ভারত: ২০৫/৫
অস্ট্রেলিয়া: ১৮১/৭
ICC Men's T20 World Cup 2024 Super 8 Match Report India vs Australia: নভেম্বরের সেই রাত ঘুমোতে পারেনি গোটা দেশ। স্বপ্নভঙ্গের সাক্ষী থেকেছিল গোটা দেশ। ট্র্যাভিস হেড একা ব্যাট হাতে নির্দয়ভাবে ভারতের স্বপ্নকে খুন করে গিয়েছিলেন।
ঠিক সাত মাস পরে সেই বিশ্বকাপের মঞ্চেই প্রতিশোধ নিল ভারত। একেবারে ল্যাজেগোবরে হারিয়ে। তুলনা অবশ্য অবান্তর। ভারত সেবার হেরে বসেছিল একদম বিশ্বকাপ ফাইনালে। আর সোমবারের লড়াই হল সুপার-৮ পর্বে। নকআউট ম্যাচেও নয়। ভারতের কাছে হারলেও সেমিতে পৌঁছনোর সমীকরণ মজুত ছিল। কিন্তু অজিদের জিততেই হত।
সেই ম্যাচেই ভারত অস্ট্রেলিয়াকে দুরমুশ করে হারাল ২৪ রানে। অস্ট্রেলিয়াকে কার্যত ছিটকে দিল বিশ্বকাপ থেকে। সেই সঙ্গে সুপার-৮'এ অপরাজিত থেকে সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল ভারত।
অস্ট্রেলিয়ার নেমেসিস হয়ে ধরা দিলেন ক্যাপ্টেন রোহিত। ম্যাচের প্ৰথম বল থেকেই মারমার কাটকাট ব্যাটিং। সেই ব্যাটিংয়েই ধ্বংস হয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া।
রোহিতের মতই ঝড় তুলেছিলেন ট্র্যাভিস হেড। ভারতের নেমেসিস তিনিও। ভারতকে পেলেই জ্বলে ওঠেন। ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ, বিশ্বকাপের ফাইনালের রিপিট টেলিকাস্ট হাজির হয়েছিল তাঁর ব্যাটে।
হার্দিক পান্ডিয়া, অক্ষর প্যাটেল, এমনকি জসপ্রীত বুমরাকে পর্যন্ত একটা সময় অসহায় লাগছিল ট্র্যাভিস হেডের তান্ডবের সময়। ওয়ার্নারকে প্ৰথম ওভারেই ফেরত পাঠান অর্শদীপ। তারপর মার্শ (২৮ বলে ৩৭) এবং হেড (৪৩ বলে ৭৬) মিলে নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছিলেন ভারতীয় বোলারদের ওপর।
দুজনে মিলে ৮১ রানের পার্টনারশিপে লন্ডভন্ড করে দিয়েছিলেন। মার্শ দুবার জীবন পেয়েছিলেন পন্থ এবং অর্শদীপের হাতে। তবে নিখুঁত খেলছিলেন হেড। চার-ছক্কার ফুলঝুরিতে ভারতের ২০৫ রানের স্কোরও ভীষণ কম মনে হচ্ছিল।
মার্শের উইকেট যতটা কুলদীপের। ঠিক ততটাই অক্ষরের। বাউন্ডারি লাইনের ধারে যে ক্যাচ অক্ষর নিলেন নিখুঁত স্পট জাম্প করে, তা নির্দ্বিধায় চলতি বিশ্বকাপের সেরা ক্যাচ।
মার্শ ফেরার পর ভারতীয় বোলারদের পিটুনির দায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন ম্যাক্সওয়েল (১২ বলে ২০)। রিভার্স সুইপ হাঁকিয়ে হাঁকিয়ে অক্ষরদের লাইন-লেন্থ গুবলেট করে দিয়েছিলেন ম্যাড ম্যাক্স।
১২ ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়া দাঁড়িয়েছিল ১২৫-এ। সেই সময়ে উইন প্রেডিক্টরে অস্ট্রেলিয়াকে ৬০ শতাংশ জয়ের সম্ভাবনা দিয়ে রাখা হয়েছিল। হেড-ম্যাক্সওয়েলরা যে তান্ডব চালাচ্ছিলেন পুরো ২০ ওভার খেলা গড়াবে কিনা, তা নিয়েই সংশয় ছিল।
তবে ম্যাচের মোড় ঘুরল ১৩ তম ওভারে। সেই ওভারে অক্ষর দিলেন মাত্র ৩ রান। এরপরেও আস্কিং রেট মাথায় চেপে বসায় ব্যাট ঘোরাতেই হত ম্যাক্সওয়েল-হেডকে। কুলদীপ এগিয়ে স্টেপ আউট করে এই চাপের মুখেই শেষমেশ বোল্ড হন ম্যাক্সওয়েল। ১৫তম ওভারে এসে অক্ষর তুলে নেন স্টোইনিসকে।
আরও পড়ুন: বিশ্বকাপে জায়গা পাননি, বিশ্বকাপের পর তাঁকেই টিম ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেন করল জয় শাহের BCCI
তখনও ক্রিজে টিকে ট্র্যাভিস হেড। তাঁকে ডেথ ওভারে ফেরালেন বুমরা। এরপরে আর সম্ভব ছিল না। ১৩-১৬ এই চার ওভারে কুলদীপ-অক্ষর-অর্শদীপ মাত্র ২৩ রান খরচ করে ২ উইকেট তুলে নেন। এই চার ওভারের স্পেল-ই অজি ব্যাটিংয়ের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়াল। এরপরে ডেথ ওভারে বুমরার সামনে দাঁড়ানোর কথা নয়। তা হয়-ওনি।
ভারতের ইনিংসের পুরোটাই ছিল রোহিত-ময়। কেরিয়ারের সেরা টি২০ ইনিংস যেন বরাদ্দ রেখেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার জন্যই। প্রতিশোধের আগুনে পোড়া এই ইনিংস। মাত্র ৮ রানের জন্য শতরানের মুখ দেখা হল না হিটম্যানের। যাঁর ওপর তিনি চড়াও হয়েছিলেন সেই মিচেল স্টার্ক-ই তাঁকে শেষমেশ ফেরান।
কোনও অজি বোলারকেই রেয়াত করেননি রোহিত। ৪১ বলে ৯২ রানের ইনিংস রোহিত হাঁকান সাত বাউন্ডারি, ৮ ছক্কা। কোহলি শুরুতেই আউট হয়ে গিয়েছিলেন হ্যাজেলউডকে হাঁকাতে গিয়ে।
কোহলি আউট হয়ে যাওয়ার পরেই রোহিত স্টার্কের দ্বিতীয় ওভারে চড়াও হন। ২৯ রান তোলেন চার ছক্কা, এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে। টি২০ আন্তর্জাতিকে সেটাই ছিল স্টার্কের সবথেকে খরুচে ওভার।
রোহিতের ফিফটি এসেছিল মাত্র ১৯ বলে। টি২০ বিশ্বকাপে ভারতীয়দের মধ্যে রোহিতের থেকে দ্রুততম হাফসেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন একমাত্র যুবরাজ সিং (১২ বলে, ২০০৭-এ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে) এবং কেএল রাহুল (১৮ বলে ২০২১-এ স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে)।
রোহিত হাফসেঞ্চুরির স্টেশনে পৌঁছনোর পরেই আউট হয়ে যান ঋষভ পন্থ। তবে তাতে তাঁর খেলায় রাশ পড়েনি। রোহিত ফিরে যাওয়ার পর ভারতীয় ইনিংসের হাল ধরেন সূর্যকুমার যাদব এবং শিভম দুবে। তাঁদের জুটিতে ৩২ রান যোগ হয়। সূর্যকুমার ওয়াইড লেন্থের বল তাড়া করে ম্যাথু ওয়েডের হাতে ক্যাচ তুলে আউট হন তিনি।
এরপরে হার্দিক-শিভম দুবে (২২ বলে ২৮) মিলে ভারতের স্কোর ২০০ পার করিয়ে দেন। ৩৫ রান যোগ করেন দুজনে। হার্দিক ১৭ বলে ২৭ করে দলকে ফের একবার ডেথ ওভারে ভরসা জোগালেন।