চলতি বিশ্বকাপে অন্য অবতারে ধরা হয়েছেন রোহিত শর্মা। পাওয়ার প্লে-তে টিম ইন্ডিয়ার ক্যাপ্টেন ধুন্ধুমার সূচনা করে দিচ্ছেন। বৃত্তের বাইরে কম ফিল্ডারের সুযোগ নিয়ে বিপক্ষ বোলারদের ওপর চড়াও হচ্ছেন। ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাটিংয়ে বেশিদূর হয়ত টানতে পারছেন না নিজের ইনিংস। তবে যে উড়ন্ত সূচনা তিনি এনে দিচ্ছেন তাতে দল বড় রানের ছন্দ পেয়ে যাচ্ছে।
এই স্ট্র্যাটেজি আসলে পুরোটাই রোহিতের মস্তিষ্কপ্রসূত। চলতি বছরের শুরুতে এশিয়া কাপের পর টিম মিটিংয়ে রোহিত নিজেই আক্রমণাত্মক এই ব্যাটিংয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যাতে দলের বাকিরা সম্মত হন।
অস্ট্রেলিয়ায় টি২০ ওয়ার্ল্ড কাপেও রোহিত এরকম বিধ্বংসী মেজাজে বোলারদের ওড়াতে চাওয়ার কৌশল নিয়েছিলেন। তবে সেটা কাজে আসেনি। ঘরের মাঠে চেনা পরিবেশে রোহিত ঝুঁকিবহুল এই ব্যাটিং করতে দ্বিধা করেননি।
রোহিত নিজে সতীর্থদের জানান, তিনি বিধ্বংসী মেজাজে গোড়াপত্তন করে দেবেন যাতে পরবর্তী ব্যাটারদের ওপর চাপ অনেকটা হালকা হয়। এবং তাঁর নিজস্ব ছন্দে খেলতে পারেন। তবে বিশ্বকাপে রোহিতের এই প্ল্যান কাজে না এলে হয়ত পরবর্তীতে সাবধানী ইনিংসে জোর দিতেন তিনি।
সবমিলিয়ে ফাইনালে নামার আগে দশ ইনিংসে রোহিতের নামের পাশে ৫৫০ রান। গড় ৫৫। স্ট্রাইক রেট নজরকাড়া ১২৪.১৫। চলতি টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় তিনি আপাতত পঞ্চম স্থানে। তবে স্রেফ পরিসংখ্যান রোহিতের ব্যাটিংয়ের প্রভাব হয়ত পুরোপুরি তুলে ধরতে ব্যর্থ।
রোহিতের এই প্রস্তাব শোনার পর হেড কোচ দ্রাবিড় স্বয়ং নাকি এই প্ল্যানিংয়ের ভালো-মন্দ দুইই তুলে ধরেন। নিউজিল্যান্ড ম্যাচের আগে রোহিত সংবাদিক সম্মেলনে কোচ দ্রাবিড়কে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। তাঁর প্ল্যানিং পুরোদস্তুর ব্যাক করার জন্য। প্রত্যেক ব্যাটসম্যানদের নিজস্ব ভূমিকা দিয়ে দেওয়ায় ব্যাটিং অর্ডারে বারবার পরিবর্তনও করতে হচ্ছে না টিম ম্যানেজমেন্টকে।
রোহিত বলেছিলেন, "আমার কোনও মন্ত্র নেই। ক্যাপ্টেন হিসাবে দল কীভাবে খেলবে সেটা আমাকেই নির্ধারণ করতে হবে। প্রত্যেকের ভূমিকা স্বচ্ছ হতে হবে। সতীর্থদের ব্যাক করতে হবে শেষ পর্যন্ত। দলে নির্দিষ্ট কিছু ক্রিকেটার রয়েছে যাঁদের ভূমিকা নির্ধারণ করা রয়েছে। তাঁদের ওপর আস্থা রাখতে হয়েছে। আমরা ক্রিকেটারদের পাশে সবসময় থাকব। রাহুল দ্রাবিড়কে ধন্যবাদ জানাতে হয় আমার প্রস্তাবে সাড়া দেওয়ার জন্য। ফলাফল না মিললেও ব্যাটিং অর্ডারে শাফল করতে হয়নি। এতেও ওঁর ধন্যবাদ প্রাপ্য।"
অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া এবং শার্দূল ঠাকুরের উপস্থিতি দলের লোয়ার অর্ডারকে মজবুত করেছে। হার্দিক পরবর্তীতে যদিও ছিটকে গিয়েছেন। শার্দূল ঠাকুর রিজার্ভের বসে রয়েছেন শামি টানা খেলে চলায়। এক ব্যাটসম্যান কম নিয়ে খেলেও রোহিত নতুন বলে ভয়ডরহীন ব্যাটিংয়ে দ্বিধা করেননি।
বোলাররা বল হাতে বিপক্ষের ব্যাটিং অর্ডারে তান্ডব চালাচ্ছেন। ব্যাটসম্যানরা দুর্ধর্ষ মেজাজে। আর কী পাওনা থাকতে পারে একজন অধিনায়কের। প্ৰথমে ব্যাটিং করা হোক বা রান চেজ করা- ভারতীয় ব্যাটিং যে কোনও পরিস্থিতিতেই সেরা পারফরম্যান্স মেলে ধরেছে। ভারত যে টানা দশ ম্যাচ জিতে চলেছে তাতেও ভারসাম্য রয়েছে। কীভাবে? রান চেজ করে ভারতের জয় এসেছে পাঁচটিতে। প্ৰথমে ব্যাটিং করে জয় এসেছে ঠিক পাঁচটি ম্যাচেই। বিরাট কোহলি, শ্রেয়স আইয়ার, কেএল রাহুল, শুভমান গিলরা নিজেদের সেরা ছন্দে ধরা দিয়েছেন ক্যাপ্টেন রোহিতের দুর্ধর্ষ সূচনার সঙ্গে তাল রেখে।
ওয়ানডে ক্রিকেট রোহিত খেলছেন আসলে টি২০ মেজাজে। ধ্বংসাত্মক সূচনার পর কোহলি নিজের ইনিংস বিল্ড আপ করতে পারছেন অনেক সময় নিয়ে। এতে শ্রেয়স আইয়ার, কেএল রাহুলের মত বিগ হিটাররা খোলা মেজাজে ইনিংসের শেষের দিকে তান্ডব চালানোর লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছেন। কোহলি চলতি বিশ্বকাপে তিনটে শতরান হাঁকিয়ে ফেলেছেন। শতরান সংখ্যায় পেরিয়ে গিয়েছেন শচীনকে। বিশ্বকাপে সবথেকে বেশি রান করার নজিরও তাঁর নামের পাশে।
শ্রেয়স আইয়ার আবার সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছেন। দুটো হান্ড্রেড-এর পাশাপাশি তিনি রান করেছেন ১১৩.১১ স্ট্রাইক রেটে। যা বিশ্বকাপে সেরা রান সংগ্রহকারীদের মধ্যে রোহিতের পরেই দ্বিতীয়।
রোহিতের ব্যাটিংয়ের প্রভাব কতটা, বোঝা গিয়েছে সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই। কিউইদের দুই অভিজ্ঞতম সিমার ট্রেন্ট বোল্ট এবং টিম সাউদির ওপর শুরু থেকেই চড়াও হয়েছিলেন। পরবর্তীতে কোহলি, শ্রেয়সের সেঞ্চুরির রিংটোন সেট করে দিয়েছিল আদতে রোহিতের ২৯ বলে ৪৭ রানের ইনিংস। রোহিত নবম ওভারে আউট হওয়ার পর রানের গতি বাড়ানোর ভূমিকা নেন শুভমান গিল।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপ শুরুর ম্যাচে ভারত স্কোরবোর্ডে ৩ রান তোলার ফাঁকেই ২ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল। সেই সময় ত্রাতার ভুমিকায় অবতীর্ণ হন বিরাট কোহলি এবং কেএল রাহুল। টুর্নামেন্টের শুরুর ম্যাচে অজিদের বিপক্ষে সফল হননি রোহিত। তবে রবিবার সেই বিধ্বংসী মেজাজেই ওড়াতে চাইবেন অস্ট্রেলীয় বোলারদের।