ভারত: ১১৯/১০
পাকিস্তান: ১১৩/৭
India vs Pakistan Match: অবিশ্বাস্য। অকল্পনীয়। হাতে পুঁজি ছিল মাত্র ১১৯। সেই অল্প রান পুঁজি করেই ভারত নিউ ইয়র্কে পাকিস্তান বধ সম্পন্ন করল। রান ডিফেন্ড করতে নেমে পাকিস্তানকে কার্যত দমবন্ধ করে হারাল টিম ইন্ডিয়া। আর জয়ের নায়ক সেই জসপ্রীত বুমরা। তাঁর চারটে ওভার-ই ম্যাচে ফারাক গড়ে দিল। মাত্র ১৪ রান দখল করে তুললেন ৩ উইকেট। হার্দিক পান্ডিয়াও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্রেক থ্রু দিয়ে বুমরাকে যোগ্য সহায়তা করলেন।
১১৯ তোলার পর ভারত যে ম্যাচ জিতবেই, তা অতি বড় সমর্থকেরও বুকে হাত রেখে বলতে পারার মত সাহস ছিল না। ম্যাচের অধিকাংশ সময়ই উইন প্রেডিক্টার ভারতকে অনেক অনেক পিছিয়ে রেখেছিল। তবে প্রযুক্তির আগাম পূর্বাভাসকেই বুড়ো আঙুল দেখাল ভারতীয় বোলাররা।
পাকিস্তান শুরুটা খারাপ করেনি। নতুন বলে সিরাজ-অর্শদীপকে আক্রমণে এনেছিলেন ক্যাপ্টেন রোহিত। প্ৰথম দুই ওভার নিশ্চিন্তেই খেলে দেন বাবর-রিজওয়ান। ওয়ান চেঞ্জে আক্রমণে এসেই নিজের দ্বিতীয় ওভারে বুমরা প্ৰথম রক্তের স্বাদ এনে দেন ভারতীয় শিবিরে। বুমরার ১৪০ প্লাস গতিতে লেন্থ বল সামলাতে না পেরে সূর্যকুমারের হাতে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন ক্যাপ্টেন বাবর।
আরও পড়ুন: বিশ্বকাপে পাকিস্তান ‘বেঁচে’ ভারতের ভরসায়! রোহিত-কোহলিদের জন্য এবার গলা ফাটাবেন বাবর-রিজওয়ানরা
এরপরে উসমান খানকে নিয়ে রিজওয়ান ৩১ রানের এই নিরাপদ পার্টনারশিপ গড়ে দেন। ভাবা হয়েছিল পাকিস্তান এই টার্গেট সহজভাবেই জিতবে। ম্যাচের প্রথমাংশের বৃষ্টি উধাও হয়ে গিয়ে খটখটে রোদ পিচের আর্দ্রভাবে শুষে নিয়েছিল। ব্যাটিং তুলনামূলকভাবে সহজ হয়ে এসেছিল।
তবে সেই পিচেই ভেলকি দেখালেন বুমরা-হার্দিকরা। ১০ ওভার শেষে পাকিস্তান ছিল ৫৭/১। সেখান থেকেই কিনা হেরে বসল পাকিস্তান! ১১তম ওভারে ম্যাচের রং বদলানো ওভার উপহার দিয়ে যান অক্ষর প্যাটেল। সরাসরি লেগ বিফোর করেন বিপজ্জনক হতে থাকা উসমান খানকে। এরপরে নামলেন ফখর জামান। তাঁকে নিয়েও রিজওয়ান ১৬ রানের ছোটখাটো জুটি গড়ে যান। তবে এর মধ্যেই জাদেজা, হার্দিকরা হাঁসফাঁস করিয়ে দিয়েছিল পাক ব্যাটারদের। রানের ফ্লো বন্ধ হয়ে যেতেই চাপে পড়ে যান রিজওয়ানরা।
১৩তম ওভারে হার্দিক পান্ডিয়া শর্ট বলে ফেরান ফখর জামানকে। আর বুমরাকে দ্বিতীয় স্পেলে নিয়ে আসা হয়েছিল ১৫তম ওভারে। আর সেই ওভারের প্ৰথম বলেই বুমরার ম্যাজিক। বিশ্বের একনম্বর পেসারকে হাঁটু গেড়ে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তিনি হঠাৎ আবিষ্কার করেন তাঁর উইকেট তছনছ হয়ে গিয়েছে।
সেই যে ভারতের শিকারের রক্তের স্বাদ পাওয়া শুরু। তা আর থামানো যায়নি। এরপরে সময় যত গড়িয়েছে ততই রানের জন্য মাথা কুটে মরেছেন পাক ব্যাটাররা।
এমনকি ম্যাচের ১৪ তম ওভার পর্যন্ত-ও ৮০ শতাংশ জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে এগোচ্ছিল পাকিস্তান। সেই সময় পাকিস্তানের স্কোর ছিল ৮০ রান। হাতে ৭ টা উইকেট। ৩৬ বলে তখন দরকার ৪০ রান। তবে বুমরার সেই ম্যাজিক ওভার-ই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ১৫, ১৬ এবং ১৭- এই তিন ওভারে ভারত খরচ করার মাত্র ১০ রান। এই তিন ওভারে বুমরা-হার্দিক-অক্ষররা ম্যাচের গতি নির্ধারণ করে দেয়। শেষ তিন ওভারে জয়ের জন্য তাই কঠিন পিচে টার্গেট নেমে দাঁড়ায় ৩০-এ। তবে সেটা কার্যত অসাধ্য সাধন করার মতই ব্যাপার। সেটাই হল শেষমেশ।
পাক ইনিংসে বাউন্ডারি নিখোঁজ হয়ে যেতেই চাপের ওপর চাপ বাড়ছিল ক্রিজে নামা ইমাদ, শাদাবদের ওপর। শেষ তিন ওভারে পাকিস্তানের জন্য টার্গেট দাঁড়ায় ৩০ রানের। ১৮তম ওভারে সিরাজ ৭ রান খরচ করার পর বুমরা ১৯তম ওভারে পাকিস্তানের কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দেন। মাত্র দুই রান খরচ করেন। ইফতিকার আহমদকেও আউট করেন। শেষ ওভারে দুর্বোধ্য পিচে পাকিস্তানের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৮ রানের। সেই ওভারে নাসিম শাহ জোড়া বাউন্ডারিতে ১১ তুললেও কাজের কাজ হয়নি। ৬ রানে ম্যাচ জয় সমাপ্ত করেছে ভারত।
তার আগে টসে নেমে ভারত সুবিধা করতে পারেনি নাসাউ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। মাত্র ১১৯ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল ভারত। পুরো ২০ ওভার-ও ব্যাট করতে পারেননি রোহিতরা।
বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে টস জিতে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিল পাকিস্তান। প্ৰথম ওভারেই শাহিন আফ্রিদিকে ছক্কা হাঁকিয়ে রোহিত বার্তা দিয়েছিলেন। তবে শুরুর ওভার শেষেই ফের বৃষ্টি নামে। এরপরে ভারতের বিপর্যয়ের সূত্রপাত।
দ্বিতীয় ওভারেই নাসিম শাহকে অফ সাইড দিয়ে হাঁকাতে গিয়ে কোহলি ক্যাচ তুলে বিদায় নেন ৩ বলে ৪ করে। অধিনায়ক রোহিত শাহিনকে ডিপ স্কোয়ার লেগে তুলে হাঁকাতে গিয়ে উসমান খানের হাতে ক্যাচ তুলে বসেন।
ঋষভ পন্থ ভারতকে টানলেন এরপরে। তবে তিন-তিনবার জীবন পেলেন তিনি। কঠিন পিচেই স্বভাবসিদ্ধ ভাবে ট্রেডমার্ক শট খেলে চলেছিলেন পন্থ। সঙ্গী হয়েছিলেন ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পাওয়া অক্ষর প্যাটেল। ৫৮/৩ হয়ে যাওয়ার পর দুজনে দলকে ভালোই টানছিলেন। তবে নাসিম সোজা হাঁকাতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান নাসিম শাহের বলে। এরপরে পন্থ ৩১ বলে ৪২ করে আউট হন মহম্মদ আমেরের বলে। ৮৮/৩ থেকে আচমকাই পরপর উইকেট হারিয়ে ৯৬/৭ হয়ে যায়। পন্থের পরের বলেই আমেরের স্লোয়ারে ঠকে গিয়ে উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসেন রবীন্দ্র জাদেজা।
তার আগে একইভাবে থমকে আসা বলে টাইমিংয়ের হেরফের ঘটে যাওয়ায় নাসিম শাহের হাতে ক্যাচ তুলে আউট হন আইপিএল তারকা শিভম দুবে। এরপরে সময় যত গড়িয়েছে ততই ভারতের উইকেট পতন অব্যাহত থেকেছে।