নিজেদের স্ট্র্যাটেজি বিশ্বকাপের আগেই বদল করল টিম ইন্ডিয়া। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ফিরিয়ে নেওয়া হল রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে। যাঁর গায়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে 'ফিনিশড' তকমা জুটে গিয়েছিল, তাঁকেই ফিরিয়ে নেওয়া হল স্বমহিমায়। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে যে স্কোয়াড ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে রয়েছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। এশিয়া কাপে চোট পাওয়া অক্ষর প্যাটেলের বদলি হিসাবে ভাবা হল তাঁকে। তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে অশ্বিনকে বিশ্বকাপের স্কোয়াডেও নিয়ে নেওয়া হতে পারে।
বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, কুলদীপ যাদব, হার্দিক পান্ডিয়াদের মত নিয়মিতরা প্ৰথম দুই ওয়ানডেতে বিশ্রামে থাকবেন। দুই ম্যাচে দলের নেতৃত্ব সামলাবেন কেএল রাহুল।
সরকারিভাবে অশ্বিন ভারতের বিশ্বকাপের জন্য ঘোষিত স্কোয়াডে জায়গা পাননি। তবে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঘোষিত দলে পরিবর্তন করা যাবে। তারপর স্কোয়াডে বদল করতে হলে আইসিসির অনুমোদন প্রয়োজন।
তবে অশ্বিনের হঠাৎ করেই ওয়ানডেতে অন্তর্ভুক্তি নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেক তর্কবিতর্ক করে ভারতের যে স্কোয়াড ঘোষণা করা হয়েছিল, সেখানে পিচের চরিত্র, প্রতিপক্ষ দলের শক্তি বিবেচনাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। বাদ দেওয়া হয়েছিল সাম্প্রতিককালে দুরন্ত পারফরম্যান্স করা জুজবেন্দ্র চাহাল এবং অভিজ্ঞ অশ্বিনকে। আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালসের জার্সিতে দুরন্ত ছন্দে থাকা কুলদীপের অন্তর্ভুক্তি অনেকটাই প্রত্যাশিত ছিল। তবে অন্য এক স্পিনার অলরাউন্ডারের কোটায় টিম ম্যানেজমেন্ট এমন একজনকে খুঁজছিল যিনি লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিংও করতে পারেন। সেই অঙ্কেই দলে জায়গা পান অক্ষর।
তবে এবার অক্ষরের এশিয়া কাপের চোটে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে টিমের থিঙ্কট্যাঙ্ক। এমনিতে অশ্বিন লোয়ার অর্ডারে বিশ্বস্ত ব্যাট। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তথাকথিত অলরাউন্ডার না হয়েও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর ব্যাটিং দক্ষতা পরীক্ষিত।
এশিয়া কাপে অক্ষরের চোটের পর তড়িঘড়ি উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ওয়াশিংটন সুন্দরকে। তবে পরিস্থিতির উদ্ভব হলে অনভিজ্ঞ ওয়াশিংটন নন, বরং টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থা থাকবে বহু যুদ্ধের ঘোড়া অশ্বিনের ওপর।
এমনভাবেই ২০২১-এ টি২০ ওয়ার্ল্ড কাপে অশ্বিন জাতীয় দলে নেওয়া হয়েছিল। আন্তর্জাতিক স্তরে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে যিনি গত কয়েক বছরে হাতেগোনা কয়েকটি ম্যাচ খেলেছিলেন। তবে সেই বিশ্বকাপে আশানুরূপ পারফর্ম করতে পারেনি। ভারত-ও হতাশাজনক বিদায় নেয়।
তারপরেই ভেবে নেওয়া হয়েছিল অশ্বিনের সীমিত ওভারের কেরিয়ারে বোধহয় ফুলস্টপ পড়ে গিয়েছে। সেই ভাবনাকে মান্যতা দিয়েই ওয়ানডে এবং টি২০ থেকে একদম ছেঁটে ফেলা হয়েছিল দক্ষিণী অফস্পিনারকে। তবে এবার আবার নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ভারত।
অক্ষর এমনিতে বিশ্বকাপের আগে ফিট হয়ে উঠলেও চূড়ান্ত স্কোয়াডে তাঁকে না-ও রাখা হতে পারে। এশিয়া কাপে ব্যাট হাতে বাংলাদেশের বিপক্ষে দুরন্ত খেললেও বল হাতে একদম হতাশ করেছেন।
মিডল ওভারে রান বেঁধে রাখার কাজে ব্যর্থ তিনি। বাংলাদেশ ম্যাচেই ভরসা জোগাতে পারেননি তিনি। যে ম্যাচে কুলদীপ রিজার্ভে ছিলেন। তাই অক্ষর বিশ্বকাপের আগেই হ্যামস্ট্রিংয়ের ইনজুরি কাটিয়ে উঠতে পারলেও ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের ভাবনায় ভালভাবেই উঠে এসেছেন অশ্বিন। অন্তত বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়া সিরিজের স্কোয়াড থেকে তেমনটাই ধারণা ক্রিকেট মহলের।
এমনিতেই অশ্বিন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সীমিত ওভারে সাম্প্রতিককালে না খেললেও আইপিএল তো বটেই তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগেও অংশ নিয়েছেন নিয়মিত। তাছাড়া, ওয়ার্ল্ড কাপে ভারত যে ভেন্যুতে বিপক্ষ দলের মোকাবিলা করবে, যেমন চেন্নাই (বনাম অস্ট্রেলিয়া), লখনৌ (বনাম ইংল্যান্ড), কলকাতা (বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা) প্রথাগতভাবে স্পিন সহায়ক। এমন পিচে অশ্বিনের অগাধ অভিজ্ঞতা, চতুরতা ভারতীয় দলের সম্পদ হয়ে উঠতে পারে।
সবমিলিয়ে একদম শেষ ঘন্টায় অশ্বিনকে ওয়ার্ল্ড কাপের স্কোয়াডে নিয়ে নিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্ৰথম দুই ওয়ানডের স্কোয়াড:
কেএল রাহুল (ক্যাপ্টেন), রবীন্দ্র জাদেজা (ভাইস ক্যাপ্টেন), রুতুরাজ গায়কোয়াড, শুভমান গিল, শ্রেয়স আইয়ার, সূর্যকুমার যাদব, ঈশান কিষান, তিলক ভার্মা, শার্দূল ঠাকুর, ওয়াশিংটন সুন্দর, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, আর অশ্বিন, জসপ্রীত বুমরা, মহম্মদ সিরাজ, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডের স্কোয়াড:
রোহিত শর্মা (ক্যাপ্টেন), হার্দিক পান্ডিয়া (ভাইস ক্যাপ্টেন), বিরাট কোহলি, কুলদীপ যাদব, সূর্যকুমার যাদব, শার্দূল ঠাকুর, শুভমান গিল, শ্রেয়স আইয়ার, ঈশান কিষান, রবীন্দ্র জাদেজা, অক্ষর প্যাটেল, আর অশ্বিন, জসপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামি, মহম্মদ সিরাজ