ভারত: ১৭৬/৭
দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৬৯/৮
ICC Men's T20 World Cup 2024 Final Match Report: সাত মাস আগে আহমেদাবাদের সেই রাত যন্ত্রণায় ডুবিয়ে দিয়েছিল। ১৪০ কোটি দেশবাসীর সামনে থেকে বিশ্বজয়ের মুকুট মাথায় চাপিয়ে নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। সেই দুঃস্বপ্নের শাপমুক্তি হল বার্বাডোজে। সবরমতির ট্র্যাজেডির ঢেউ ক্যারিবিয়ান সাগরে ভাসিয়ে ভারত আবার-ও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। একদশক পর আইসিসি ট্রফি। বারো বছর পর যে কোনও ফরম্যাটে বিশ্বকাপ জয়। কিংবা ১৭ বছর পর কুড়ি কুড়ির দুনিয়ায় আবার-ও ভারত সিংহাসনে।
ম্যাচ তো হেরেই গিয়েছিল ভারত হেনরিখ ক্ল্যাসেনের তান্ডবে ভারতের টার্গেট একসময় লিলিপুট দেখিয়ে দিয়েছিল। ছক্কার পর প্রোটিয়াজ সুপারস্টার ভারতকে রিংয়ের বাইরে বের করে দিয়েছিল। শেষ চার ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের জন্য দরকার ছিল মাত্র ২৬ রান। ক্রিজে ক্ল্যাসেন এবং মিলার। হাতে ছয়-ছয়টা উইকেট।
কিন্তু সেই ম্যাচ-ও বের করে ফেলল। পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থায় ভারত নখ-দাঁত বের করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিশ্বজয়ের বৃত্ত থেকে ফুটিয়ে দিল।
ক্ল্যাসেনকে থামাতে ভারত মনস্তত্ত্বের সাহায্য নিল। ১৬ ওভারে অক্ষর প্যাটেল ২০ রান বিলিয়ে ভারতকে ম্যাচ থেকে প্রায় হারিয়ে দিয়েছিলেন। সেই সময়েই প্রোটিয়াজ ব্যাটারদের ছন্দে ব্যাঘাত ঘটাতে ভারত ম্যাচ স্লো করে দেয়।
পন্থকে দেখা যায় হাঁটুর অসুবিধার জন্য স্ট্র্যাপ বাঁধতে। সামান্য কয়েক মিনিটের হেরফের-ই ক্ল্যাসেনের ছন্দে ধাক্কা দিয়ে যায়। হার্দিক পান্ডিয়া ১৭ তম ওভারের প্ৰথম বলই স্লোয়ার কাটার করেন। আর নিজের হিটিং জোনের বাইরের বল তাড়া করে পন্থের হাতে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন ২৭ বলে ৫২ করে ভারতের নাভিশ্বাস তুলে দেওয়া ক্ল্যাসেন।
সেই শুরু। সেই ওভারে হার্দিক মাত্র ৪ রান খরচ করেন। পরের ওভারে বুমরা মাত্র ২ রান দেন। তুলে নেন ক্রিজে সদ্য নামা মার্কো জ্যানসেনকে। ১৯ তম ওভারে অর্শদীপ দেন মাত্র ৪ রান। অর্থাৎ ১৭, ১৮ এবং ১৯- এই তিন ওভারে ভারতীয় বোলাররা শেষ করে দেন প্রোটিয়াজ ব্যাটিংকে। শেষ দুই ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের জন্য টার্গেট দাঁড়ায় ২০ রানের।
জয়ের পুরোটাই নির্ভর করছিল ক্রিজে টিকে যাওয়া ডেভিড মিলারের ওপর। তবে অর্শদীপকে লং অফের ওপর দিয়ে হাঁকাতে গিয়ে সূর্যকুমারের হাতে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন মিলার। বাউন্ডারি লাইনের ধারে যেভাবে প্রায় ছয় হয়ে যাওয়া বল দু-বারের চেষ্টায় জাগলিং করে তালুবন্দি করলেন, তা সম্ভবত বিশ্বকাপ ফাইনালের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ ক্যাচের তকমা পাওয়ার দাবিদার। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মিচেল মার্শকে ফেরানো অক্ষরের সেই অতিমানবীয় ক্যাচের মতই এই ক্যাচ ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে জায়গা করে নেবে নিঃসন্দেহে।
মিলার ফেরার পর দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে ম্যাচ বের করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। রাবাদা বাউন্ডারি হাঁকালেও দক্ষিণ আফ্রিকা হার্দিক পান্ডিয়ার শেষ ওভারে ৭ রান দূরেই থেমে যায়।
তার আগে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভারত। টিম ইন্ডিয়াকে স্বপ্নের সূচনা দেন কোহলি। মার্কো জ্যানসেনের প্ৰথম ওভারেই তিনটে বাউন্ডারি সমেত ১৫ ওভার এনে দেন তিনি। তবে দ্বিতীয় ওভারেই মার্করাম আক্রমণে নিয়ে আসেন কেশব মহারাজকে। সেই ওভারেই ভারতীয় বংশোদ্ভূত তারকা এলোমেলো করে দেন ভারতের ব্যাটিং।
প্ৰথম দুই বলে রোহিত বাউন্ডারি হাঁকানোর পর মহারাজের তৃতীয় বলে সুইপ করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্ল্যাসেনের হাতে ক্যাচ তুলে আউট হয়ে যান রোহিত। তিন নম্বরে নামা পন্থের ইনিংস স্থায়ী হয় মাত্র ২ বল। তিনিও সুইপ করতে গিয়ে টপ এজে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন।
পঞ্চম ওভারে রাবাদাকে হাঁকাতে গিয়ে যখন বাউন্ডারি লাইনের ধারে ক্ল্যাসেনের হাতে ক্যাচ তুলে বিদায় নিলেন, সেই সময় ভারত ৩৪/৩। চোখের পলকে ব্যাকফুটে চলে যাওয়া ভারতের ইনিংসের মেরামতির কাজ করে যায় এরপরে অক্ষর প্যাটেল-বিরাট কোহলির ৫৪ বলে ৭২ রানের পার্টনারশিপ।
ডিককের দুরন্ত থ্রোয়ে রান আউট হওয়ার আগে অক্ষর ভারতকে স্বস্তি দিয়ে ৩১ বলে ৪৭ রানের ইনিংস উপহার দিয়ে যান। অক্ষর ফেরার পর কোহলি আরও একটা ৫৭ রানের পার্টনারশিপ গড়ে যান শিভম দুবের সঙ্গে।
প্রোটিয়াজদের হয়ে মিডল ওভারে ভালো বোলিং করে যান কেশব মহারাজ, এনরিখ নকিয়ারা। মাঝের ওভারে ইনিংস গড়ার দায়িত্বে থাকা কোহলি রক্ষণাত্মক খোলসে বেঁধে ফেলেছিলেন নিজেকে।
তবে ইনিংসের শেষের দিকে খোলস ছেড়ে বেরোন তিনি। জ্যানসেনের বলে রাবাদার হাতে ক্যাচ তুলে যখন কোহলি প্যাভিলিয়নে ফিরলেন সেই সময় ভারত যথেষ্ট ভালো জায়গায়। শিভম দুবেও ১৬ বলে ২৭ করে দলকে ১৭৬ রানে পৌঁছে দিতে সাহায্য করেন।
রাবাদা, মার্কো জ্যানসেন দুজনেই খরুচে বোলিং করেন। তবে এনরিখ নকিয়া দুর্ধর্ষ করলেন। ৪ ওভারে মাত্র ২৬ রান খরচ করে তুললেন ২ উইকেট। শেষ ওভারে নকিয়ার দুরন্ত বোলিংয়ের জন্যই ভারত একসময় নিশ্চিত দেখাতে থাকা ১৮০-র স্টেশনে পৌঁছতে পারেনি।