বিশ্বকাপে ঝড় তুলে দিয়েছিলেন মহম্মদ শামি। একাই মাতিয়ে দিয়েছিলেন। সেরাদের ব্র্যাকেটে নিজেকে তুলে নিয়ে গিয়েছেন। ভারতের হয়ে বিশ্বকাপে সেরা পারফর্মার হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। এমনকি সর্বকালের সেরাদের তালিকাতেও শামি প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেকে।
তবে ঘটনার টুইস্ট হল বোর্ডের তরফেও কার্যত ঠিক করে ফেলা হয়েছে, মহম্মদ শামিকে সীমিত ওভারের ক্রিকেট থেকে ছেঁটে ফেলা হবে। সংবাদসংস্থার খবর এমনটাই। মূলত, দুটো কারণে, শামি বর্তমানে ৩৩। তিন ফরম্যাটে খেলার ধকল নিতে পারবেন না তিনি। ফুরিয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতেই শামিকে নিয়ে নিজস্ব নীতি নিয়ে চলতে চলেছে বিসিসিআই। সমস্ত ফরম্যাটের ক্রিকেটে খেলার বদলে বোর্ড চাইছে শামি কেবলমাত্র টেস্টে খেলুন। দুই ফরম্যাট ছেড়ে দিলে আরও সতেজ হয়ে দেশে-বিদেশে টেস্ট সিরিজে নিজেকে উজাড় করে দিতে পারবেন। এমনটাই ভাবা হচ্ছে। ইংল্যান্ডের স্টুয়ার্ট ব্রড, জেমস আন্ডারসনরা টেস্টে খেলেছেন বছরের পর বছর সীমিত ওভারের ফরম্যাটকে চিরতরে বিদায় জানিয়ে। সেই সূত্র-ই এবার বিসিসিআই আমদানি করতে চলেছে শামির জন্য। নিজেদের পেস আক্রমণের অন্যতম সেরা অস্ত্রকে সংরক্ষণ করে রাখার জন্য।
দ্বিতীয়ত, বর্তমান বয়স অনুযায়ী, পরবর্তী বিশ্বকাপে শামির অংশ নেওয়া কার্যত অসম্ভব। ৩৭ বছর বয়সেও তিনি যে মারণ ফর্মে খেলতে পারবেন সদ্য শেষ হওয়া ওয়ার্ল্ড কাপের মত, সেই আশা করছে না বোর্ড। তাই এখন থেকেই ব্যাক আপ বোলার হিসাবে নতুনদের গড়ে তোলার ভাবনা রয়েছে টিম ম্যানেজমেন্টের। অর্শদীপ সিং, আবেশ খান, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ, মুকেশ কুমারদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে যথা সম্ভব সুযোগ দেওয়ার প্ল্যান করা হচ্ছে।
আগামী বছরেই টি২০ ওয়ার্ল্ড কাপ। ছয় মাস পরে টি২০ ক্রিকেটের মহাযজ্ঞের আসর বসবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ক্যারিবীয় মুলুকে। প্ল্যানিংয়ে বড়সড় রদবদল না ঘটলে শামিকে এই টি২০ ওয়ার্ল্ড কাপে ভাবা হচ্ছে না। টিম ম্যানেজমেন্টের এক সূত্র সংবাদসংস্থাকে জানিয়েছেন, শামির টি-২০ বিশ্বকাপে খেলা নির্ভর করছে পুরোটাই আইপিএল ফর্মের ওপর। গুজরাট টাইটান্স-এর জার্সিতে আসন্ন আইপিএলে নিজেকে প্রমাণ করতে পারলেই স্কোয়াডে রাখা হতে পারে তাঁকে। টানা দুটো সিজনে গুজরাটের অবিশ্বাস্য ফর্মের পিছনেও শামির হাত। গুজরাটের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক তিনি।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে এই কারণেই শামিকে স্রেফ টেস্ট স্কোয়াডে রাখা হয়েছে। অগ্রাহ্য করা হয়েছে সীমিত ওভারের দুই ফরম্যাটে। তবে বর্তমানে শামির হালকা চোট রয়েছে। সেই চোট পুরোপুরি সারেনি তাঁর। দক্ষিণ আফ্রিকা গামী টেস্ট স্কোয়াডে তাঁকে রাখা হলেও ফিটনেস টেস্টে উত্তীর্ণ হতে হবে।
২০১৩-য় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ানডেতে অভিষেক ঘটেছিল তারকা পেসারের। তারপর গত একদশকে ১০১ ম্যাচ খেলেছেন। নামের পাশে জমা করেছেন ১৯৫ উইকেট। এর মধ্যে বিশ্বকাপে ৫৫ উইকেট নেওয়ার নজিরও তাঁর নামের পাশে। জাতীয় দলের হয়ে ২৩ টি টি২০ ম্যাচে অংশ নিয়েছেন। গত বছর টি২০ ওয়ার্ল্ড কাপের স্কোয়াডে ছিলেন। তবে বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়ে আর একটিও কুড়ি কুড়ির ম্যাচে খেলেননি। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমিফাইনাল ম্যাচ-ই তাঁর কেরিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচ হয়ে থেকেছে।
তাঁকে কি আর সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দেখা যাবে, সময়-ই উত্তর দেবে।