আর মাত্র কয়েকটা দিন। তারপরেই টোকিওর বিমানে চড়ে বসবেন বাংলা থেকে অলিম্পিকে জিমন্যাস্টিকে সুযোগ পাওয়া প্রথম তারকা প্রণতি নায়েক। তবে তার আগেই ফের বিতর্কের মুখে পিংলার তরুণী। প্রণতির সঙ্গে অলিম্পিকগামী দলে না রাখায় কোচ মিনারা বেগম এবার সরাসরি দেশের অলিম্পিক সংস্থাকে ইমেল করলেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসেই প্রথম জানানো হয়েছিল, প্রণতি নায়েকের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত কোচ মিনারা বেগমকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না টোকিওয়। বরং বদলে নিয়ে প্রণতির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে সাইয়ের লখন মনোহর শর্মাকে। তারপরেই বেনজির টানাপোড়েনে দগ্ধ হয় ভারতীয় জিমন্যাস্টিক মহল।
আরো পড়ুন: অলিম্পিকে বঞ্চিত বাংলা! কোচ মিনারা থাকছেন না কৃতী প্রণতির পাশে, ক্ষোভ তুঙ্গে
এবার চাঞ্চল্যকর ভাবে ভারতীয় অলিম্পিকগামী দল বিমানে ওড়ার কয়েক সপ্তাহ আগে সরাসরি মিনারা বেগম এবার ইমেল করলেন জাতীয় অলিম্পিক সংস্থাকে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কাছে সেই ইমেলের বয়ান রয়েছে।
বিস্ফোরক সেই ইমেলের ছত্রে ছত্রে আহত মিনারা একাধিক অভিযোগ এনেছেন। যা বলেছেন ইমেলে তা হুবহু তুলে দেওয়া হল-
"মহিলা জিমন্যাস্টিক দলের বর্তমান এবং সাই-য়ের প্রাক্তন কোচ আমি মিনারা বেগম। আমার ছাত্রী প্রণতি নায়েক এবার অলিম্পিকে যোগ্যতা অর্জন করেছে। ওঁকে সাত বছর থেকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে। জাতীয় পর্যায়ে প্রণতি একাধিক পদক জিতেছে। ২০০৮-এ চিলড্রেন এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করেছিল ও। সেখান থেকেই আন্তর্জাতিক স্তরে প্রণতির যাত্রা শুরু হয়। তবে আমার লক্ষ্যই ছিল অলিম্পিক। ১৮ বছর দীর্ঘ অনুশীলনের মাধ্যমে ওঁকে অলিম্পিকের জন্য প্রস্তুত করেছিলাম। ২০১৮-র কমনওয়েলথ গেমস, এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ, ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের মত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ও প্রতিনিধিত্ব করেছে। ২০১৯-এর মঙ্গোলিয়ায় এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথমবার ব্রোঞ্জ জিতে পদকলাভ করে। ২০১৯-এর স্টুটগার্টে পারফরম্যান্সের সুবাদে প্রণতি অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।"
এরপরে ইমেলে তিনি আরো জানিয়েছেন, "এই ইমেল লেখার উদ্দেশ্য হল, আপনাদের অবহিত করা যে এতদিন দেশের হয়ে কোচিং করালেও অলিম্পিকের মত আমার কেরিয়ারের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টে আমাকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, বঞ্চিত করা হচ্ছে। ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারিতে সাই-য়ের হয়ে অবসর নিলেও সেই বছরের একদম শেষ পর্যন্ত প্রণতিকে কোচিং করিয়ে গিয়েছি। দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী স্টেডিয়ামে ক্যাম্পও করেছি। সাইয়ের তরফে বলা হচ্ছে, প্রণতি আপাতত নতুন কোচের তত্ত্বাবধানে যাঁর বয়স মাত্র ২৭ বছর। জেলা স্তরের এথলিটদেরও যাঁর কোচিং করানোর কোনো অভিজ্ঞতা নেই। অলিম্পিকের আগে অনভিজ্ঞ কোচের কাছে প্রণতিকে ঠেলে দিয়ে প্রস্তুতিই কার্যত বিঘ্ন ঘটানো হল।"
এরপরে মিনারার আরো সংযোজন, "সাইয়ের ডিজি-র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলা হয়, জুম কলে নতুন কোচ ট্রেনিং করছেন প্রণতির। তাঁকেই নিয়োগ করা হয়েছে অলিম্পিকের জন্য। খেলাধুলার সঙ্গে সংস্রব রাখার জন্য অনলাইনে ট্রেনিং করা যেতেই পারে। তবে অলিম্পিক এথলিটদের কোচিং অনলাইনে করা সম্ভবই নয়। ১৮ বছরের দীর্ঘ কোচিং কেরিয়ারে অলিম্পিক পদক নিয়ে আনার স্বপ্ন কার্যত ধূলিসাৎ হয়ে গেল স্রেফ রাজনীতির প্যাঁচে। খেলাধুলার রাজনীতির শিকার হলাম আমি। অনুগ্রহ করে এই বিষয়টি নজর দিন।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মিনারা বেগম কার্যত ভেঙে পড়া গলায় বলে দেন, "জাতীয় অলিম্পিক সংস্থার তরফে এখনো কোনো প্রত্যুত্তর পাইনি। কোনো দেশে এভাবে এথলিটের পছন্দ মত কোচকে জুড়ে দেওয়া হয়না। ২০১৯ পর্যন্ত প্রণতির জন্য সমস্ত কিছু ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। সরকারি স্তরে সমস্ত সুযোগ সুবিধা, টপস-এ নাম অন্তর্ভুক্ত করা সমস্তই নিজের হাতে সামলেছি। আর লক্ষ্যে পৌঁছে যাওয়ার পরেই আমাকে সরিয়ে দেওয়া হল। সাইয়ের ডিরেক্টররা সবসময়েই চাইছিলেন তাঁদের কোচ যাক। সেই রাজনীতির বলি হয়েই প্রণতিকে তুলে দেওয়া হল অনভিজ্ঞ ২৭ বছরের লখন শর্মার হাতে। আমার অলিম্পিকে কোচিং করানোর সমস্ত স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন