Advertisment

উৎসবের মেজাজে 'সম্বর্ধনায়' ভাসছেন তিতাস, ভাগ করলেন 'বিশ্বজয়ের' অভিজ্ঞতা

আর্থিক প্রতিবন্ধকতা না থাকলেও নিজেকে প্রমাণ করা, কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল

author-image
IE Bangla Sports Desk
New Update
India women U-19 world cup, India Women u-19 wc, India Women U-19, India u-19 vs England U-19, India England U-19, Women U-19 world cup , India women world cup, india win world cup, ভারত বিশ্বকাপ, titas sandhu, তিতাস সাধু, তিতাস সাধু, বাংলা খবর,

তিতাস বলেন, ‘একদিন অন্যরা আমার কাছে ছিল অনুপ্রেরণা, আজ আমি অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা এটা ভাবতে বড্ড লজ্জা লাগছে।

বাঙালি মেয়েদের দাপটে বিশ্বকাপ। ঘরে ফিরেই ৫ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।সম্বর্ধনায় ভাসছেন তিতাস। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জিতে ঘরে ফিরেছেন বাংলা তথা চুঁচুড়ার গর্ব তিতাস সাধু। ইতিহাস তৈরি করেছে ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ মহিলা ক্রিকেট দল। প্রথম বিশ্বকাপ জিতল ভারত। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দাপটের সঙ্গে পারফরমেন্স করেছে। ব্যাটিং থেকে বোলিং প্রতিটা বিভাগেই দাপট দেখিয়েছে। অনূর্ধ্ব ১৯ মহিলা দলে ছিলেন তিন বঙ্গ তনয়া। শিলিগুড়ির রিচা ঘোষ, চুঁচুড়ার তিতাস সাধু ও হাওড়ার হৃষিতা বসু। এরসঙ্গে বোলিং কোচ ছিলেন বাংলার রাজীব দত্ত। রাজ্যের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিশ্বকাপজয়ী এই চারজনকেই ৫ লাখ টাকা করে দেবে রাজ্য সরকার।

Advertisment

ঘরে ফেরা মাত্রই উৎসবের মেজাজ। ধোনিদের ছুঁয়ে রেকর্ড ভারতীয় মহিলা দলের! ১৬ বছর আগের কাণ্ড ঘটিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইন্ডিয়া, এমন এক দারুণ মুহূর্তে, চাইনিজ নয়, ডাল-ভাত আর ভাজাতেই হবে সেলিব্রেশন, এমনটাই জানিয়েছিলেন ভারতীয় যুব মহিলা দলের সদস্য তিতাস সাধুর বাবা রণদীপ সাধু। বাস্তবে হল একেবারে তাই। বৃহস্পতিবার ঘরে ফিরে ডাল-ভাত আর ভাজাতেই ‘সেলিব্রেশনে’ সামিল বিশ্বজয়ী তিতাস। কঠিন অনুশীলনেও ডায়েটে ছেদ পড়েনি। বাড়ি ফিরে এসেও সেই রেশই বজায় রাখতে চায় তিতাস। লক্ষ্য আগামীতে আরও পরিণত খেলা দেশকে উপহার দেওয়া।

শুক্রবারই খাদিনামোরে নিজের স্কুল টেকনো ইণ্ডিয়া সম্বর্ধনা দিল তিতাসকে। স্কুলের তরফে তিতাসের হাতে তুলে দেওয়া হয় এক লক্ষ টাকার চেক। তুলে দেওয়া হয় স্মারকও। শিক্ষক-বন্ধুদের আবদার রাখতে বলও করতে হয় তিতাসকে। ঘরের মেয়েকে হাতের নাগালে পেয়ে শহর জুড়ে শুধুই উন্মাদনা। শহরের প্রাণকেন্দ্র ঘড়ির মোড় থেকে কলেজ রোডে তিতাসের বাড়ি পর্যন্ত বড় বড় পোস্টার, ব্যানারে ভাসছে তিতাসদের বিশ্বজয়ের ছবি।

মফঃস্বল থেকে সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রিটেনকে হারিয়ে বিশ্বজয় ভারতের। ম্যান অফ দ্য ম্যাচ চুঁচুড়ার তিতাস সাধু। কতটা কঠিন ছিল এই জার্নি? তিতাস বলেন, ‘ছোট থেকেই খেলার পরিবেশে বেড়ে ওঠা। আর্থিক প্রতিবন্ধকতা না থাকলেও নিজেকে প্রমাণ করা, কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল আমার কাছে। একের পর এক কঠিন লড়াই পেরিয়ে বিশ্বজয়। অনেকটা স্বপ্নের মতই’। ৮ মাস ধরে একসঙ্গে কাটানো টিম মেম্বারদের প্রচণ্ড মিস করছেন তিতাস। ঘরে ফিরেই শুভেচ্ছার বন্যা। তিতাস বলেন, ‘একদিন অন্যরা আমার কাছে ছিল অনুপ্রেরণা, আজ আমি অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা এটা ভাবতে বড্ড লজ্জা লাগছে। সকালে স্কুলে গিয়ে সহপাঠী অনেকের হাতে লেখা ফেস্টুনে ছিল ‘তুমিই অনুপ্রেরণা’। যা দেখে ভীষণ ভাবেই লজ্জিত তিতাস। ২০২৫ এ মহিলাদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলায় এখন লক্ষ্য তিতাসের। আর তার জন্য নিজেকে পুরোদমে তৈরি করতে চান তিতাস। পাশাপাশি তিতাস বলেন, ‘মেয়েদের জন্য একটা বিশ্বকাপ খুবই দরকার ছিল। এটা আগামী প্রজন্মের মেয়ের খেলাধুলায় অনেক বেশি উৎসাহিত করবে’।  

তিতাস বলেন, ‘বিশ্বজয় এমন এক অভিজ্ঞতা যা আমরা হয়তো আর কখনও ফিরে পাব না। এটা একেবারে অন্যরকম অভিজ্ঞতা। বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে যাদের সঙ্গে আটমাস একসঙ্গে প্রাকটিস, অবশেষে সাফল্য এটা গর্বের। তিতাস বলেন, ‘মহিলা ক্রিকেট যে এত বেশি প্রচার পাচ্ছে দেখে ভাল লাগছে। একটা বিশ্বকাপ জয় আমাদের জন্য দরকার ছিল যেহেতু সামনেই আইপিএল, সেটা মহিলা ক্রিকেটের জন্য একটা বড় দিক খুলে দিতে পারে। রিরাট কোহলির টুইট দেখে খুবই ভাল লেগেছে। এছাড়াও ঝুলন গোস্বামী নিজে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছে যেটা আমার খুবই ভাল লেগেছে’।

শৈশব থেকেই ক্রিকেটের প্রতি প্রবল ঝোঁক। চুঁচুড়ায় রাজেন্দ্র স্মৃতি সঙ্ঘের স্টেডিয়ামে তিতাসের সময় কাটত ক্লাব পর্যায়ের ম্যাচে স্কোরবোর্ড দেখে। তিতাসেট বাবা রণদীপ সাঁধু ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলছিলেন, “স্টেডিয়াম বানানো হয়েছিল পরিবারের বর্ষীয়ান সদস্য রাজেন্দ্র সাঁধুর স্মৃতির কথা মাথায় রেখে। তিতাসের সময় কাটত ম্যানুয়েল স্কোরবোর্ড ফলো করে। ক্লাবের ম্যাচ থাকলেই তিতাস পেন্সিল, পেন নিয়ে বসে যেত। গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করত স্কোরশিট। এভাবেই ক্রিকেটের সঙ্গে সখ্যতা জন্মায়। ওঁকে দেশের হয়ে যুব বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া দেখতে পারাটা দারুণ স্পেশ্যাল।”

রণবীরবাবু নিজে ছিলেন রাজ্য পর্যায়ের ক্রীড়াবিদ। তিতাসেরও প্রাথমিকভাবে ভালোবাসা ছিল এথলেটিক্সের প্রতি। বাবার কোচ পিনাকী কর্মকারের কাছে অনুশীলন শুরু করেছিলেন। স্কুলের স্প্রিন্ট দলের সদস্য ছিলেন। সেই সঙ্গে তিতাস একাডেমিতে ফুটবল খেলতেন। বাবার জন্যই তিতাসের শেষমেশ কেরিয়ারের গন্তব্য হয়ে দাঁড়ায় ক্রিকেট।

রনদীপ আরও বলেন, ‘এথলেটিক্সের জন্য ও প্রশিক্ষণ নিত। তাই শৈশব থেকেই ও মারাত্মক ক্ষিপ্র ছিল। একাডেমিতে দাদু অহিন্দ্র কুমার সাঁধুকে নিয়ে নিয়মিত ফুটবলও খেলতে যেত তিতাস। দু-তিন বছর এভাবেই কেটে গিয়েছিল। একদিন ওঁকে গোলপোস্ট লক্ষ্য করে টেনিস বল ছুঁড়তে বলেছিলাম। ওঁর থ্রো দেখেই ঠিক করে নিই ফাস্ট বোলার হওয়ার প্রশিক্ষণ দেব ওঁকে।”

বাবা রণবীর সাঁধু ফোনেই বলছিলেন, “ও এমনিতেই প্ৰথম থেকে দারুণ আউটসুইং করাতে পারত। আমি এবং কোচ প্রিয়ঙ্কর মুখোপাধ্যায় ওঁর রিস্ট পজিশন ঠিক করে ইনসুইং ধারালো করার কাজে মন দিই। ২০১৯/২০ সিজনেই ও বাংলার হয়ে খেলতে পারত। তবে ও কোনওভাবেই পরীক্ষা মিস করতে চাইছিল না। পরের বছরেই নেট বোলার হিসাবে তিতাস বাংলার সিনিয়র দলে যোগ দেয়। সেই সময় অনুশীলনে ওঁর বল দেখে প্রভাবিত হয়ে যান শিবশঙ্কর পাল। বেশ কিছু অনুশীলন ম্যাচে ওঁকে খেলতে বলেন শিবশঙ্কর। প্রথম সিজন সেভাবে ভালো খেলতে না পারলেও ঝুলন গোস্বামী, রুমেলি ধরদের মত সিনিয়রদের সঙ্গে থাকার অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফেলেছিল।”

hooghly news Titas Sadhu
Advertisment