Gautam Gambhir and Virat Kohli: চলতি বছরের শুরুর দিকে টানাপোড়েন সঙ্গী হয়েছিল। সামনেই লোকসভা নির্বাচন। সেই সময়েই সক্রিয় সাংসদ ভেবে উঠতে পারছিলেন না, রাজনৈতিক কেরিয়ার চালিয়ে যাবেন নাকি ক্রিকেটে প্রত্যেবর্তন করবেন। সেই মানসিক সংশয়, দ্বিধা গেঁথে দিয়েছিলেন স্বয়ং শাহরুখ খান। কেকেআরের হেড কোচ হওয়ার প্রস্তাব নিয়ে।
এরপরে ঘনিষ্ঠ বৃত্তের পরিচিত বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করেই নিয়ে নেন কেকেআরের দায়িত্ব। তবে কোচ হিসেবে নয়, মেন্টর হিসাবে। তারপর পুরোটাই ইতিহাস। সোনার সময় ফিরিয়ে এনেছেন কেকেআরে। একদশকের ট্রফি খরা কাটিয়ে কেকেআরকে আবার চ্যাম্পিয়ন করেছেন ডাগ আউটে বসে। আর আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরই আরও বড় দায়িত্ব তাঁর কাঁধে, টিম ইন্ডিয়ার হেড কোচ হিসেবে তিনি বিরাট চ্যালেঞ্জ নিয়ে ফেললেন। রাহুল দ্রাবিড় পরবর্তী জমানার সূচনা হচ্ছে গম্ভীরের হাত ধরেই।
ভারত দীর্ঘ ১১ বছর পর আইসিসি খেতাব জিতেছে। ১৩ বছর পর বিশ্বকাপের মুখ দেখেছে মেন ইন ব্লু-রা। তবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ কিন্তু এখনও অধরা। ২০১১-এ বিশ্বকাপ জিতেছেন গম্ভীর। আর তাই তিনি কোচ হওয়ার পরই প্রত্যাশার পারদ আকাশ ছুঁয়ে ফেলেছে।
আর গম্ভীর হেড কোচ হওয়ার পর প্রতিক্রিয়া জানালেন, নিজের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে। কোনও বিশ্বকাপ ট্রফি নয়, তেরঙা-র ছবি ঝুলিয়ে দিয়ে নিজের পোস্টে লিখে দিলেন, "ভারত হল আমার পরিচয়। দেশের হয়ে কাজ করতে পারা আমার জীবনের সবথেকে বড় সুযোগ। টিম ইন্ডিয়ায় ফিরতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি। অবশ্যই এবার আলাদায় ভূমিকা ফিরে এলাম। কিন্তু আগে আমার যে লক্ষ্য ছিল, এখন সেটাই থাকছে। আর সেটা হল যে প্রত্যেক ভারতীয়কে গর্বিত করা। ১৪০ কোটি ভারতীয়র স্বপ্ন কাঁধে নিয়ে এগিয়ে চলে মেন ইন ব্লু ব্রিগেড। আর সেই স্বপ্নগুলি যাতে সত্যি হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য আমি সর্বোতভাবে আমি চেষ্টা চালিয়ে যাব।"
অন্যান্যদের তরফে এমন প্রতিক্রিয়া এলে বলে দেওয়াই যেত পুরো বিষয়টি ক্লিশে। তবে গম্ভীর বরাবর-ই স্বতন্ত্র। এর আগে ভারত দেখেছে ঠান্ডা মাথার কোচ- জন রাইট হোক বা গ্যারি কার্স্টেন, রাহুল দ্রাবিড় এমনকি ডানকান ফ্লেচার-ও। একমাত্র রবি শাস্ত্রী কিছুটা ফ্ল্যামবয়েন্স ঘরানা আমদানি করেন। গম্ভীর অতীতের সমস্ত কোচের থেকে আলাদা। তীব্র প্যাশনেট, দেশাত্মবোধকের রংচংয়ে আবেগ, তীব্রতা- গম্ভীর গুরু হয়ে এই ট্র্যাডিশন আমদানি করতে চলেছেন জাতীয় দলের অন্দরে।
গম্ভীরের নিজের কথায়, "মনে হয়না আমি ক্রিকেট খুব বেশি উপভোগ করি। সত্যি কথা বলতে ক্রিকেট সেই বিষয় যা আমার কাছে প্রাধান্য পেয়ে থাকে।"
কী সেই প্রাধান্য? গম্ভীর বাকি তারকা ক্রিকেটারদের লেন্স দিয়ে খেলা দেখেন না। তারকা ক্রিকেটাররা জাতীয় দলে কতদিন থাকল, সেই বিষয়ে তাঁর কোনও মাথাব্যথাই সম্ভবত নেই। আবার স্রেফ বয়সের কারণে কোন ক্রিকেটারকে ব্রাত্য করার পথেও নন তিনি।
নিজে টেস্টে অসফল কামব্যাক করেছেন। নতুন উদ্যমে স্টান্স, টেকনিক বদলে নিজেকে পুনরায় আবিষ্কারের চেষ্টায় ছিলেন ২০১৬-র দিকে। আবার কেকেআরের দুই সুপারস্টার আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারিনদের ক্রমাগত ব্যাক করে গিয়েছেন। দুজনেই সেরা সময় ফেলে আসা সত্ত্বেও।
গুরু গম্ভীরের সঙ্গে কোহলির সম্পর্কের রসায়ন কেমন হতে চলেছে তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও উৎসাহ তুঙ্গে। ঘটনা হল, মাঠে একাধিকবার দুজনের মধ্যে লেগে গেলেও দুজনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কিন্তু একদমই সমান- আক্রমণাত্মক, হারতে তীব্র অপছন্দ করা, তীব্র প্যাশনের সমাহার দুজনকেই মিলিয়ে দিয়েছে। গম্ভীরের সঙ্গে কোহলি পার্টনারশিপ এবার জাতীয় দলে জমে যাওয়ার অপেক্ষায়। ভুললে চলবে না গম্ভীর জাতীয় দলে কামব্যাক করেছিলেন কোহলির ক্যাপ্টেনশিপেই। সেই ঘটনার রেশ অবশ্য মিশে গিয়েছে মাঠে দুজনের একাধিকবার দ্বৈরথের ঘটনায়। আবার রোহিতের সঙ্গে গম্ভীরের সম্পর্ক বরাবর ভালো। বারবার গম্ভীরের মুখে রোহিতের নেতৃত্বের দক্ষতা শোনা গিয়েছে।
গম্ভীর বরাবর তারকা প্রথার বিরোধী। সকলকে সমান প্রিজমে দেখতে ভালোবাসেন। দলের অনামি ক্রিকেটারদেরও সমানভাবে ব্যাক করেন। ২০১১-য় ধোনির ছায়ায় ঢাকা পড়েছিলেন। তাঁর চোয়াল চাপা ইনিংস ঢেকে দিয়েছিল ধোনির অবিশ্বাস্য লড়াই। ধোনিকে হিরোর সিংহাসনে বসানোর তীব্র বিরোধিতা করেছেন একাধিকবার। আক্ষেপ করে বলেছেন, তাঁর-ই ফিনিশ করে আসা উচিত ছিল।
তারকা প্রথা বিবর্জিত সিস্টেম আমদানি করতে চলেছেন গম্ভীর। সিটবেল্ট বাঁধুন, নতুন রাইডে ওঠার জন্য প্রস্তুত হয়ে যান।