রবিউল ইসলাম বিদ্যুৎ, ঢাকা
এমন সুযোগ আর পাবে না বাংলাদেশ!
সকালে ঘুম থেকে একটু দেরিতে যারা উঠেছিলেন তারা দক্ষিণ আফ্রিকা-নেদারল্যান্ডস ম্যাচের স্কোরকার্ড দেখে নিশ্চিতভাবেই আঁতকে উঠেছিলেন! ভুল দেখছি না তো! নেদারল্যান্ডস যে আস্তে আস্তে জয়ের দিকে এগোচ্ছে। এও কি সম্ভব! আইসিসির সহযোগী এক দেশের সঙ্গে হেরে যাবে ক্রিকেটের কুলীন দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা! যেটা কেউ ভাবেননি সেটাই হলো। শেষ পর্যন্ত নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ১৩ রানে হেরে বসল দক্ষিণ আফ্রিকা।
আর বাংলাদেশের ভক্ত-সমর্থকরাও যেন গা ঝাড়া দিয়ে উঠলেন। একটা ম্যাচই তো! পাকিস্তানকে হারাতে পারলেই তো রাস্তা পরিষ্কার1। আশা সঞ্চারিত হচ্ছিল খুব বেশি! আগের ম্যাচেই যে সাকিব আল হাসানরা ভারতের বিরুদ্ধে জিততে জিততে হেরে গিয়েছেন! পাকিস্তান তো ভারতের মতো অতটা শক্তিশালী নয়! তাই আশা করতে দোষ কি! কিন্তু এই দলটা যে টি-২০’র ভাষা এখনো শিখতে পারেনি। এই দলে যে দু-একজন ছাড়া পারফরমার নেই সেটা কার্যত সমর্থকরা ভুলেই গিয়েছিলেন।
আগের ম্যাচে লিটন দাসের ২৭ বলে ৬০ করা দেখে ধরেই নিয়েছিলাম প্রতি ম্যাচেই কেউ না কেউ এরকম একটা ইনিংস খেলে দিয়ে যাবেন! এই ধারণা ভুল প্রমাণ করতে সাকিবরা খুব বেশি সময় নিলেন না!
আরও পড়ুন: সাকিবদের মনের ডাক্তার দেখানো উচিত! পাকিস্তান ম্যাচের পরেই বাংলাদেশকে সপাটে আক্রমণ আক্রমের
১০.৩ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ স্কোরবোর্ডে জমা করেছিল ৭৩ রান। সেখান থেকে মুহূর্তেই বাংলাদেশের স্কোর হয়ে গেল ৩ উইকেটে ৭৩। পরের ৯.৩ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ দল তুলতে পেরেছে মাত্র ৫৪ রান! শেষ দিকে এই মন্থর গতির রান তোলাই বাংলাদেশের ৫ উইকেটে হারার বড় কারণ। শুরুর ছন্দ ধরে এগোতে পারলে অনায়াসেই স্কোরটা দেড়শ ছাড়িয়ে যেত। সেটা হয়নি ব্যাটারদের নিদারুণ ব্যর্থতায়।
তবে এর মধ্যে সাকিব আল হাসানের বিতর্কিত এলবিডব্লিউও রয়েছে। শাদাব খানের করা ১১তম ওভারের পঞ্চম বলটি একটু বেরিয়ে এসে খেলতে চেয়েছিলেন সাকিব। কিন্তু বল তার ব্যাট ছুঁয়ে বুটে লাগে। পাকিস্তানি ফিল্ডারদের আবেদনে সাড়া দিয়ে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার আন্ড্রিয়ান হোল্ডস্টোক। সঙ্গেসঙ্গেই রিভিউ চান সাকিব। টিভি রিপ্লেতে পরিস্কার দেখা গিয়েছে, সাকিবের ব্যাট পিচ স্পর্শ করার আগে বল ব্যাট ছুঁয়ে বুটে লেগেছে। বারকয়েক দেখার পরেও জিম্বাবোয়ান আম্পায়ার ল্যাংটন রুসেরো ফিল্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই বহাল রাখলেন। সাকিব এই আউট মানতেই পারছিলেন না। মাঠেই আম্পায়ারদের সাথে কথা বলেন। ড্রেসিংরুমে ফিরেও সাকিব অসন্তোষ প্রকাশ করেন। শাদাবের ওই ওভারেই রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে আউট হন সৌম্য সরকার।
আরও পড়ুন: ভারতের পর পাকিস্তান ম্যাচেও নাকি অন্যায়ের শিকার! সাকিবের বিতর্কিত আউট ঘিরে তোলপাড় বাংলাদেশ
আফিফ হোসেনও সেট হয়েও ২০ বলে ২৪ রানের বেশি করতে পারেননি। তবে যার নায়ক হওয়ার কথা ছিল সেই নাজমুল হোসেন শান্ত ৪৮ বলে খেলেছেন ৫৪ রানের ইনিংস। পরে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে সাকিব বলেছেন,“ ইনিংসের মাঝপথে ৭০ রানে আমাদের ১ বা ২ উইকেট ছিল। আমরা ১৪৫-১৫০ রানের মতো করতে চেয়েছিলাম। এই পিচে সেটা ভালো একটা স্কোর হতো। দক্ষিণ আফ্রিকা-নেদারল্যান্ডসের প্রথম ম্যাচ দেখেছি। ইনিংসেরর পরের ১০ ওভারে রান করা কঠিন। সবসময়ই জানতাম নতুন ব্যাটসম্যানদের জন্য কাজটা কঠিন হবে। তাই সেটা হওয়া ব্যাটসম্যানদের শেষ অবধি থাকা দরকার ছিল। যেটা হয়নি।”
এখানেই শান্ত নিজের ইনিংসটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। ৪৮ বল মানে ৮ ওভার। ৮ ওভারে ব্যাট করে ৮০ না হোক অন্তত ৭০ বা তার বেশি রান করা উচিৎ ছিল শান্তর। আগের ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ৫ রানে হেরেছিল। সেই ম্যাচে ২৫ বলে ২১ রান করেছিলেন শান্ত। টি২০ তে বলের চেয়ে রান কম করা অপরাধের মধ্যে পড়ে। সেই কাজটি তিনি পাকিস্তান ম্যাচেও করলেন। এখানে একাই ৮ ওভার খেললেন, রান করলেন বলের চেয়ে মাত্র ৬ রান বেশি! শান্ত তাহলে কোথায় ইমপ্যাক্ট ফেলছেন!
বাবর আজম-মোহাম্মদ রিজওয়ানরা জানতেন ২০ ওভার উইকেটে কাটিয়ে দিতে পারলে ১২৭ পেরিয়ে যাওয়া কঠিন কিছু নয়। তাই হয়েছেও। বাবর-রিজওয়ানরাও বাংলাদেশি বোলারদের তেড়েফুড়ে খেলেননি। তারা এগিয়েছেন হিসাব করে। যেটা বাংলাদেশ ভারত ম্যাচে করতে পারেনি। বাবর-রিজওয়ানরা মন্থর গতিতে ব্যাট করায় একসময় বাংলাদেশের সামনে জয়ের স্বপ্ন উঁকি দিয়েছিল। কিন্তু মিডল অর্ডারে মহম্মদ হ্যারিস ১৮ বলে ৩১ এবং শান মাসুদ অপরাজিত ১৪ বলে ২৪ রান করে ১১ বল হাতে রেখেই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন।
আরও পড়ুন: ভারতের সঙ্গে সেমিতে পাকিস্তানই! শাহিন আফ্রিদির পেসে হড়কে গেল বাংলা টাইগাররা
পাকিস্তান ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীরাম শ্রীধরণ বলেছিলেন, "বাংলাদেশের এটাই সেরা বিশ্বকাপ। ছেলেরা গর্ব করতে পারে।" আসলেও কি এটাই বাংলাদেশের সেরা বিশ্বকাপ? বাংলাদেশ কাদের হারিয়েছে? বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডস প্রথম ম্যাচে হেরে গিয়েছে ৯ রানে। মনে রাখতে হবে নেদারল্যান্ডস আইসিসির সহযোগী দেশ। কেউ যদি বলেন তারা তো জিম্বাবোয়ে-দক্ষিণ আফ্রিকাকেও হারিয়েছে। তা হারাতেই পারে। টি২০তে দলগুলোর মধ্যে ব্যবধানটা এখন অনেক কমে গিয়েছে। তাই নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে গর্ব করার কিছু নেই।
আর জিম্বাবোয়ে? গত দেড় যুগে জিম্বাবোয়ে বাংলাদেশের কাছে পাত্তাই পায়নি। সেই জিম্বাবোয়ে এগিয়ে গিয়েছে। বিশ্বকাপে তারা পাকিস্তানকে হারিয়েছে ১ রানে। জিম্বাবুয়েকে বাংলাদেশ হারিয়েছে ৩ রানে। এই জয় নিয়ে বাংলাদেশ গর্ব করতে পারে? এই দুই জয়ের বিপরীতে ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দল যে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলেছে সেটাই বরং গোটা ক্রিকেট দুনিয়ায় প্রশংসা কুড়িয়েছে। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার এতবছর পরে এসে যদি নেদারল্যান্ডস-জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে জয় নিয়ে বুক ফোলাতে হয় তাহলে বুঝতে হবে বাংলাদেশের ক্রিকেট পিছিয়ে গিয়েছে!