ভারত: ১৯৬/৫
বাংলাদেশ: ১৪৬/৮
ICC Men's T20 World Cup 2024 Match Report, India vs Bangladesh: ইদানীং ভারত বনাম বাংলাদেশ ম্যাচে উত্তেজনায়, আলোচনায় ছাড়িয়ে যাচ্ছে ভারত-পাক দ্বৈরথকেও। দুই দলের শক্তি-সামর্থ্যে ফারাক যতই থাকুক না কেন, সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে তা ভয়ঙ্কর আগ্রাসী রূপ নিয়ে নিচ্ছে।
বাইশ গজের বাইরে দুই প্রতিবেশী দলের ক্রিকেটীয় লড়াই ঘিরে যতই আগুন দেখে থাকুক না কেন, শনিবার ভারত আবার-ও বোঝাল দুই দলের শক্তিতে ফারাক আসমান জমিনে।
এই বাংলাদেশ লড়াই দিতে পারে। তবে এটুকুই। ভারতকে হারানোর মত পরাশক্তি হতে এখনও বহু পথ হাঁটতে হবে তাঁদের।
চলতি বিশ্বকাপে নিজেদের সেরা বোলিং পারফরম্যান্স উপহার দিয়েও ভারতকে অল্প রানে আটকাতে পারল না বাংলাদেশ। তারপর পাহাড় প্রমাণ রানের পুঁজি নিয়ে বুমরা-হার্দিক-কুলদীপরা বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ নিয়ে ছেলেখেলা করে গেলেন। ১৯৭ রানের টার্গেট চেজ করতে নেমে বাংলাদেশ শেষমেশ ২০ ওভারে তুলল ১৪৬/৮। ৫০ রানে ভারত জিতে সেমিতে যেমন পৌঁছে গেল, তেমন সুপার-৮'এ ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচ হেরে বিদায় নেওয়া পাকা করে ফেলল টাইগার বাহিনী।
স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে যে পিচে ভারতকে শনিবার বাংলাদেশ-পরীক্ষায় বসতে হল, সেই পিচে ভারত খুব বেশি খেলার সুযোগ পায়না। আইপিএলেই চেন্নাইয়ের পিচ বাকি ভেন্যুর থেকে আলাদা ধরা হয় ধীর গতির জন্য। তবে এই পিচের ধীর গতির বৈশিষ্ট্য আলাদা। পিচের বাউন্স ধারাবাহিক নয়।
আরও পড়ুন: ICC-র শাস্তিতেও হল না শিক্ষা! কোহলিকে বোল্ড করে চরম অসভ্যতা তানজিমের, দেখুন বিস্ফোরক ভিডিও
এমন পিচেই ভারত দলগত দুর্ধর্ষ পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে গেল ব্যাটিং করার সময়। স্কোরবোর্ডে ভারত ১৯৬ তুলল, প্রায় সকল ব্যাটারের অবদান নিয়েই। হার্দিক ছয় নম্বরে নেমে হাফসেঞ্চুরি (২৭ বলে ৫০) করে গেলেন। তবে তার আগে রোহিত (১১ বলে ২৩), কোহলি (২৮ বলে ৩৭), পন্থ (২৪ বলে ৩৬), শিভম দুবে (২৪ বলে ৩৪) সকলেই ব্যাট হাতে দলের জন্য রান করে যান।
রোহিত-কোহলি উড়ন্ত সূচনা করেছিলেন। ওভার পিছু ৮-৯ রানের রিংটোন সেট করে দিয়েছিলেন। এরপর ভারত ছোট ছোট পার্টনারশিপে প্রায় দুশো তুলে ফেলে। নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারাতে হয়েছে ভারতকে। তবে রান তোলার গতি কখনই কমতে দেয়নি টিম ইন্ডিয়া।
থমকে আসা পিচেই বাংলাদেশের হয়ে সেরা পারফর্মার তানজিম হাসান। মিলিটারি গতিতে মিডিয়াম পেস করেন তানজিম। তবে বলের বাউন্স দারুণভাবে কাজে লাগাতে পারেন। পেস আদায় করে নিতে পারেন পিচ থেকে। সেই সঙ্গেই হার্ড লেন্থে বল পিচ করে অতিরিক্ত বাউন্স আদায় করে নিতে পারেন তিনি। এভাবেই তানজিমের অতর্কিতে উঠে আসা বলে শিকার হতে হয় সূর্যকুমার যাদবকে।
রিশাদ হোসেন চলতি বিশ্বকাপের অন্যতম আবিষ্কার। বাংলাদেশ মিডল ওভারে রিশাদের ওপরেই উইকেট তোলার জন্য ভরসা করছে। প্রত্যেক ম্যাচেই দলের আস্থার মর্যাদা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
ভারতের বিপক্ষে ওভার পিছু ১৪ রান খরচ করলেন। তবে বরাবর ভারতীয় বিগ হিটারদের চ্যালেঞ্জ করে গেলেন টাইগার স্পিনার। শিভম দুবের সঙ্গে ডুয়েলে জিতলেন তিনিই। ডেথ ওভারে দুবেকে সামলানোর চ্যালেঞ্জ ছিল তাঁর কাছে। প্ৰথম বলেই ওভার দ্যা উইকেট থেকে বল করে ছক্কা হজম করেছিলেন। দ্রুত নিজের ভুল শুধরে নিয়ে আরও আঁটোসাঁটো লেন্থে পরীক্ষা নিলেন। সেই বলেই দুবে আউট। স্ট্যাম্পে বল টেনে আনলেন। মার হজম করলেও ফুল লেন্থে আগ্রাসী বোলিংয়ে ভয় পাননা তিনি। এটাই তাঁর বড় প্লাস পয়েন্ট।
ভারত স্কোরবোর্ডে দুশোর গায়ে স্কোর নিয়ে যাওয়ার পরেই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায়। লিটন-তানজিদ শুরুটা খারাপ করেননি। অর্শদীপ-বুমরার সামনে ওভার পিছু প্রায় ৮ করে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন দুই বাংলাদেশি ওপেনার। তবে পঞ্চম ওভারে হার্দিক পান্ডিয়া ভারতকে প্রথমে ব্রেক থ্রু এনে দেন। অর্শদীপ সুইং আদায় করে নিতে পারেননি। তার ওপরেই চড়াও হয়ে বুমরাকে সতর্কভাবে খেলে চলেছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার। হার্দিকের স্লোয়ার পড়তে না পেরে লিটন সোজা লোপ্পা ক্যাচ তুলে দেন রোহিতের হাতে।
এরপরে তানজিদকে নিয়ে দলকে টানছিলেন ক্যাপ্টেন শান্ত। তবে কুলদীপ আক্রমণে আসতেই হঠাৎ করেই ঝরে পড়ে টাইগার ব্যাটিং। তানজিদ পরপর দুই ম্যাচে ডাক করে খেলতে নেমেছিলেন। পাওয়ার প্লেতে ভারতের বিপক্ষে টিকে যাওয়ার পর ভারতের রিস্ট স্পিনারদের সামলাতে হত তাঁকে। সেই পরীক্ষাতেই উত্তীর্ণ হতে পারলেন না। কুলদীপের গুগলিতেই নিজের উইকেট ছুড়ে দিতে বাধ্য হন তিনি।
ক্রিজে সদ্য নামা তাওহিদ হৃদয়কে ক্রিজে গুগলিতে স্বাগত জানালেন কুলদীপ যাদব। তবে ওভারের শেষ বলেই শার্প টার্নে কুলদীপ চমকে দেন হৃদয়কে।
টানা উইকেট পতনে চাপ বাড়ছিল বাংলাদেশের ওপর। আক্রমণ করতেই হত। আর বিগ হিট নিতে।গিয়েই উইকেট ছুড়ে দেন সাকিব আল হাসান। ৯৮/৪ হয়ে যাওয়ার পর আর দাঁড়াতে পারেনি টাইগার শিবির।
শান্ত, মাহমুদুল্লাহ, জাকের আলি- সকলেই চাপের মুখে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন। শেষদিকে রিশাদ হোসেন মরিয়া হয়ে ১০ বলে ২৪ করে একপেশে ম্যাচে কিছুটা উত্তেজনা সঞ্চার করে যান।