ভারত: ১৬৮/৬
ইংল্যান্ড: ১৭০/১০
আলেক্স হেলস, জস বাটলার! দুজনেই শেষ করে দিলেন ভারতের ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন। হেভিওয়েট সেমিফাইনালের আগেই শোয়েব আখতার বলে দিয়েছিলেন যে দল রান চেজ করবে, তাঁদের হাতেই জয়ের চাবিকাঠি। সেই ভবিষ্যৎবাণীই যে অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণ করে দেবে বৃহস্পতিবারের দ্বৈরথ, তা কে ভাবতে পেরেছিল। হার্দিক পান্ডিয়ার ব্যাটিং বিক্রমে ভর করে এডিলেডের স্লো পিচে ভারত ১৬৮ তুলেছিল কোনওরকমে। তবে সেই রান চেজ করেই যে মসৃণভাবে কোনও উত্তেজনার আমদানি না করেই জয় ছিনিয়ে নেবে ইংল্যান্ড কে ভেবেছিল!
অন্য সেমিফাইনালে পাকিস্তানের দুই ওপেনার বাবর আজম, মহম্মদ রিজওয়ান ১০৫ রানের জুটি গড়ে একদিন আগেই নিউজিল্যান্ডকে ধুয়ে মুছে সাফ করে দিয়েছিলেন। আর বৃহস্পতিবার ইংল্যান্ড ১৬৯ তুলল কোনও উইকেট না হারিয়েই। চার ওভার বাকি থাকতে। হাতে ১০ উইকেট নিয়ে কার্যত ছেলেখেলা করে ফাইনালে উঠল ইংল্যান্ড। বিগ ব্যাশে নিয়মিত খেলার সূত্রে এডিলেড হাতের তালুর মতই চেনা টানা দু-বছর জাতীয় দলের বাইরে থাকা হেলসের (৪৭ বলে ৮৬)। তিনি এবং ক্যাপ্টেন বাটলার (৪৯ বলে ৮০) ভারতকে দেশে ফেরার বিমানের টিকিট কেটে দিলেন।
পাওয়ার প্লে-তেই ম্যাচ হেরে বসল ভারত। গোটা টুর্নামেন্ট জুড়েই রোহিত-রাহুল পাওয়ার প্লে-তে হারাকিরি করেছেন। কেএল রাহুল গুরুত্বপূর্ণ সেমিফাইনালে করলেন ৪। দ্বিতীয় ওভারেই ক্রিস ওকসের শিকার তিনি। টি২০ বিশ্বকাপের পর রাহুল পাকাপাকিভাবে বাদ পড়লে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
আরও পড়ুন: এমন রেকর্ড আগে কারোর নেই, বিশ্বকাপের এডিলেডে সেই কীর্তিই গড়লেন কিং কোহলি
রোহিত পুরোনো ফর্মের ঝলক দেখালেও তিনি এখন অতীতের ছায়া। কুরান-রশিদদের সামনে ২৮ বলে ২৭ রানের বেশি করতে পারলেন না। গোটা টুর্নামেন্টেই পাওয়ার প্লে-তে ভারতের রানরেট ৬-এর বেশি ওঠেনি। এদিন ভারত কেএল রাহুলের উইকেট হারিয়ে তুলল ৩৮ রান। পাওয়ার প্লে-তে শ্লথ ব্যাটিং, তারপরে মিডল অর্ডারের চাপের মুখে কাঁপাকাপি চলতি বিশ্বকাপে ভারতের ট্রেডমার্ক হয়ে গিয়েছে। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ ম্যাচ ভারত জিতেছিল একদম শেষ ওভারে। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ভারত কার্যত উড়ে গিয়েছিল। নেদারল্যান্ডস, জিম্বাবোয়ের কাছে সহজ জয়ে ভারত কার্যত সঠিক সময়ে প্যানিক বাটন প্রেস করতেই ভুলে গিয়েছিল।
স্কোরবোর্ডে ১০০ তুলতেই ভারত লাগিয়ে দিল ১৫ ওভার। বাকি ৫ ওভারে ৬৮ তুলল ভারত পুরোটাই হার্দিক পান্ডিয়ার একক ক্যারিশমার ওপর ভর করে। হার্দিক প্ৰথম ১৫ বলে ১৩ করেছিলেন। ব্যাটে-বলে টাইমিংয়ে রীতিমত সমস্যা হচ্ছিল। তবে পিচের চরিত্র বোঝার পরেই স্বমূর্তি ধরেন সুপারস্টার। শেষ ১৮ বলে ৫০ করে যান তারকা। সবমিলিয়ে ৩৩ বলে ৬৩ রানের ইনিংসে হার্দিক শেষ পাঁচ ওভারে গিয়ার চেঞ্জ না করলে ভারত এদিন দেড়শোও পেরোয় না। এতটাই হার্দিক ইনিংসের মাহাত্ম্য যে ভারতের শেষ ৫ ওভারের ৬৮ রানের ৫৪-ই এল হার্দিকের ব্যাট থেকে।
সূর্যকুমার যাদব ঝলক দেখিয়ে বাউন্ডারি, ওভার বাউন্ডারি হাঁকালেও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। রশিদের বল তুলে হাঁকাতে গিয়ে আউট হয়ে যান। বিরাট কোহলি একাধিক রেকর্ড গড়ে এডিলেডে ৪০ বলে ৫০ করলেও ম্যাচের মোক্ষম সময়ে আউট হয়ে গেলেন। ঠিক যখন ইনিংসের গিয়ার বদলাতে চাইছিলেন। সেই সময়েই জর্ডনের বল স্লাইস করে প্লেস করতে গিয়ে আদিল রশিদের হাতে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন। এরপরে হার্দিক বাদে ভারতের ইনিংসের বলার মত কিছু নেই।
ব্যাটিংয়ের মতই থরহরিকম্পমান দশা বোলিংয়েও। পাকিস্তান ম্যাচে শন মাসুদ, ইফতিকার আহমেদের পার্টনারশিপ হোক বা দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে মিলার ঝড়, বাংলাদেশ ম্যাচে লিটন সাইক্লোন- কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বারবার ম্যাচের রিংটোন গুলিয়ে ফেলেছেন ভুবনেশ্বর-আর্শদীপরা। বৃহস্পতিবার ম্যাচেও সেই ট্র্যাডিশন অব্যাহত। জসপ্রীত বুমরা ছিটকে যাওয়ার পরে ভারতের বোলিং আক্রমণে এক্স ফ্যাক্টর হতে পারতেন নিয়মিত ১৫০ কিমি গতিতে বোলিং করা উমরান মালিক। ব্রেট লি-ও ভারতের পেস বোলার বাছাই নিয়ে সরব হয়েছিলেন কিছুদিন আগে। সেই উমরানকেই ভারত স্কোয়াড থেকে বাদ দিয়ে দিল।
আরও পড়ুন: বিশ্বকাপ চাই না, কোহলিকে দাও! পাকিস্তানি সমর্থকের কাতর আর্তিতে তোলপাড় দুনিয়া, দেখুন ভিডিও
অফফর্মে থাকা ব্যাটসম্যানদের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা, পাওয়ার প্লে-র হারাকিরি, আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যানদের সামনে বোলারদের গুটিয়ে যাওয়া, চাহালের মত ফিঙ্গার স্পিনারদের গোটা টুর্নামেন্টে বসিয়ে রেখে অস্ট্রেলিয়ার পিচে অশ্বিন-অক্ষরকে টানা খেলিয়ে যাওয়া- ভারতের ব্যর্থতার ব্যবচ্ছেদ করতে গিয়ে বেরিয়ে আসছে একের পর এক পুঁজ-রক্ত!
ভারত প্ৰথম একাদশ: রোহিত শর্মা, কেএল রাহুল, বিরাট কোহলি, সূর্যকুমার যাদব, হার্দিক পান্ডিয়া, ঋষভ পন্থ, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, অক্ষর প্যাটেল, ভুবনেশ্বর কুমার, মহম্মদ শামি, আর্শদীপ সিং