আগামী মাসেই টি২০ বিশ্বকাপ শুরু হতে চলেছে বেঙ্গালুরুতে। ভারতের হয়ে খেলতে নামবে বাংলারই দৃষ্টিহীন এক প্রতিভাবান অলরাউন্ডার। প্রথম লাইনটা ঠিক থাকলেও, পরের লাইনটা পড়ে নিশ্চয় হকচকিয়ে গিয়েছেন! তবে বলে রাখি এটাই সত্যি।
আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে দৃষ্টিহীনদের টি-২০ ক্রিকেট বিশ্বকাপ। আমাদের দেশে প্রধান খেলা বলতে ক্রিকেট এবং ফুটবলকেই বোঝেন অধিকাংশ ব্যক্তি। এমন সময়ে দৃষ্টিহীনদের ক্রিকেট বিশ্বকাপের ব্যাপারে খোঁজ না রাখাটাই স্বাভাবিক।
<দৃষ্টিহীনদের টি-২০ বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছেন বাংলার শুভেন্দু মাহাতো (এক্সপ্রেস ফটো শশী ঘোষ)>
এই বিশ্বকাপে ভারত সহ আরও সাতটি দেশের দৃষ্টিহীন খেলোয়াড়রা অংশগ্রহণ করছেন।
<এক দুর্ঘটনায় দৃষ্টিশক্তি হারান শুভেন্দু (এক্সপ্রেস ফটো শশী ঘোষ)>
দু চোখ জুড়ে অন্ধকার তাও স্বপ্ন দেখছিল আলোর দিশার। শেষমেশ অন্ধকারে দেখা স্বপ্নেরাই ডানা মেলছে শুভেন্দুর। ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ফর ব্লাইন্ড অফ ইন্ডিয়ার হয়ে তাঁর মাঠে নামা এখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।
পুরো নাম শুভেন্দু মাহাতো। বছর পঁচিশের এই তরুণের বাড়ি ঝাড়গ্রাম জেলার গড়শালবনি এলাকার কৈমা গ্রামে। দু চোখে দেখতে পাননা। চোখে দেখতে না পেলেও প্রতিবন্ধকতাকে নিজের স্বপ্নের পথে বাধা হতে দেয়নি।
<দুর্ঘটনায় দৃষ্টিশক্তি হারালেও নিজের স্বপ্নপূরণের পথে অন্তরায় হতে দেননি প্রতিবন্ধকতাকে (এক্সপ্রেস ফটো শশী ঘোষ)>
হাজার অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে চলেছেন এই যুবক। শুধু ঝাড়গ্রাম নয়, রাজ্যের মধ্যে তিনিই একমাত্র ক্রিকেটার যিনি এই গৌরব অর্জন করতে চলেছেন।
একজন জাতীয় দলের ক্রিকেটার মানেই সব কিছুর সুযোগ সুবিধে পাওয়ার সমতুল্য। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ভারতে প্যারা-এথলিটরা অনেক পিছিয়ে এই বিষয়ে। দেশের হয়ে জাতীয় স্তরে খেলার পরেও তারা কোনরকম প্রচারের আলোতেই থাকেন না।
<বাংলার একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে আসন্ন দৃষ্টিহীনদের বিশ্বকাপে অংশ নিতে চলেছেন শুভেন্দু (এক্সপ্রেস ফটো শশী ঘোষ)>
স্পন্সারশিপ নেই বললেই চলে। তাঁরা আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতনই জীবনযাপন করেন। খেলার সরঞ্জাম কিনতে প্রায়ই হিমশিম খেতে হয়। শুভেন্দুর কথায়, জেনারেল ক্রিকেট অনেক বেশী জনপ্রিয়, সেখানে ব্লাইন্ড ক্রিকেট সম্বন্ধে অনেকেই জানেন না।
আমাদের সকলের প্রচেষ্টা এই ব্লাইন্ড ক্রিকেটকে আরও উঁচু জায়গায় নিয়ে যাওয়া। যতদিন সাফল্য না পাচ্ছি ততদিন পর্যন্ত পরিশ্রম করে যেতে হবে।
<প্রবল আর্থিক অনটনেও খেলার প্রতি প্যাশন বিন্দুমাত্র কমেনি শুভেন্দুর (এক্সপ্রেস ফটো শশী ঘোষ)>
বাবা বুদ্ধেশ্বর মাহাতো চাষবাস করেন এবং মা দিপালী মাহাতো অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। জন্ম থেকে অন্ধ ছিলেন না শুভেন্দু।
আচমকা ২০০১ সালে একটি দুর্ঘটনায় শুভেন্দুর জীবনের মোড় ঘুরে যায়। তাঁর দুটি চোখে আঘাত লাগে। দৃষ্টিশক্তি হারাতে থাকেন তিনি। চিকিৎসা করিয়েও সুফল হয়নি। উল্টে ২০০৫ সালে তিনি পুরোপুরি দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলেন।
<খেলার পাশাপাশি পড়াশুনায় জোরকদমে চালিয়ে গিয়েছেন শুভেন্দু (এক্সপ্রেস ফটো শশী ঘোষ)>
তবে জীবনের যুদ্ধে হার না মানা শুভেন্দু লড়াই জারি রাখেন। হলদিয়ার চৈতন্যপুর বিবেকানন্দ মিশন আশ্রমে থেকে পড়াশুনার পাশাপাশি ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন। জীবনের মোড় ঘুরতে শুরু করে কলেজ থেকেই। ২০১৪ সালে প্রথম সুযোগ আসে বাংলা দলের হয়ে খেলার।
এরপর আট বছর রাজ্যের দলের হয়ে খেলেছেন। দৃষ্টিহীনদের টি-২০ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর ক্রিকেটার যুবরাজ সিং। বিশ্বকাপের জন্যে দল বাছাই শুরু হয়েছিল এই বছরের জুন মাস থেকে।
<বাইশ গজে যাবতীয় স্বপ্ন পূরণ করতে ব্যাটে-বলে আস্থা রেখেছেন (এক্সপ্রেস ফটো শশী ঘোষ)>
৫৬ জন ক্রিকেটার নিয়ে বেঙ্গালুরুতে দুমাসের প্রশিক্ষণ শেষে ২৯ জন বাছাই করা হয়। সেপ্টেম্বরে ভোপালে ১২ দিন ক্যাম্প করার পর ১৭ জনের দল তৈরি করা হয়।
শুভেন্দু চোখে একেবারেই দেখতে পান না। উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার পর রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনো শেষ করে বর্তমানে নদীয়ার রানাঘাটের পায়রাডাঙ্গায় বিএড পরছেন।
<জীবনের যুদ্ধে হার না মানা সেনা শুভেন্দু স্বপ্নপূরণের অন্য নাম (এক্সপ্রেস ফটো শশী ঘোষ)>
পায়রাডাঙ্গারই দৃষ্টিহীন ছাত্রাবাস তপোবনে থেকেই পড়াশুনা আর ক্রিকেট প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী ৬ থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত দৃষ্টিহীনদের টি২০ ক্রিকেট বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা শুরু হচ্ছে।
প্রতিবেশী দেশ ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে।