটিয়ে তবেই শান্ত হন তারকা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন