সিএসকে ড্রেসিংরুম নিয়ে মতামত জানালেন ডুপ্লেসিস। রোহিত, ধোনিকে নিয়ে আবার মুখ খুললেন পাঠান। বক্সিং ডে টেস্ট নিয়ে মতামত জানালেন মার্ক টেলর।
ধোনির অধিনায়কত্বের পরিবর্তন
শুরুতে ধোনি বোলারদের উপর বিশ্বাস করতেন না। পরের দিকে অবশ্য আস্থা রাখতে শুরু করেন। ধোনির অধিনায়কত্ব নিয়ে এমনই চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করে শোরগোল ফেলে দিলেন ইরফান পাঠান।
২০০৭ থেকে ২০১৩ অধিনায়ক ধোনির বিবর্তন নিয়ে বলতে গিয়েই পাঠান স্টার স্পোর্টসের ক্রিকেট কানেক্টেড অনুষ্ঠানে জানান, "২০০৭ সালে ধোনি বুঝতে পারে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার বড়সড় দায়িত্ব পালন করতে হবে। সেই কারণে বেশ উত্তেজিত হয়ে ছিল। তবে ধোনির সময় টিম মিটিং একদমই কম সময়ের হত। ২০০৭ হোক বা ২০১৩ র চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি টিম মিটিং বরাবরই ৫ মিনিটের হত।"
তবে কোথায় ঘটেছিল ধোনির ক্যাপ্টেনশিপের পরিবর্তন? সেই বিষয়েরই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে একসময়ের তারকা অলরাউন্ডার জানালেন বিশদে। কাছ থেকে দেখা নেতা ধোনিকে নিয়ে তাঁর বিশ্লেষণ, "অভিজ্ঞতা অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে ধোনির মধ্যে একটা জিনিসের পরিবর্তন ঘটে। তা হল, ২০০৭ সালে অধিনায়ক হওয়ার পর ধোনি উত্তেজনার বশে উইকেটকিপিংয়ের প্রান্ত থেকে ছুটে আসত বোলারের কাছে। বোলারদের ও নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করত। পরের দিকে ও নিজেই বোলারদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করার স্বাধীনতা দিত। ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ওর এপ্রোচ ছিল ঠান্ডা, শীতল।"
সিএসকে ও ডুপ্লেসিস
শুধু একা ধোনি নন। সিএসকে ড্রেসিংরুম একাধিক ক্রিকেটারের মগজাস্ত্রের উপর নির্ভর করে আছে। এমনটাই জানালেন, ধোনির চেন্নাই সতীর্থ ফাফ ডুপ্লেসিস। জিম্বাবোয়ের পেসার পমি ব্যাংগোয়ার সঙ্গে ইনস্টাগ্রাম লাইভ সেশনে এসেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার তারকা ক্রিকেটার। সেখানেই তিনি জানান, "চেন্নাই বলতেই যেটা আমার অভিজ্ঞতা তা হল, একটা শান্তশিষ্ট ড্রেসিংরুম। দলে একাধিক মাথা খাটানোর মত ক্রিকেটার রয়েছেন।"
বহু বছর ধরে সিএসকের জার্সিতে খেলছেন প্রোটিয়াজ তারকা। এখন সিএসকে পরিবারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গিয়েছেন তিনি। শুধু ব্যাটিং বা ফিল্ডিংই নয়, ধোনির অনুপস্থিতিতে সিএসকেকে নেতৃত্বও দিয়েছেন। তিনি এদিন বলছিলেন, "সিএসকে ড্রেসিংরুমের একটা আত্মবিশ্বাস রয়েছে যে কেউ না কেউ কঠিন পরিস্থিতিতে ম্যাচ আমাদের অনুকূলে নিয়ে আসবে। প্রত্যেকবার তাই আলাদা আলাদা ক্রিকেটার নায়ক হয়ে ওঠেন। দলের জয়ে প্রত্যেকেই অবদান রাখেন। এটা একটা আত্মবিশ্বাস যা আমরা বছরের পর বছর করে চলেছি।"
২০০৮ সালে আইপিএলের আবির্ভাবলগ্ন থেকে তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মুম্বই। ২০১০ ও ২০১১ এর পরপর দুবার শিরোপা যেতে ধোনির নেতৃত্বাধীন সিএসকে। এরপর দুবছর নির্বাসন পর্ব কাটিয়ে ২০১৮ এ ফের একবার চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। ট্রফি জয়ের পরিসংখ্যান বিচারে একমাত্র মুম্বইয়ের থেকেই পিছিয়ে সিএসকে।
রোহিতকে নিয়ে পাঠান
ক্রিজে রিল্যাক্সড মুডে থাকেন। সেই সঙ্গে বিধ্বংসীও। বাইশ গজে ব্যাট করার সময় এতটাই ফুরফুরে থাকেন যে বারেবারেই প্রশ্ন উঠেছে রোহিত শর্মা আদৌ সিরিয়াস তো! এমনই সংশয়ের অবসান ঘটিয়ে ইরফান পাঠান জানিয়ে দিলেন, রিল্যাক্সড থাকলেও কঠোর পরিশ্রমে কোনো খামতি দেননা হিটম্যান।
স্টার স্পোর্টসের ক্রিকেট কানেক্টেড অনুষ্ঠানে পাঠান জানালেন, "রোহিতের থেকে কেউ যদি বেশি রিল্যাক্সড মুডে ব্যাটিং করেন। সময় নিয়ে থাকেন। তাহলে অনেকেই ভুল বোঝেন। অনেকেই তাঁকে বেশি পরিশ্রম করতে বলেন। ওয়াসিম জাফরই যেমন। ওঁর ক্রিকেটীয় দ্যুতির দিকে তাকানো হোক। যখন রান নিত একদম ফুরফুরে মেজাজে থাকত। ব্যাট করার সময় নিজের সময় নিয়ে খেলত। আমরা খালি ভাবতাম, ও আরো বেশি পরিশ্রম করে না কেন! ঘটনা হল ও কিন্তু সত্যি সত্যি কঠোর পরিশ্রম করত।"
এরপরেই রোহিতের প্রসঙ্গ এনেছেন তিনি। পাঠান জানান, "বাইরে থেকে আমরা ভাবতাম রোহিতের আরো বেশি পরিশ্রম করা প্রয়োজন। আরো বেশি নিজেকে মেলে ধরা উচিত। তবে ওঁর সঙ্গে কথা বলার সময় ও কিন্তু পরিশ্রম করার কথা বলত, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করত। সব সময়েই ব্যক্তির আগে ওর কাছে দল প্রাধান্য পায়।"
কেরিয়ারের শুরুতে ধারাবাহিকতা ছিল না। তবে পরের দিকে নিজেকে আকাশছোঁয়া উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন হিটম্যান। সেই প্রসঙ্গেই পাঠান জাতীয় দলে তাঁর প্রাক্তন সতীর্থকে নিয়ে বলেন, "এই কারণেই রোহিত মুম্বই ইন্ডিয়ানসের ক্যাপ্টেন হিসাবে এত সফল। ২০১১সালের বিশ্বকাপে বাদ পড়েছিল। তারপর আর কড়া প্রতিজ্ঞা নিয়ে জাতীয় দলে ফিরে এসেছে ও।"
টেলরের পরামর্শ
ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়ার বক্সিং ডে টেস্ট আইকনিক। তাই এমন টেস্ট কোনোভাবেই দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে খেলা উচিত হবে না এমনটাই মনে করছেন অস্ট্রেলীয় কিংবদন্তি মার্ক টেলর। তিনি সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন, প্রয়োজনে এমসিজি থেকে ম্যাচ সরিয়ে পার্থের অপটাস স্টেডিয়াম কিম্বা এডিলেড ওভালে খেলা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হোক।
গত কয়েক সপ্তাহে ভিক্টরিয়া প্রদেশে করোনা সংক্রমণ বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই। তাই মেলবোর্নে জুড়ে পুনরায় লকডাউন জারি করতে বাধ্য হয়েছে অস্ট্রেলীয় সরকার।
এর মধ্যেই চ্যানেল ৯ এ মার্ক টেলর জানিয়েছেন, "এই ম্যাচ কি কোনোভাবে সরানো সম্ভব? ক্রিসমাসের সময় কেবলমাত্র এমসিজিতেই মাত্র ১০ হাজার কিংবা ২০ হাজার দর্শক খেলা দেখতে পারবেন। ভারত অস্ট্রেলিয়ার আইকনিক টেস্ট ম্যাচ দেখার জন্য যা মোটেই যথেষ্ট নয়।"
এর সমাধান হিসাবে তিনি বলেছেন, "পার্থের অপটাস স্টেডিয়াম কিংবা এডিলেড ওভালে খেলা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হলে পুরো ভেন্যুটাই ব্যবহার করা সম্ভব। এডিলেডের দর্শকরা ভারতীয়দের খেলা দেখতে পছন্দ করে। মনে আছে, বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের টিকিট মাত্র ৫২ মিনিটে বিক্রি হয়ে গিয়েছিল।"
মার্ক টেলর মনে করছেন পারথের ওয়াকা এই সুযোগে ইন্দো-অজি সিরিজের ম্যাচ আয়োজনের সুযোগ পেতে পারে। "বাকি ভেন্যুগুলো বিশেষ করে পারথ এই সিরিজের ম্যাচ আয়োজন করতে মরিয়া থাকবে। কারণ ভরা ওয়াকার গ্যালারি দেখতে ভালোই লাগে।"