স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় ধরা পড়লেন করোনায়। বিশ্বকাপের সূচি প্রকাশ করল ফিফা। মুম্বই ফুটবল কোচেরা এখন কর্মহীন। বাদ পড়লেন আর্চার। পিছালো যুব অলিম্পিক।
স্নেহাশিসের করোনা
গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারে আগেই পৌঁছে গিয়েছিল করোনার থাবা পরিবারে। বৌদি সহ তিন আত্মীয় করোনা পরীক্ষায় ধরা পড়েছিলেন। এবার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের দাদা করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ ধরা পড়লেন। আগে সিএবি সচিব স্নেহাশিসের সোয়াব টেস্ট করা হয়েছিল। বুধবার রাতে সেই রিপোর্ট এলে জানা যায় তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। কলকাতার যে বেসরকারি প্যাথলজিক্যাল ল্যাব থেকে এই টেস্ট হয়েছিল, সেখানে আরো একবার সোয়াব টেস্ট হবে।
কন্ট্যাক্ট টেস্টিং প্রটোকল মেনে সৌরভ সহ পরিবারের বাকিদেরও আইসলেশনে যেতে হবে এবার। পর্যবেক্ষণ এ রাখা হবে সবাইকে।
কিছুদিন আগেই চলতি মাসের ৮ তারিখে সৌরভ নিজের ৪৮ তম জন্মদিন পালন করেছেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। চিকিৎসকরা আপাতত তাঁকে ন্যূনতম ১০ দিনের কোয়ারেন্টাইন পর্ব কাটাতেই বলেছেন। ঘটনাচক্রে, শুক্রবারই বিসিসিআইয়ের এপেক্স কাউন্সিলের বৈঠক। সেখানে হাজির থাকবেন সৌরভ।
জানা গিয়েছে, কিছুদিন ধরেই স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের ধুম জ্বর হচ্ছিল। শেষ দু-দিন ধরে ফারেনহাইটের তাপমাত্রা পৌঁছে যাচ্ছিল ৯৯-১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে। তারপরেই বুধবার সোয়াব টেস্ট করা হয়। সেখানেই পজিটিভ রিপোর্ট আসে। এরপরেই শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় স্নেহাশিসকে।
গত মাসেই গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারকে কেন্দ্র করে একপ্রস্থ আক্রান্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই সময় রীতিমত বিবৃতি দিয়ে স্নেহাসিশ জানিয়েছিলেন, তিনি সুস্থই রয়েছেন। "আমি একদমই সুস্থ। প্রতিদিন স্বাভাবিকভাবে অফিসের কাজকর্ম করছি। আমাকে কেন্দ্র করে যে খবর প্রচার হচ্ছে তার কোনো ভিত্তি নেই। এগুলো এই কঠিন সময়ে সকলের কাছে প্রত্যাশিত নয়।"
ফিফা সূচি
কাতারে অনুষ্ঠিত হতে চলা ফুটবল বিশ্বকাপের সূচি চূড়ান্ত করে ফেলল ফিফা। ২০২১ এর কাতার বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে ২১ নভেম্বর। ফাইনাল ১৮ ডিসেম্বর। ফিফার তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে গ্রুপ পর্বে এবার একই দিনে চারটে করে ম্যাচ খেলা হবে। ১২ দিন ধরে চলবে গ্রুপ পর্বের ম্যাচ। আগামী বছরে মার্চেই বিশ্বকাপের চূড়ান্ত ড্র ঘোষিত হবে।
জানানো হয়েছে স্থানীয় সময় অনুযায়ী গ্রুপ পর্বের এই খেলাগুলি হবে দুপুর ১ টা (ভারতীয় সময় দুপুর সাড়ে তিনটে), বিকাল ৪টে (ভারতীয় সময় বিকাল সাড়ে ৬ টা), সন্ধ্যে ৭ টা (ভারতীয় সময় রাত সাড়ে ৯ টা) এবং রাত ১০ টায় (ভারতীয় সময় রাত সাড়ে ১২টা)। পরের দিকে নকআউট পর্বের খেলা হবে সন্ধে ৬ টা (ভারতীয় সময় রাত সাড়ে ৮ টা) এবং ১০ টা (ভারতীয় সময় রাত সাড়ে ১২ টা)।
উদ্বোধনী ম্যাচে কাতার খেলবে আল খোরের আল বায়ুত স্টেডিয়ামে। এই স্টেডিয়ামে একসঙ্গে ৬০ হাজার দর্শক খেলা উপভোগ করতে পারবেন। আর ফাইনাল খেলা হবে দোহার লুসেইল স্টেডিয়ামে। সেখানে দর্শক ধারনের ক্ষমতা ৮০ হাজার। খলিফা স্টেডিয়ামে প্লে অফ পর্বের তৃতীয় স্থান নির্নায়ক ম্যাচ হবে ১৭ ডিসেম্বর।
অসহায় ফুটবল কোচেরা
স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে হয়ত এই তিন জনই ফুটবল প্রশিক্ষণের কাজে যুক্ত থাকতেন। তবে করোনা কাল বদলে দিয়েছে অনেক কিছুই। প্রসাদ ভোঁসলে এখন সবজি বিক্রি করেন। শ্রীবাস্তব বাড়িতে কেবাব বানিয়ে বিক্রি করেন এবং সম্রাট রানা একটি রেস্তোরাঁর ডেলিভারি বিভাগে কর্মরত। এই তিনজনই মুম্বইয়ের প্রখ্যাত ফুটবল কোচ। একাধিক ফুটবল একাডেমিতে কোচিং করতেন তাঁরা। তবে সঙ্কটের সময় বলে দেওয়া হয়েছে আপাতত এখনই তাঁদের আর প্রয়োজন নেই।
তিনি যে স্কুলে চাকুরিরত ছিলেন, সেখানে শারীরবিদ্যা, মিউজিক এবং ডান্স শিক্ষকদের ছাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। তারপর থেকেই মুম্বইয়ের শহরতলি কান্দিভলিতে সবজি বিক্রি করছেন।
নিজের দুর্দশার কথা জানাতে গিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে ভোঁসলে বলছিলেন, "আমি ফিজিক্যাল এডুকেশনে মাস্টার্স করেছি। তবে যখন পেট খালি থাকে তখন আর এসব কথা চিন্তা করিনা। এখন সবজি ভরে ঠেলাগাড়িতে নিয়ে রাস্তায় বিক্রি করি।"
শ্রীবাস্তবের গল্প আবার অনেকটাই আলাদা। দিনের বেলায় দুটো স্কুলে বাচ্চাদের প্রশিক্ষণ দিতেন। বিকালে একটি ফুটবল একাডেমিতে কোচিং করতেন। ব্যাঙ্গালোরের একটি সংস্থার অধীনে তিনি কোচিং করতেন। জুন মাসে তাঁকে বলে দেওয়া হয় এখন তার বেতন দেওয়া সম্ভব হবে না।
শ্রীবাস্তব বলছিলেন, "গত বেশ কয়েকমাসের টাকা আমি পাইনি। হঠাৎ করেই আমার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে দেওয়া হয়। আমার বাবা অবসরপ্রাপ্ত। তাই আমাকেই এখন কেবাব বিক্রি করতে হচ্ছে।"
সম্রাট রানা আবার সিএসপিআই-য়ের ফুটবল কোচিং একাডেমির প্রধান ছিলেন। মুম্বইয়ের নয়টি জায়গায় এই সংস্থার কোচিং সেন্টার রয়েছে। যুব আইলিগ দলেরও প্রশিক্ষণ করতেন তিনি। তাঁর ভাইও প্রশিক্ষণের কাজে যুক্ত। তবে করোনা-কালে দুই ভাইই আপাতত কর্মহীন। তিনি দুঃখের সঙ্গে বলছিলেন, "জম্যাটো, সুইগির মত কোম্পানিতে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু ওখানে কোনো কর্মখালী নেই। তাই কাছের একটি রেস্তোরাঁয় ডেলিভারি বয় হিসাবে কাজ করছি।"
বাদ আর্চার
করোনা নিয়ম ভেঙে দল থেকে এবার বাদ পড়লেন জোফ্রে আর্চার। বৃহস্পতিবারই ইংল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হচ্ছে। তবে সেই টেস্টের আগেই করোনার বায়ো প্রটোকল নিয়ম লঙ্ঘন করেছিলেন আর্চার। তারপরেই দল থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকে। পাঁচদিন আইসোলেশনে রাখার পর আর্চারকে কোভিড পরীক্ষা দিতে হবে।
সাউদম্পটনের প্রথম টেস্ট নির্বিঘ্নেই শেষ হয়েছিল। তবে দ্বিতীয় টেস্টের আগেই গন্ডগোল। ইসিবি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, "দলের বায়ো নিরাপত্তা বিধি লঙ্ঘন করায় জোফ্রে আর্চারকে রেইজ দ্য ব্যাট সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের বাইরে রাখা হয়েছে। এরপরে আর্চার পাঁচদিনের আইসোলেশন পর্ব সেরে কোভিড টেস্ট করবেন। তারপর সেই রিপোর্ট নেগেটিভ হলেই দলের সঙ্গে যোগ দিতে পারবেন।"
ইসিবি বিবৃতিতে জানানো না হলেও নিজের কাণ্ডের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন ইংরেজ তারকা পেসার। তিনি বলেছেন, "যা করেছি তার জন্য গভীরভাবে দুঃখিত। কেবলমাত্র নিজেকেই নয়, গোটা দলকেই বিপদের সামনে দাঁড় করিয়েছি। নিজের কৃতকর্মের জন্য এই শাস্তি গ্রহণ করছি। বায়ো সিকিওর বাবলে থাকা প্রত্যেকের কাছে ক্ষমা চাইছি।"
পিছল ডাকার অলিম্পিক
অলিম্পিক পিছিয়ে গিয়েছে এক বছর। এবার সেই পথেই হাঁটল যুব অলিম্পিক। ২০২২ সালে সেনেগালের ডাকারে আয়োজিত হওয়ার কথা ছিল অলিম্পিকের এই ছোটদের সংস্করণ। সেই অলিম্পিকই এবার পিছিয়ে গেল চার বছর। ২০২৬ সালে এই অলিম্পিক হবে একই ভেন্যুতে। করোনা ভাইরাসের প্রকোপের কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সভাপতি টমাস বাখ এদিন জানিয়ে দেন এই বিষয়। তিনি আরো জানান, সেনেগালের প্রেসিডেন্ট ম্যাকি সালের সঙ্গে এই বিষয়ে দু-দিন আগেই ফোনে একপ্রস্থ আলোচনা হয়েছে তাঁর।
এই প্রথমবার অলিম্পিক আফ্রিকার কোনো দেশে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। বাখ এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট সূচি মেনে এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করলে অনেক ওয়ার্কলোড সমস্যা হয়ে যেত। কারণ টোকিও অলিম্পিক পিছিয়ে গিয়েছে ২০২১ এ। বেইজিংযে শীতকালীন অলিম্পিক হওয়ার কথা ২০২২ এর ফেব্রুয়ারিতে। বাখ বলছিলেন, "সবমিলিয়ে তিন বছরের মধ্যেই পাঁচটা অলিম্পিক আয়োজন করতে হত আমাদের। এই খবর হয়ত অনেক পতিশ্রুতিমান এথলিটদের কাছে হতাশাজনক। তবে আশা করি তাঁরা আমাদের পরিস্থিতি বুঝবেন।"
আইওসি-র বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, "আয়োজনগত চ্যালেঞ্জের কারণে এই সিদ্ধান্ত নিতে হল।"