সালটা ২০০১, তারিখ ১৪ মার্চ। ঠিক ১৮ বছর আগে এই দিনেই বাইশ গজে ইতিহাস লিখেছিলেন ভিভিএস লক্ষ্মণ এবং রাহুল দ্রাবিড়। ভারতের দুই কিংবদন্তি ব্যাটসম্যানের চওড়া ব্যাটে ভর করে ভারত টেস্ট ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল। লক্ষ্মণ-দ্রাবিড়ের ৩৭৬ রানের পার্টনারশিপে সেদিন ভারত ১৭১ রানে জিতে মাঠ ছেড়েছিল।
কেউ কল্পনাও করতে পারেননি যে, স্টিভ ওয়ার অপ্রতিরোধ্য অস্ট্রেলিয়া দলের চাকা এভাবে বসিয়ে দিতে পারে সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের টিম ইন্ডিয়া। ঐতিহাসিক এই টেস্টের সাক্ষী ছিল ক্রিকেটের স্বর্গোদ্য়ান, কলকাতার ইডেন গার্ডেন্স। এই টেস্টের আগে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে গিয়ে ৩-০ হোয়াইটওয়াশ হয়ে এসেছিলেন সৌরভরা। এমনকি নিউজিল্যান্ডের কাছেও ২-০ হারতে হয়েছিল ক্রিকেটের বৃহত্তম সংস্করণে। বলতে গেল অত্যন্ত খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন শচীন-সৌরভরা।
আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ায় ইতিহাস ভারতের, এ শুধু টুইটের দিন
বর্ডার-গাভাস্কর ট্রফি খেলতে ভারতে এসেছিল স্টিভের অস্ট্রেলিয়া। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট ছিল কলকাতায়। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করেছিল অস্ট্রেলিয়া। ম্যাথিউ হেডেনের ৯৭ ও ক্যাপ্টেন স্টিভের ১১০ রানের ইনিংসের সৌজন্য অজিরা ৪৪৫ রান তুলেছিল স্কোরবোর্ডে। জবাবে ভারত ১৭১ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল। সর্বোচ্চ রান ছিল লক্ষ্মণেরই। ৫৯ রান করেছিলেন তিনি। গ্লেন ম্যাকগ্রাই একাই চার উইকেট তুলে ভারতের ব্যাটিং লাইন-আপ ধসিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর স্টিভের দল সৌরভ অ্যান্ড কোং-কে ফলো-অন করিয়েছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত দুর্দান্ত ভাবে ফিরে এসেছিল ম্যাচে।
ভারতের দুই ওপেনার শিবসুন্দর দাস (৩৯) ও সদগোপন রমেশ (৩০) ফিরে গিয়েছিলেন ৯৭ রানের মধ্যে। অস্ট্রেলিয়া যখন জয়ের স্বপ্নে বুঁদ। তখনই সব হিসেব পাল্টে দেওয়ার জন্য মাঠে নেমেছিলেন লক্ষ্মণ। ৬৩১ মিনিট ক্রিজে ছিলেন তিনি। খেলেছিলেন ৪৫২টি বল। ৪৪টি চারের সৌজন্যে খেলেছিলেন জীবনের সেরা ইনিংস। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ২৮১ রান। মাত্র ১৯ রানের জন্য প্রথম ভারতীয় হিসেবে টেস্টে ত্রি-শতরানকারী হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেন তিনি। ম্যাকগ্রার বলে পন্টিংয়ে হাতে ক্যাচ আউট হয়ে যান তিনি।
এবার দ্রাবিড়ের কথায় আসা যাক। লক্ষ্মণের সঙ্গে রেকর্ড রানের পার্টনারশিপের ম্যাচে ১৮০ রান করেছিলেন তিনি। 'দ্য ওয়াল' হয়ে উঠেছিলেন দুর্ভেদ্য প্রাচীর। ৩৫৩ বল খেলেছিলেন ৪৪৬ মিনিটের ইনিংসে। দ্রাবিড়ের ব্যাট থেকে এসেছিল ২০টি চার। রানআউট হয়ে না-ফিরলে তাঁরও ডাবল সেঞ্চুরি হয়ে যেত। ভারত সাত উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ৬৫৭ রান তুলে ডিক্লেয়ার করে। অস্ট্রেলিয়া গুটিয়ে গিয়েছিল ২১২ রানে। এই ম্যাচে লক্ষ্মণ-দ্রাবিড় ছাড়াও ভাস্বর হয়ে থাকবে হরভজন সিংয়ের নামও। ৩০.৩ ওভার বল করে ৭৩ রান দিয়ে ৬ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। আজও ইডেন গার্ডেন্সের বাইরে লক্ষ্মণ-দ্রাবিড়ের সেদিনের ছবি জ্বলজ্বল করছে। বলাই বাহুল্য ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন লক্ষ্মণ। আর এরপর থেকেই ভারতীয় ফ্যানেদের কাছে ভিভিএস হয়ে যান 'ভেরি ভিরি স্পেশ্যাল'।
Read the full story in English