সৌরভকে সমর্থন সাঙ্গাকারার। করোনা পজিটিভ নন সৌরভ। জানা গেল পরীক্ষায়। আইএসএলে এবার খেলা হচ্ছে না ইস্টবেঙ্গলের।
সাঙ্গাকারা ও সৌরভ
প্রখর ক্রিকেট মস্তিষ্ক আর অগাধ অভিজ্ঞতা। এই দুই বিষয় থাকার কারণেই আইসিসির চেয়ারম্যান হওয়ার সবথেকে উপযুক্ত ব্যক্তি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। এমনটাই মনে করেন শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি কুমার সাঙ্গাকারা।
বর্তমানে মেলবোর্ন ক্রিকেট ক্লাবের চেয়ারম্যান লঙ্কান তারকা। ইন্ডিয়া টুডে-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানালেন, "আইসিসি কর্তা হয়ে সৌরভ আরো খেলাটার উন্নতি করতে পারবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে ওঁর বড় ভক্ত, ক্রিকেটার হিসাবে প্রসিদ্ধির জন্য নয়। ওঁর ক্রিকেট মগজের জন্য। খেলার উন্নতি ওর হৃদয় থেকে করতে চায়। ও আইসিসি চেয়ারম্যান হলে শুধু ভারত, ইংল্যান্ড বা শ্রীলঙ্কা নয় সামগ্রিকভাবে খেলার উন্নতি ঘটাতে সচেষ্ট হবে।"
পাশাপাশি তিনি আরো জানিয়ে রাখছেন, "একজন ক্রিকেট প্রশাসকের লক্ষ্য কেবল নিজের দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। আমি শ্রীলঙ্কা, ইন্ডিয়া বা অস্ট্রেলিয়া যে দেশেরই হই না কেন, খেলার সর্বাঙ্গীন উন্নতি করা আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।"
সৌরভ কেন প্রশাসক হিসেবে উপযুক্ত তাঁর আরো যুক্তি দিয়েছেন মহাতারকা। সাঙ্গাকারা জানাচ্ছেন, অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করার বিরল গুণ রয়েছে সৌরভের। নেতা হিসাবেও যা কাজে লাগিয়েছেন তিনি। "ও বিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট বা ক্রিকেট প্রশাসনে, কোচিংয়ে আসার আগে থেকে ওঁকে দেখছি। ও গোটা বিশ্বের ক্রিকেটারদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে পারে। এমসিসি ক্রিকেট কমিটিতেও এমনটা দেখেছি।" জানাচ্ছেন তিনি।
চলতি মাসের শুরুতেই আইসিসি চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়ান শশাঙ্ক মনোহর। অস্থায়ীভাবে আপাতত এই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন হংকংয়ের ইমরান খোয়াজা। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত তিনিই দায়িত্বে থাকবেন।
যাইহোক, সৌরভের চেয়ারম্যান হওয়ার পক্ষে সওয়াল করে একমাত্র প্রাক্তন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে মুখ খুললেন সাঙ্গাকারা। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ডের ডিরেক্টর গ্রেম স্মিথও সৌরভকে সমর্থন জানিয়েছেন।
সৌরভ যদিও এই জল্পনার মধ্যে জানিয়েছেন, তিনি চেয়ারম্যান পদের জন্য কোনো তাড়াহুড়ো করবেন না।
আইএসএল ও ইস্টবেঙ্গল
আরও গাড্ডায় পড়ে গেল ইস্টবেঙ্গল। চলতি মরশুমে নতুন বিনিয়োগকারী সংস্থার হাত ধরে আইএসএলে খেলতে উদ্যোগী হয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। তবে সেই গুড়ে বালি! বড় কোনো অঘটন না ঘটলে এবার আইএসএলে আর খেলতে দেখা যাবে না লাল হলুদ ব্রিগেডকে। জানা গিয়েছে, আইএসএলের আয়োজককারী সংস্থা এফএসডিএল সম্প্রতি একটি বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নতুন করে কোনো ক্লাবকে আর টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে না।
সূত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই এফএসডিএলের পক্ষ থেকে ১০ ক্লাবকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এই সিদ্ধান্ত। এরপরেই ইস্টবেঙ্গলের আইএসএলে খেলার উপর বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন দাঁড়িয়ে গিয়েছে। কোয়েসের প্রস্থানের পর থেকে এখনও ক্লাবে নতুন ইনভেস্টর বা স্পনসরের খোঁজ পায়নি লাল হলুদ ক্লাব।
আইএসএলের সঙ্গে যুক্ত এক কর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়ে দিলেন, "করোনা ভাইরাস উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে নতুন কোনো ক্লাবকে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব নয়। সম্ভবত একটা বা দুটো ভেন্যুতে আইএসএল খেলা হবে। তাই পরিকাঠামোগত সমস্যার বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে।"
ফেডারেশনের এক কর্তাও মেনে নিলেন বিষয়টা। তাঁর বক্তব্য, ইস্টবেঙ্গলকে আইএসএলে খেলতে হলে একমাসের মধ্যে স্পনসর চূড়ান্ত করে সমস্ত ফর্মালিটি মানতে হবে। যা কার্যত অসম্ভব।
এসব যুক্তি অবশ্য মানছেন না ইস্টবেঙ্গল সচিব কল্যাণ মজুমদার। তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে সাফ জানালেন, "স্বপ্ন দেখতে কারোর কোনো বাধা নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে এদেশে কোনো স্পোর্টিং ইভেন্ট আয়োজন করা কার্যত অসম্ভব। এমনকি আইপিএলও ইউএই-তে হচ্ছে। তাই এসব বিষয় নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাচ্ছি না।"
আরো পড়ুন
ভেড়ার লোম লাগিয়ে ছাগল বিক্রি পাকিস্তানে, কিনে ঠকলেন ক্রেতা
পাশাপাশি তাঁর আরো যুক্তি, "এবছর ইউরোপিয়ান লিগের মত ক্লোজড ডোর খেলা হলে স্পনসররাও আগ্রহী হবে কিনা, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। তাছাড়া ইউরোপীয় ঘরানার জৈব নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে ম্যাচ আয়োজন করতে পারা যাবে কিনা, তা নিয়েও সন্দিহান।"
আইএসএলে অংশগ্রহণ করার জন্য বার্ষিক খরচ প্রায় ৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৫ কোটি ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি-ও রয়েছে। কোয়েস বিদায়ের পর ক্লাব এখনো আর্থিক সমস্যায় জরাজীর্ণ। যদিও কিছুদিন আগেই স্পোর্টিং রাইটস ও ফিরে পেয়েছে ক্লাব। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু সংস্থার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে ইস্টবেঙ্গলের। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ধরে সমস্যা সমাধানের চেষ্টাতেও রয়েছে ক্লাব। তবে আইএসএলের এক কর্তা জানালেন, টুর্নামেন্ট যেভাবে আয়োজন করা হয় তাতে, এভাবে প্রবেশ করা মুশকিল।
সৌরভের করোনা-পরীক্ষা
সৌরভ ভক্তদের জন্য সুখবর। দাদা স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় করোনা আক্রান্ত হলেও, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নেগেটিভ। সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা হিসাবে নিজের নমুনা পরীক্ষা করতে দিয়েছিলেন সৌরভ। সেই পরীক্ষার ফলাফল জানা গেল শনিবার। রিপোর্ট যদিও এসেছে আরো একদিন আগে। সেখানে তিনি করোনা নেগেটিভ চিহ্নিত হয়েছেন। দাদা স্নেহাশিস সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর এক সপ্তাহ হয়ে গেল হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন মহারাজ।
আরও পড়ুন
সৌরভের এই ‘বদভ্যাসে’ আটকে যাচ্ছিল নেতৃত্বের সম্ভবনা, জানা গেল অবশেষে
সৌরভ ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি সংবাদসংস্থা পিটিআইকে জানান, "নিজের বৃদ্ধা মা এবং পরিবারের সঙ্গে থাকছেন সৌরভ। তাই সতর্কতা হিসাবে নিজের করোনা পরীক্ষা করিয়েছিলেন তিনি। শুক্রবার সন্ধ্যায় এই রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।"
দাদা স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ও দ্রুত সেরে উঠছেন। কিছুদিনের মধ্যেই হয়ত হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। এমনটাই জানিয়েছে সেই সূত্র।
গত মাসে মোমিনপুর বাসভবনে স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিবারের স্ত্রী, শ্বশুর, শাশুড়ি, পরিচারিকা করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারপর থেকেই গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারের অগ্রজ সৌরভের সঙ্গে বেহালার পৈতৃক বাড়িতে থাকছিলেন।