ইংলিশ চ্যানেলের পর এবার মার্কিন মুলুকের মালোকাই চ্যানেল জয় করে ইতিহাস সৃষ্টি করলেন বাংলার জলকন্যা সায়নী দাস। শুধু ভারত নয়, এশিয়া মহাদেশের প্ৰথম মহিলা সাঁতারু হিসাবে সায়নী মোলোকাই চ্যানেল জয়ের নজির সৃষ্টি করলেন। জয়ের পর সেখানেই ভারতের জাতীয় পতাকা তুলে ধরেন সায়নী।
শুক্রবার সকালে সুদূর মার্কিন মুলক থেকে ফোন করে মেয়ের সেই ইতিহাস সৃষ্টির কথাই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস কে জানান সায়নীর বাবা তথা কোচ রাধেশ্যাম দাস। মহিলা সাঁতারু হিসাবে সায়নী এই নিয়ে চার চারটি চ্যানেল জয়ের দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারায় উচ্ছ্বসিত সায়নীর পরিবার ও দেশের সাঁতারু মহল।
আরও পড়ুন: গয়না বন্ধক দিলেন বাবা-মা! হুগলির মেয়ে বিশ্বজয় করতে চললেন ফ্রান্সে
সায়নীর বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের কালনা শহরের বারুই পাড়ায়। ছোট বয়স থেকেই বাবা রাধেশ্যাম দাসের হাত ধরে সাঁতারে হাতে খড়ি। তার পর থেকে কঠিন অনুশীলনের মাধ্যমে সায়নী নিজেকে কার্যত জলকন্যা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। রটনেষ্ট ও ক্যাটলিনা চ্যানেল জয়ের পর ২০১৭ সালে সায়নী ইংলিশ চ্যানেল জয়ের দৃষ্টান্ত তৈরি করেছিলেন। আর এবার সায়নী মোলোকাই চ্যানেল জয় করে ইতিহাস সৃষ্টি করলেন।
ইতিহাস গড়ে গর্বের হাসি সায়নীর (ছবি: প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়)
রাধেশ্যাম দাস জানিয়েছেন, "মোলোকাই চ্যানেল জয়ের স্বপ্ন নিয়ে সায়নী টানা দু’বছর কঠিন অনুশীলন জারি রেখেছিল। তারপর মোলোকাই চ্যানেল জয়ের লক্ষ্যে ২৯ শে মার্চ মেয়ে সায়নীকে নিয়ে তিনি মার্কিন মুলুকে পা রাখেন। এপ্রিল মাসের প্রথম দু’সপ্তাহের মধ্যে মোলোকাইয়ের জলে নামার কথা থাকলেও খারাপ আবহাওয়ার কারণে সায়নী জলে নামতে পারেননি। ওই সময়ে হাওয়ার গতিবেগ প্রতি ঘন্টায় ৩৫-৪৫ কিমি থাকায় জলের ঢেউ ২ মিটারের উপরে থাকছিল। সেই কারণে মালোকাইয়ের জলে নামা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।
সায়নীর পাইলটও ভালো আবহাওয়ার জন্য একটু অপেক্ষা করার পরামর্শ দেন। সায়নী তাঁর পাইলটের বক্তব্য মেনে নিয়ে যাত্রা স্থগিত করেন। কারণ ২০১৭ সালে ইংলিশ চ্যানেলে নামার আগে সায়নীকে এই ধরনের প্রতিকূল আবহাওয়া জনিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল।
সায়নীর সঙ্গে মার্কিন মুলুকে গিয়েছেন বাবা রাধেশ্যাম ও মা রূপালি। (ছবি: প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়)
রাধেশ্যাম বাবু আরও জানান, “আবহাওয়া প্রতিকুল থাকায় মোলোকাইয়ের জলে সায়নী নামতে না পারলেও অনুশীলন বন্ধ করে নি। আমেরিকার হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে টানা বাইশ দিন থাকাকালীনও সায়নী কঠিন অনুশীলনে চালিয়ে যান। মালোকাই চ্যানেল সুইমিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট বিল গোডিং সায়নীকে দায়িত্ব নিয়ে অনুশীলন করান। আর পাইলট ম্যাথিউ বাকম্যান আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতির উপর নজর রেখে চলেন।
পরে অনুকুল আবহাওয়া পরিস্থিতি তৈরি হলে ২৮ এপ্রিল ভারতীয় সময় সকাল ১০ টা নগাদ সায়নী মোলোকাইয়ের জলে নামেন। তার পর থেকে টানা ১৯ ঘন্টার বেশী সময় সাঁতার কেটে সায়নী মালোকাই চ্যানেল জয়ের লক্ষে পৌঁছে যান বলে রাধেশ্যাম বাবু জানিয়েছেন।"
সায়নী জানিয়েছেন, বরাবরই মোলোকাই চ্যানেল জয় করার লক্ষ্য ছিল তাঁর। অবশেষে সেই কৃতিত্ব তিনি অর্জন করেছেন। একই সঙ্গে সায়নী জানান, এই জয় তিনি উৎসর্গ করেছেন দেশের সকল ক্রীড়াপ্রেমী মহিলাদের।