Advertisment

প্রথমসারির ক্রিকেটারের সঙ্গে বুকির যোগ ছিল, তদন্তের সময় পেলাম না: আইপিএল তদন্তকারী

বাইশগজে বেটিং কাণ্ডে নাম উঠে আসছে এক প্রথমসারির ভারতীয় ক্রিকেটারের। ২০১১-র বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্যও ছিলেন তিনি। ২০০৮-০৯ মরসুমে একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে বুকির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের কথা শোনা যাচ্ছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
ipl-trophy-759

কোন দল কেমন হল

বাইশগজে বেটিং কাণ্ডে নাম উঠে আসছে এক প্রথমসারির ভারতীয় ক্রিকেটারের। ২০১১-র বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় দলের সদস্যও ছিলেন তিনি। ২০০৮-০৯ মরসুমে একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে বুকির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের কথা শোনা যাচ্ছে। এমনকি সেই ক্রিকেটার ও বুকির কথোপকথনের রেকর্ডও রয়েছে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত পুলিশের এক সিনিয়র তদন্তকারীর কাছে। তিনি জানিয়েছেন যে, বুকি তাঁকে তথ্য প্রমাণ দিতে ইচ্ছুকও ছিলেন। কিন্তু পরে সে পিছু হটে। যার ফলে বিষয়টা ধামাচাপা পড়ে যায়।

Advertisment

২০১৩ সালের আইপিএল দুর্নীতি তদন্তের জন্য সুপ্রিম কোর্ট পুলিশ অফিসার বিবি মিশ্রকে নিয়োগ করেছিল। দীর্ঘদিন পর মিশ্র মুখ খুললেন ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ এর সামনে। সাফ জানিয়ে দিলেন যে, সময়ের অভাবে ধাক্কা খেয়েছে তাঁর তদন্ত প্রক্তিয়া। এমনকি ঘটনাচক্রে দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে রিপোর্ট পেশ করার আগের দিনই তাঁর সঙ্গে বুকির কথা হয়েছিল। মিশ্রর তদন্তে ন’জন ক্রিকেটারের নাম উঠে এসেছিল। কিন্তু প্রকাশ্যে এসেছিল কয়েকজনের কথাই।

আরও পড়ুন: ভারতে ম্যাচ-ফিক্সিংয়ে জড়িত দু’জন অস্ট্রেলীয়, তিনজন ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার?

২০০৮-০৯ মরসুমে ক্রিকেটার ও বুকির কথোপকথন প্রসঙ্গে মিশ্র বললেন, “ভারতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার সময়ই এরকমটা ঘটেছে তার কোনও দৃষ্টান্ত নেই। আমি যৌক্তিক কারণেই এর তদন্ত করে উঠতে পারিনি। এটাই আমার বক্তব্য। কিন্তু বিষয়টা আন্তর্জাতিক ম্যাচ চলাকালীনই ঘটেছে, এটা বলতে পারি। হতে পারে ম্যাচের এক বা দু’দিন আগে। ২০০৮-০৯ সালের ঘটনা।” যদিও মিশ্র ক্রিকেটারের নাম করেননি। ঘটনার প্রসঙ্গে তাঁর আরও সংযোজন, “প্লেয়ার আর বুকির কথাবার্তা ফোনেই হয়েছিল। সেটা রেকর্ড করা রয়েছে। এটা পুরো তদন্ত করতে আরও অনেক সময় লেগে যেত। ৩১ অক্টোবর পেরিয়ে যেত। ফোনে দু’টো কন্ঠস্বর ভেসে উঠেছিল। অবশ্যই একটা বুকির ও অন্যটা প্লেয়ারের। আমাকে বিষয়টা খতিয়ে দেখতে হলে ক্রিকেটারদের ও বুকির কন্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করে ফরেন্সিককে পাঠাতে হতো। যেটা করতে এক মাসেরও বেশি সময় লেগে যেত। আমি তো খেলোয়াড়দের মুখোমুখিও হতে পারেনি। যদিও বুকি জানিয়েছিল যে, সে প্লেয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল। আমি তথ্যপ্রমাণ পেয়েও এগোতে পারিনি। এমনকি বুকিও শেষ মুহূর্তে সরে আসে।”

মিশ্র আরও জানালেন, কেন তিনি সময়টা পেলেন না। তিনি বলেছেন, “এন শ্রীনিবাসন (প্রাক্তন বিসিসিআই সভাপতি), গুরুনাথ মায়াপ্পান, রাজ কুন্দ্রা ও সুন্দর রমন (প্রাক্তন আইপিএল সিওও)-র ওপর ফোকাস করতে হয়েছিল। এই চার জনের বিষয়টা বাদ দিয়েও আমাকে খেলোয়াড়দের দিকে তাকাতে হয়েছে। খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে যথেষ্ট অভিযোগ ছিল। ন'জন প্লেয়ার ছিল, একজন নয়। আমরা সবটাই দেখেছিলাম। কিন্তু চারজন আধিকারিকের তদন্তের কথা প্রকাশ্যে এসেছিল।” গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্ট আইপিএল দুর্নীতিতে চূড়ান্ত রায়দান দিয়েছে। মিশ্রর রিপোর্ট রয়ে গিয়েছে কোর্টের সঙ্গেই।

আরও পড়ুন:  কখনওই বলিনি বেটিং বৈধ হোক, বললেন আইন কমিশনের কর্তা

বিচারক মুকুল মুদগলের সঙ্গেই ছিলেন। ওনাদের প্রথম রিপোর্টেই বলা হয়েছিল যে, পুরো তদন্ত না-করে সন্দেহভাজন কার্যকলাপের ভিত্তিতে তাঁদের নাম করতে চাননি। মুদগল মুখবন্ধ খামে ১৩ জনের নাম দিয়েছিলেন। যার মধ্যে ন'জন ক্রিকেটার ও চার জন আধিকারিকের নাম ছিল। ২০১৪-র জুনের মাঝামাঝি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত টানা চার মাস তদন্ত চলেছিল আইপিএল দুর্নীতির। মিশ্র ১০০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। এদের মধ্যে ৩০ জন প্লেয়ার ও প্রথম সারির আধিকারিক ছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত বিচারক আরএম লোধা কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন মিশ্র।

এই রিপোর্টের ভিত্তিতেই আইপিএল-এর আধিকারিক/সহ-মালিক গুরুনাথ মায়াপ্পান (চেন্নাই সুপার কিংস), রাজ কুন্দ্রা (রাজস্থান রয়্যালস) আজীবন নির্বাসিত হন। এরপরেই ভারতীয় ক্রিকেটের পটপরিবর্তন হয়। এই তদন্তে একজন মহিলার নামও উঠে এসেছিল যিনি পরিচিত এক ক্রিকেটারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন বলে জানা গিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তা ভুয়ো বলে প্রমাণিত হয়।

ক্রিকেট বেটিং ও ম্যাচ-ফিক্সিংয়ের মত অত্যন্ত জটিল বিষয় সামলাতে গিয়ে কি আক্ষরিক অর্থেই তাঁরা কম সময় পেলেন? এই প্রশ্নের উত্তরে মিশ্র বললেন, “আমি মনে করি সুপ্রিম কোর্ট যথেষ্ট ভাল কাজ করেছে। তারা শুরুতে আমাদের দু’মাসের সময় দিয়েছিল। পরে সেটা বেড়ে চার মাস হয়, অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত চলে। বিচারক মুকুল মুদগলের প্রথম থেকেই ভাবনা চিন্তা অত্যন্ত স্বচ্ছ ছিল। উনি সময় বাড়ানোর কথা বলবেন না সেটা জানতাম। আসলে একটা সময়ের মধ্যেই লক্ষ্যপূরণ করতে হয়। আমরা মনে হয়ে আমরা ও তিন সাড়ে তিন মাসের মধ্যে যা যা করতে চেয়েছি, করতে পেরেছি। সত্যি বলতে আর একটু বেশি সময় পেলে ভাল হতো। কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ আদালত একটা লক্ষণরেখা বেঁধে দেয়। সেটা টপকানো যায় না।”

মিশ্র বিহার পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি ও নন্দীগ্রাম গুলিকাণ্ডের মতো ঘটনার তদন্তভার সামলেছেন। এই মুহর্তে তিনি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বিশেষ রিপোর্টার (কোনও সভা বা সমিতির কার্যবিবরণ তৈরি করে যিনি উচ্চতর সংস্থা বা সাধারণ সভায় পেশ করেন)।

Rajasthan Royals Chennai Super Kings
Advertisment