সৌরভ-বুকাননের সংঘাতের নেপথ্য কাহিনী জানালেন আকাশ চোপড়া। শ্রীলঙ্কা সরকারের তদন্তে মুখ খুলল আইসিসি। করোনা-মুক্ত ডিংকো সিং। ক্রিকেট দুনিয়ার ক্ষোভের মুখে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
সংঘাত সৌরভ-বুকাননের
কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রাক্তন কোচ জন বুকাননের তৎকালীন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্দ সম্পর্কের কথা অজানা নয়। আইপিএলে কেকেআরের দলের রাশ ছিল এই দুজনের হাতেই। তবে কেকেআরে বুকানন-সৌরভের সম্পর্কে নতুনভাবে আলোচনায় নিয়ে এলেন আকাশ চোপড়া। জানালেন, শুরুতে সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। তবে ২০০৯ এর পর পরিস্থিতি একদম খারাপ হয়ে যায়।
নিজের ইউটিউব চ্যানেলে আকাশ চোপড়া জানিয়েছেন, "আইপিএলের প্রথম দিকে জন বুকানন ছিলেন। রিকি পন্টিং ছিলেন। সেই সময় ক্যাপ্টেন ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ওঁদের মধ্যে সম্পর্ক শুরুতে বেশ ভালো ছিল। তবে পরে তা খারাপ হয়ে যায়।"
আকাশ চোপড়া বলেছেন, "বুকাননের কাজ করার ধরণ আলাদা। আবার, সৌরভের টেম্পারমেন্টও অন্য রকম। শেষ পর্যন্ত সৌরভকে ক্যাপ্টেন্সিপ থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন বুকানন। যে কাজে পরের বছরেই তিনি সফল হন। প্রথম মরশুমে কেকেআর ষষ্ঠ স্থানে শেষ করে। সৌরভকে সরিয়ে দেওয়ার পর ম্যাকালামের নেতৃত্বে কেকেআর অষ্টম স্থানে ফিনিশ করে।"
জাতীয় দলের প্রাক্তন তারকা জানিয়েছেন, ২০০৯ সালের পর পরিস্থিতি একদম তলানিতে ঠেকে। দল একদম নিচে ফিনিশ করে। কোচকে ছাটিয়ে দেওয়া হয়। সৌরভকে আরো একবার ক্যাপ্টেন করা হয়।
আইসিসির বক্তব্য
ঘরে বাইরে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছিল শ্রীলঙ্কা সরকার। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে গড়াপেটা হয়েছিল, এমন অভিযোগ পেয়েই তদন্ত শুরু করে লঙ্কান সরকার। দেশ-বিদেশে কড়া সমালোচিত হওয়ার পর এবার লঙ্কা-সরকারকে তোপ দাগল আইসিসি-ও। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থার পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হল, প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রীর অভিযোগের কোনো সারবত্তাই নেই। মাহিন্দ্রনন্দ আলুথগামগে জানিয়েছিলেন, তিনি বিশ্বকাপের পরেই আইসিসির কাছে লিখিত চিঠি দিয়েছিলেন। সেই বক্তব্য খারিজ করে আইসিসির পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হল, এরকম কোন চিঠিই জমা পড়েনি।
আইসিসির দুর্নীতি দমন শাখার শীর্ষ কর্তা আলেক্স মার্শাল জানিয়ে দেন, "২০১১ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে কোনো সন্দেহই নেই। আইসিসির অপরাধ দমন শাখা সম্প্রতি বিশ্বকাপের ফাইনাল নিয়ে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে খতিয়ে দেখেছে। অভিযোগকে মান্যতা দেওয়ার মত আমাদের কাছে এমন কোনো প্রমাণ আসেনি যার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করতে পারব।"
আইসিসিকে পাঠানো শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রীর পাঠানো লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মার্শাল বলেছেন, "যে সময়ের কথা বলা হয়েছে সেই সময়ে আইসিসির পদস্থ আধিকারিকদের কাছে এমন কোনো চিঠি আসেনি। যে চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করা সম্ভব।"
প্রাক্তন মন্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটা করে যে তদন্ত শুরু হয়েছিল, সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই তা শেষ করে দেওয়া হয়েছিল শ্রীলঙ্কা সরকারের পক্ষ থেকে। জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণ না থাকায় তদন্তে ইতি টানা হচ্ছে।
ডিংকো সিং হারালেন করোনাকে
করোনা ভাইরাসের অতিমারীর মধ্যেই সুখবর। ক্যান্সারে আক্রান্ত সোনাজয়ী বক্সার ডিংকো সিং মারণ ভাইরাসকে বধ করলেন। দীর্ঘদিন প্রায় এক মাস আক্রান্ত হওয়ার পর এবার তার করোনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ এসেছে। করোনা-পজিটিভ ধরা পড়ার পরে ইমফলের রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ ন্যাশনাল সায়েন্সেস (রিমস) এ চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
দেশবাসীকে প্রথম এই সুখবর দেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং। তিনি নিজের টুইটারে লেখেন, "দিল্লি থেকে ফেরার পর বক্সিং জগতের আইকন এবং এশিয়ান গেমসের সোনাজয়ী ডিংকো সিংয়ের করোনার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। এটা শুনেই ভালো লাগছে।"
এর আগে তারকা বক্সারের পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করেই এয়ারলিফট করে দিল্লিতে নিয়ে আসা হয় ক্যানসার চিকিৎসার জন্য। সেখানে একপ্রস্থ চিকিৎসা সেরে এম্বুলেন্সেই দিল্লি থেকে ইমফল ফিরেছিলেন তিনি।
তারপরেই করোনা ধরা পড়ায় পরিস্থিতি জটিল হয়ে দাঁড়ায়।সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে তিনি জানান, "হসপিটালে থাকার সময় পাঁচবার করোনার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিল। আমার পরে যাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসা করতে আসছেন, তাঁরা আমার আগেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন, এসব দেখে ট্রমার মধ্যে চলে গিয়েছিলাম। তবে চিকিৎসক ও নার্সদের ধন্যবাদ আমাকে আরো নিয়ে যাওয়ার জন্য।"
বরিস জনসন ও ক্রিকেট
ভাইরাস সংক্রমণে অন্য সবকিছু শিথিল করা হলেও, আমোদমূলক ক্রিকেটে এখনই ছাড় নয়। এমন কথাই জানিয়ে দিয়েছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তারপরেই ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড তো বটেই ক্রিকেটাররাও বরিস জনসনের সমালোচনা শুরু করেছেন। এবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে একহাত নিলেন প্রাক্তন অধিনায়ক মাইকেল ভন।
নিজের টুইটারে সরাসরি সমালোচনা করে ভন লিখেছেন, "প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য পুরো আবর্জনার মত। উনি নিজেও জানেন না, খেলাটার কতটা ক্ষতি করছেন! আগামীকাল থেকে সবাই পাবে বসে মজা করতে পারবে। অর্থহীন কথাবার্তা।"
গতমাসে হাউস অফ কমন্স এ কনজারভেটিভ পার্টির এমপি গ্রেগরি ক্লার্কের একটি প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে জনসন জানান, “ক্রিকেটের যেতা সমস্যা সেটা সবাই জানে। বল হল ভাইরাস সংক্রমণের একটি স্বাভাবিক বাহক। যে কোনো রেটে তা ভাইরাস ছড়াতে পারে। আমাদের বহু বিজ্ঞানী বন্ধুর সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এই মুহূর্তে করোনা-মুক্ত পরিবেশে কীভাবে খেলা যায়, সেই বিষয়ে ভাবনা চিন্তা চলছে। তবে এর জন্য নির্দেশিকা বদলানো যাবে না।”
এরপরে গত শুক্রবার জনসন এলবিসি রেডিওয় ফের বলেন, "বল একটা ফ্যাক্টর হতে পারে। তবে এটা বলের বিষয় নয়। এটা টি ব্রেক, চেঞ্জিং রুম এবং আরো অনেক কিছু। টেনিসে এতটা সংস্পর্শে আসার ব্যাপার নেই, যতটা ক্রিকেটে রয়েছে।"
ইসিবি সরাসরি নিজেদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, "ক্রিকেট একদমই বডি কন্টাক্ট গেম নয়। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে খেলা যায়। বর্তমানে যে সব বিষয়ে ছাড় দেওয়া হয়েছে, তাদের মতোই সম্পূর্ন নিরাপদে ক্রিকেটে খেলা সম্ভব।"