বিশ্বকাপে খেলতে আসার আগে আইসিসি, বিসিসিআইকে বার্তা পাকিস্তানের। ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের ৩৭ বছর। শ্রীলঙ্কার ক্রীড়ামন্ত্রীর সন্দেহ। নির্বাসনের পরে মুখ খুললেন সাকিব। অবশেষে অর্জুন পাবেন চানু। আশ্বস্ত করলেন ক্রীড়ামন্ত্রী।
ভারতে বিশ্বকাপ ও পাকিস্তান:
পরপর জোড়া বিশ্বকাপ ভারতে। দুই বিশ্বকাপে খেলতে ভারতে আসার জন্য যাতে কোনো ভিসা সংক্রান্ত সমস্যায় না পড়তে হয়, সেইজন্য আইসিসির মাধ্যমে এখন থেকেই বিসিসিআইকে বার্তা দিয়ে রাখল পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। পিসিবি সিইও ওয়াসিম খান ক্রিকেটবাজ ইউটিউব চ্যানেলে জানিয়ে দিলেন, "২০২১ ও ২০২৩ আইসিসির জোড়া বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব ভারতের। আইসিসির কাছে আমাদের বার্তা বিসিসিআই যেন লিখিত প্রতিশ্রুতি দেয়। ভবিষ্যতে যেন ভিসা জনিত কোনো সমস্যায় না পড়তে হয় আমাদের।" সূত্রের খবর ইতিমধ্যেই আইসিসির কাছে লিখিত অনুরোধ জানিয়ে বিসিসিআইয়ের কাছ থেকে ক্লিয়ারেন্স আদায় করতে সচেষ্ট হয়েছে পিসিবি।
চলতি বছরে টি২০ বিশ্বকাপ যে হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তা একপ্রকার বলেই দেওয়া যায়। তবে আগামী বছর টি২০ বিশ্বকাপ কোথায় হয়, সেটাই আপাতত দেখার। সূচি অনুযায়ী, ভারতই বিশ্বকাপের আয়োজক। তবে আইপিএল আয়োজন করার পরে বিশ্বকাপে উৎসাহী নাও হতে পারে বিসিসিআই। সেক্ষেত্রে দের অজিদের ভাগ্যেই শিকে ছিঁড়তে পারে। আইসিসির এক কর্তা জানিয়েছেন, আইসিসির আসন্ন একজিকিউটিভ কমিটির বৈঠকেই চূড়ান্ত হতে পারে আগামী বিশ্বকাপের আয়োজক দেশের নাম। ঘটনা যাই হোক, বিশ্বকাপ খেলতে পাকিস্তানকে ভারতে আসতেই হবে। সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে যাতে কোনো রকম ছাড়পত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা না হয়, তা অগ্রিম নিশ্চিত করতে চাইছে পিসিবি।
আইসিসির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসাবে সৌরভকে পিসিবি সমর্থন করবে কিনা, তা-ও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, "সৌরভ কিংবা কলিন গ্রেভস নিজেদের ইচ্ছা এখনো খোলাখুলি স্বীকার করেননি। আমরা জানি না সৌরভ আইসিসির চেয়ারম্যান হতে চাইছে কিনা!" শশাঙ্ক মনোহরের ছেড়ে যাওয়া আসনে নাম উঠেছিল পিসিবি চেয়ারম্যান এহসান মানিরও। তবে তিনি ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, আপাতত সামনের তিন বছর পাক ক্রিকেটেই কাজ করতে চান তিনি।
বিশ্বকাপ জয়ের ৩৭ বছর
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১৮৩ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল ভারত। সেখান থেকে যে জেতা সম্ভব, তা ভাবতেই পারেননি কৃষ্ণমাচারী শ্রীকান্ত। টিম ইন্ডিয়া শুধু অসাধ্য সাধনও করেননি, দেশের বাইশ গজে বিপ্লব এনে দেয়। ঠিক ৩৭ বছর আগে এমন একটা দিনেই ক্রিকেট বিশ্বের সিংহাসনে বসেছিল ভারত। হিমালয় থেকে কন্যাকুমারিকা উত্তাল হয়ে যায় সেই জয়ে। বর্ষপূর্তির ঠিক আগেই অতীতের স্মৃতিরোমন্থন করতে গিয়ে শ্রীকান্ত বলছিলেন, এই ম্যাচ যে ইন্ডিয়া জিতবে, তা দূরতম কল্পনাতেও কেউ আনেনি।
স্টার স্পোর্টসের তামিল শোয়ে এসে শ্রীকান্ত বলছিলেন, "ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওই দুর্ধর্ষ ব্যাটিং লাইন আপ দেখে আমরা আশাই করিনি সেই ম্যাচে আমরা জিতব।"
কিন্তু খেলা ঘোরে কপিল দেবের পেপ টকে। কীভাবে! জাতীয় দলের প্রাক্তন তারকা জানাচ্ছিলেন, "কপিল কখনই বলেনি আমরা জিততে পারি। তবে ও একটাই কথা বলেছিল যে আমরা মাত্র ১৮৩ রানে আউট হয়ে গিয়েছি। তবে আমাদের সামর্থ্যের অনুযায়ী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এই ম্যাচ আমরা সহজে ছাড়বো না।" তারপরে পুরোটাই ইতিহাস।
তিনি বিশ্বকাপ জয়ের প্রসঙ্গে বলেন, ফাইনালে জয় হোক বা হার, সেই সময়ে বিসিসিআই প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। "ফাইনালের আগের দিন বোর্ডের সমস্ত শীর্ষ কর্তাদের এক বৈঠক হয়। সেই মিটিংয়ে জয়েন্ট সেক্রেটারি থেকে সকলেই ছিলেন। ওরা বলেছিল, ফাইনাল নিয়ে চিন্তা করো না। তোমরা যে এতদূর এসেছ, এটাই দারুণ কৃতিত্বের বিষয়। আগামীকাল তোমরা জেত অথবা হার, প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে।" জানাচ্ছিলেন শ্রীকান্ত।
লঙ্কান মন্ত্রীর 'সন্দেহ'
এতদিন জোর গলায় দাবি করে আসছিলেন, ভারতের কাছে ইচ্ছা করে হেরে গিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে গড়াপেটা করে হেরেছে লঙ্কা বাহিনী। এমনটা দাবি করে চাঞ্চল্য ফেলে দিয়েছিলেন তৎকালীন শ্রীলঙ্কান ক্রীড়ামন্ত্রী মহিন্দ্রানন্দ আলুথগাম্যাগে। যার পরিপ্রেক্ষিতে শ্রীলঙ্কার বর্তমান সরকার তদন্তের নির্দেশও দিয়েছেন। বুধবারই প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রীর বয়ান নথিভুক্ত করেছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা।
তবে এবার কিছুটা পিছু হটলেন তিনি। জানিয়ে দিলেন, এটা তাঁর সন্দেহ ছিল যেটা তিনি তদন্ত করে দেখতে চান। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, "আমার সন্দেহ খতিয়ে দেখা হোক। ২০১১ সালে আইসিসিকে আমার অভিযোগের বয়ান জমা দিয়েছি।"
সাকিবের স্বীকারোক্তি
এক বছরের জন্য নির্বাসনে সাকিব আল হাসান। এর জন্য নিজেকেই দায়ী করছেন বাংলাদেশের তারকা অলরাউন্ডার। দুষছেন ব্যাপারটাকে সিরিয়াসলি না নেওয়ার জন্য। ক্রিকবাজের এক চ্যাট শো এ সাকিব হর্ষ ভোগলের সঙ্গে আলাপচারিতায় বলেছেন, "আমাকে বেটিংয়ের প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়টাকে একদমই হালকা ভাবে নি-ই। আমি যখন দুর্নীতি বিরোধী কর্তাদের সঙ্গে দেখা করে সব কথা বললাম। তখন দেখলাম ওঁরা সবই জানেন। সত্যি কথা বলতে আমি এই কারণেই মাত্র এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছি। নাহলে ৫-১০ বছর ব্যানও হতে পারতাম।"
তিনি আপাতত অনুশোচনায় ভুগছেন। "বোকার মতোই এক ভুল করেছিলাম আমি। কারণ আমার অভিজ্ঞতা অনেক। আন্তর্জাতিক ম্যাচও খেলেছি প্রচুর। দুর্নীতি দমন ধারা নিয়ে ক্লাসও তো কম করিনি! আমার ওই ভুল করা একদমই উচিত হয়নি। যে ভুলের জন্য আমি ভীষণ অনুতপ্তও।" বলছেন তিনি।
সাকিব আরো বলেছেন, "কেউ বুকি বা অন্য কোনোরকম ফোন কল পেলে হালকা ভাবে নিও না অথবা স্রেফ ছেড়ে দিও না। আমাদের তৎক্ষণাৎ আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী শাখাকে জানাতে হবে। যাতে আমরা নিরাপদে থাকতে পারি। এই শিক্ষাই এই কয়েকদিনে পেলাম। এটা একটা বড় শিক্ষা।"
চানুর অর্জুন
ডোপের কলঙ্ক থেকে আগেই মুক্তি পেয়েছেন। এবার অর্জুন পুরস্কারে সম্মানিত হওয়ার পথে সঞ্জিতা চানু। ক্রীড়ামন্ত্রকের এক কর্তা জানান, ২০১৮ দিল্লি হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে দু-বার কমনওয়েলথ গেমসের সোনাজয়ী ভারত্তোলক সঞ্জিতা চানুকে এই পুরস্কার প্রদান করা হবে। দিল্লি হাইকোর্টের নির্দেশিকাই ছিল, ডোপমুক্ত প্রমাণ করতে পারলে তবেই যেন অর্জুনে ভূষিত করা হয় তাঁকে।
সংবাদসংস্থা পিটিআইকে ক্রীড়ামন্ত্রকের কর্তা বলেছেন, "আন্তর্জাতিক ফেডারেশনের তরফে সমস্ত ডোপিং অভিযোগ থেকে নিজেকে মুক্ত প্রমাণ করেছেন সঞ্জিতা চানু। তাই দিল্লি হাইকোর্টের নির্দেশিকা মেনে অর্জুন পুরস্কারে সম্মানিত করা হবে।"
২০১৭ সালে অর্জুন পুরস্কারের জন্য বিবেচিত না হওয়ার পরই সঞ্জিতা চানু দিল্লি হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন। তার নাম মনোনীত না হওয়ার বিষয়কে চ্যালেঞ্জ জানান তিনি সরাসরি। এই আইনি লড়াইয়ের মধ্যেই সঞ্জিতার নমুনায় ২০১৮ র মে মাসে নিষিদ্ধ বস্তুর সন্ধান মেলে। হাইকোর্টের তরফে সেই বছরেই নির্দেশ দেওয়া হয়, অর্জুন পুরস্কারের জন্য চানুকে মনোনীত করতে। তবে নিজেকে ডোপ মুক্ত প্রমাণ করতে পারলে তবেই যেন তাঁর নাম বিবেচিত হয়। এমনটাই বলা হয়।
গতমাসেই আন্তর্জাতিক ভারত্তোলক সংস্থা ওয়াডার নির্দেশে চানুর উপর এই অভিযোগ তুলে নেয়। এরজন্য ক্ষতিপূরণও পাবেন তিনি। তারপরেই দেশের ভারত্তোলক সংস্থার পক্ষ থেকে চিঠি লেখা হয় ক্রীড়ামন্ত্রকে।
ক্রীড়ামন্ত্রীর বার্তা
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে আগে জানানো হয়েছিল, অতিমারীর কারণে ক্রীড়াখাতে বরাদ্দ কমানো হতে পারে। প্রবল আর্থিক ক্ষতির সামনে প্রত্যেক সেক্টরই। সেই আঁচ এসে পড়েছে ক্রীড়া জগতেও। দেশের সবথেকে জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেটও এই ক্ষতির ঊর্ধ্বে নয়। এমন অবস্থাতেই ক্রীড়ামন্ত্রী কিরেন রিজিজু প্রত্যেকটি ক্রীড়া সংস্থার প্রধানের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন।
তারই পরিপ্রেক্ষিতে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে জানানো হয়, ক্রীড়াখাতে বরাদ্দ কমানো, বেতন হ্রাস এবং বিদেশি কোচের বিষয়ে আলোচনা হতে চলেছে। তবে কিরেন রিজিজু সাফ জানিয়ে দিলেন, কোনোভাবেই বরাদ্দ অর্থ কমানোর পরিকল্পনা নেই। সেই প্রতিবেদন চোখে পড়ে ক্রীড়ামন্ত্রীরও। তিনি সেই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বলেন, "এই প্রতিবেদন ঠিক নয়। ক্রীড়াখাতের কোনো অংশে বরাদ্দ কমানোর কোনো পরিকল্পনা নেই। স্পোর্টসের সমস্ত শেয়ার হোল্ডারদের সুবিধা মাথায় রেখে ভবিষ্যতের যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জাতীয় স্পোর্টস ফেডারেশনের সঙ্গেও আলোচনা করা হবে। একথা গতকালের বৈঠকেও আমি স্পষ্ট করে দিয়েছি।"