Advertisment

কপিল-ধোনিরাও এই খুনে মেজাজে ছিলেন না, রোহিত শর্মাদের টিম ইন্ডিয়া চ্যাম্পিয়ন না হলেও হয়ত ইতিহাসে

দলের প্রত্যেক সদস্য যেন নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছেন।

author-image
IE Bangla Sports Desk
New Update
Team India

ইংল্যান্ড উইকেটে হারানোর পর রবীন্দ্র জাদেজা, বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা-সহ ভারতীয় দলের সদস্যরা। (ছবি: রয়টার্স)

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওই একবার-ই বেশ চিন্তিত দেখাল রোহিত শর্মাকে। চোখে অস্বস্তি হচ্ছিল মহম্মদ শামির। চিন্তিত রোহিত নিজের রুমাল ভিজিয়ে শামির চিবুক মুছে দিলেন। তারপর চোখ থেকে অস্বস্তিকর বস্তু তুলে দিলেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০০ রানের মার্জিনে জয়। তা-ও আবার টানা ছয় ম্যাচ অপরাজিত থাকার নজির। তবে যেভাবে ভারত নিজেদের অল্প রানের পুঁজি ডিফেন্ড করল, তা দেখার মত বিষয়-ই বটে। অক্টোবরে ভারতের ক্রিকেট কার্নিভালের মুকুটে এই ইংল্যান্ড বধ এক বড়সড় উৎসবের কেকের মতই।

Advertisment

রোহিত শর্মারা যেভাবে একের পর এক ম্যাচ প্রতিপক্ষকে কার্যত মাটি ধরিয়ে জিতে চলেছে, তাতে অন্য কোনও ভারতীয় দল বিশ্বকাপের মঞ্চে এই দাপট হাজির করতে পারেনি। এমনকি ২০১১-র বিশ্বকাপ জয়ী দলও এই শাসন করে জয়ের মুকুট পরতে পারেনি। ১৯৮৩-এর বিশ্বকাপ জয় ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা মুহূর্ত। গর্বের পালক ছড়িয়ে দেয় স্মৃতিতে। তবে কপিল দেব বাহিনী এই দাপট কল্পনাতেই আনতে পারতেন না। ১৯৮৭-এ ভারত ফেভারিট ছিল। তবে জ্বালানি ফুরিয়ে গিয়েছিল সেমিফাইনালেই।

এই ভারতীয় দল এবার নিজেদেরকে টিকিয়ে রাখতে পারে কি না, সেটা এখন দেখার বিষয়। রোহিতের প্রধান উদ্বেগ ছিল এই টুর্নামেন্ট নিয়ে। এখনও খেলা চলছে। তারমধ্যেই টিম ইন্ডিয়া ভক্তদের যথেষ্ট আনন্দ দিয়েছে। প্রতিপক্ষকে রীতিমতো দুরমুশ করেছে। এটা একটা বিরাট ব্যাপার। তবে, টিম ইন্ডিয়া বিরাট সুবিধা পাচ্ছে, কারণ ম্যাচগুলো হচ্ছে ভারতে। এখানকার পিচ এবং মাঠ ভারতীয় দলের খেলোয়াড়দের কাছে অতি পরিচিত। এই সব মাঠে আইপিএল খেলা ভারতীয় খেলোয়াড়দের বিরাট কাজে লেগেছে।

যেমন রবীন্দ্র জাদেজা চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে খেলেন। চেন্নাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম খেলায় তিনি ঘরের মাঠ পেয়েছেন। দিল্লিতে যেমন বিরাট কোহলি। আবার, বুমরাহ আহমেদাবাদের পিচ দারুণ চেনেন। শ্রেয়াস আইয়ারের কাছে পুনের পিচ যেন হাতের তালু। শুভমানের কাছে যেমন ধর্মশালার মাঠ। কুলদীপ যাদবকে আবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে লখনউয়ে ভালো খেলতে দেখা গিয়েছে।

তার ওপর রীতিমতো চিন্তা করে বোলারদের হাতে বল তুলে দেওয়া হয়েছে। এই সব ব্যাপারে কোহলি যেন কোমরে গামছা বেঁধে সবসময় রেডি। লখনউয়ে শিশির পড়ছিল। কোহলিকে দেখা গেল, প্রায়শই স্লিপে দাঁড়াতে। অন্য ফিল্ডাররাও তাঁর দিকে বল ছুড়ে দিচ্ছিলেন। আর, কোহলিকে দেখা গিয়েছে, বারবার ঘাম দিয়ে বল পরিষ্কার করতে। একই জিনিস বারবার করতে দেখা গিয়েছে রোহিত শর্মাকেও। তিনি বোলারদের সঙ্গে বারবার কথা বলেছেন। তাঁদের পরামর্শ দিয়েছেন। বুমরাহ, শামি এবং কুলদীপ যাদবরা একে অপরকে যেন আগের চেয়ে অনেক বেশি সাহায্য করতে এগিয়ে আসছেন।

রোহিত যেমন শামির চোখে ঢুকে যাওয়া ময়লা পরিষ্কার করে দিচ্ছেন, কোহলি রীতিমতো আবেগের সঙ্গে রোহিতের দিকে দৌড়চ্ছেন, শামিকে আক্রমণে ফিরিয়ে আনার পরে তাকে জড়িয়ে ধরে মাটি থেকে তুলেছেন- এই সবগুলোই বুঝিয়ে দিচ্ছে, গোটা টিম কীভাবে একসূত্রে বাঁধা হয়ে আছে। এই টুর্নামেন্টের শুরুতে, অলরাউন্ডার শার্দুল ঠাকুর নিজেকে মেলে ধরেছেন। অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়াও নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তেমনই গোটা টিমের প্রত্যেকেই যেন একটা দায়িত্ব নিয়ে খেলছেন।

বিশ্বকাপের আগে মনে হয়েছিল অশ্বিন বা অক্ষর প্যাটেলের অভাব বোধ হবে। কিংবা মিডল অর্ডারে সূর্যকুমার যাদব এবং ঈশান কিষান ঠিকঠাক। কিন্তু, কেএল রাহুল আর শ্রেয়স আইয়ার বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের মান যথেষ্ট ভালো। বুমরাহকে তো প্রায় প্রতি ম্যাচেই নায়কের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে। তিনি যেভাবে ডেভিড মালান আর জো রুটকে আউট করেছেন, রীতিমতো বড় সাফল্য। মালানকে তিনি বারবার হয়রান করে গেছেন। রুটকে এলবিডব্লিউ করাটাতেও বুমরাহ রীতিমতো বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন।

আরও পড়ুন- বাংলাদেশের থেকে অনেক এগিয়ে আফগানিস্তান! বাংলা টাইগারদের হেয় করে বিস্ফোরক বিদ্রুপ এবার শেওয়াগের

শামি তাঁর নিজের খেলাটা খেলে যাচ্ছেন। জনি বেয়ারস্টোক আর বিন স্টোকসের উইকেট নিয়ে শামি ফের তাঁর নৈপুণ্য প্রমাণ করেছেন। আর, কুলদীপ তো অনন্য। যে বলে তিনি ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলারকে আউট করেছেন, বহুদিন মনে রাখবেন দর্শকরা। সব মিলিয়ে বলতে হয়, লখনউ ইংরেজ শাসনের হাত থেকে আগেই মুক্ত হয়েছিল। এবার সেই লখনউই খেলায় ইংল্যান্ডকে ভারতের বড়সড় ধাক্কা দেওয়ারও সাক্ষী হল।

cricket Cricket Australia Worldcup Cricket World Cup ICC Cricket World Cup Pakistan Cricket Cricket News Indian Cricket Team Indian Team
Advertisment