মহেন্দ্র সিং ধোনি এবং সুশান্ত সিং রাজপুত। একজন রুপোলি পর্দার আইকন। অন্যজন উঠতি অভিনেতা। মহাতারকার বায়োপিকে অভিনয় করার পরেই কেরিয়ারের সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে যান তিনি। নিজেও হয়ে ওঠেন আইকন। আসলে সুশান্ত সিংয়ের মধ্যেও ছিল ধোনির একটুকরো।
রবিবার বান্দ্রার বাড়িতে আত্মহত্যা করার পরেই ধোনির একলা থাকতে চাওয়ার পিছনের মিল খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে। ধোনির বায়োপিক সদ্য প্রয়াত ইরফান খানের 'পান সিং তোমার' এর মত সিনেম্যাটিক মাস্টারপিস ছিল না। তবে নীরজ পাণ্ডে পরিচালিত এই ছবি কারোর অপছন্দেরও ছিল না। ধোনির সৌজন্যেই সুশান্ত সিংয়ের নাম প্রত্যেক ভারতীয়র কাছে পরিচিতি পেয়েছিল।
স্কুল ক্রিকেট থেকে সেই বেড়ে ওঠা, খড়গপুড়ে টেনিস বলে খেপ খেলা, নির্বাচনে সুযোগ না পাওয়ার পর ভেঙে পড়া, প্রাক্তন প্রেমিকার মৃত্যু, সাক্ষীর সঙ্গে রোমান্স! ধোনিকে আসলে বড় পর্দায় বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছিলেন সুশান্ত। তিনিই জনগণকে ধোনির ব্যক্তিগত জীবনে উকি মারার সুযোগটা করে দিয়েছিলেন। সেই একই ম্যানারিজম, সেই হেলিকপ্টার শট! ধোনিকে রুপোলি পর্দায় দারুণ ভাবে ফুটিয়ে তোলেন তিনি।
শেষ অভিনীত ছবি ছিছোরে! এই সিনেমার ক্লাইম্যাক্স এ ক্রিকেট খেলার একটা দৃশ্য রয়েছে। সেই দৃশ্য দেখে ধোনি বলে দিয়েছিলেন, সুশান্ত এতটাই নিখুঁত খেলে ও যে কোনো রঞ্জি টিমে খেলতে পারে। নিজেই ছবির প্রমোশনে জানান সুশান্ত।
অভিষেক কাপুরের 'কাই পো চে' সিনেমায় আলির চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছিলেন সেই দিগ্বিজয় দেশমুখ জানাচ্ছিলেন, তিনি এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না যে সুশান্ত নেই। "এই মুহুর্তে কী বলা উচিত বুঝতে পারছি না। সুশান্ত ভাই দারুণ মনের মানুষ ছিলেন। কাই পো চে সিনেমার ছয় মাস শুটিংয়ে খুব কাছ থেকে দেখেছি ওঁকে। ও কিন্তু ভালো ক্রিকেটার ছিল। শ্যুটিং বাদ দিয়েও আমরা ক্রিকেট খেলতাম। আমি বাচ্চা ছিলাম। আমাকে এন্টারটেইন করার জন্য ও ক্রিকেট খেলত।"
সেই সিনেমায় একজন ব্যর্থ ক্রিকেট কোচের ভূমিকায় অভিনয় করেন সুশান্ত। দিগ্বিজয় সেই স্মৃতি ফিরিয়ে এনে বলছিলেন, "সুশান্ত ভাই আমাকে জিজ্ঞাসা করত, বড় হয়ে আমি কী হতে চাই। আমি বলতাম, সিনেমার মতোই ক্রিকেটার হতে চাই। আরো বলতাম, ক্রিকেটে যদি কিছু করতে পারি, তাহলেই তোমার কাছে দেখা করব। আইপিএলে এবার মুম্বাই আমাকে নিয়েছিল। ভেবেছিলাম আইপিএল একবার শুরু হলে মুম্বইতেই ওর সঙ্গে দেখা করব। সেটা আর হল না।"
জীবনের শেষ সিনেমায় একজন মনোবিদের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। যেখানে তাঁকে দেখা গিয়েছিল আত্মহত্যা প্রবণতা থেকে টিনএজারদের পরামর্শ দেওয়া। তাঁকেই সেই আত্ম হত্যা করতে হল। জীবনের আয়রনি এটাই।