ভাগ্য বদলে গিয়েছে। স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণায় এখনও কাতরান পুরোনো স্মৃতি মনে পড়লে। ইচ্ছা হয়, প্রিয় সাইকেলে চেপে বিশ্বজয় করতে। তবে তা আর হল কই! সাইক্লিস্ট হিসাবে বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখা বরাহনগরের সঞ্জয় দাস এখন ডেলিভারি বয়। বহুজাতিক এক অনলাইন বিপণি সংস্থার।
জন্ম থেকেই বিশেষভাবে সক্ষম তিনি। তবে খেলাধুলোর প্রতি অদম্য আগ্রহ। তাই চেপে বসেছিলেন সাইকেলে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে সঙ্গে নিয়েই অবলীলায় খেলতেন ক্রিকেট, ফুটবল। তবে এসব এখন অতীত সঞ্জয় দাসের জীবনে। বরং যে খেলাকে জীবনের জিয়নকাঠি করবেন ভেবেছিলেন, সেই খেলাধুলার প্রসঙ্গ উঠলেই বরং নিজেকে গুটিয়ে নেন।
আরও পড়ুন: মোহনবাগানের জার্সিতে ব্যাটে ঝড় তোলেন কোহলি! বিরাটের বাঙালি কোচ এখনও সুখ-স্মৃতিতে ডুবে
২০১৩ সাল এখনও স্বপ্নের মত মনে হয় সঞ্জয় দাসের কাছে। প্যারা সাইক্লিস্ট হিসাবে প্যারা-এশিয়ান গেমসে দেশের হয়ে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। সরকারি আনুকূল্য ছাড়াই গাঁটের কড়ি ৯১০ টাকা খরচ করে চেপে বসেছিলেন দিল্লির উদ্দেশ্যে।
ক্রীড়াবিদ হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছে সঞ্জয়ের (এক্সপ্রেস ফটো: শশী ঘোষ)
ক্রিকেট-ফুটবলেও রাজ্যস্তরে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তবে ওখানেই শেষ। প্রবল আর্থিক কষ্টের মুখে পড়ে সঞ্জয় দাস নিজের খেলোয়াড়ি সত্ত্বাকে আলবিদা জানিয়ে ফেলেছেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে একরাশ অভিমান মেশানো কণ্ঠে বলছিলেন, "কী হবে খেলাধুলা করে। একসময় জাতীয় দলের হয়ে প্যারা এশিয়ান গেমসে জাপান, চীন, মালয়েশিয়ার মত দেশের প্রতিযোগীদের বিরুদ্ধে লড়ে চতুর্থ স্থানও পেয়েছি। তারপরেও তো কিছু হল না।"
আরও পড়ুন: জিমন্যাস্টিক ছেড়ে দিয়েছেন রিও মাতানো দীপা! সাসপেন্ড হতেই বিরাট ঘোষণা কোচ নন্দীর
প্যারা সাইক্লিস্ট হিসাবে সংসারের আর্থিক সুরাহা হবে না, বুঝেই অন্য খেলায় ঝোঁকেন। তবে সেখানেও সুবিধা করতে পারেননি। ২০১২-য় বাবা বেসরকারি কোম্পানির চাকরি থেকে অবসর নেন। সংসারের জোয়াল টানার দায়িত্ব পুরোটাই পড়ে সঞ্জয়ের কাঁধে।
জীবন এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড় করিয়ে দেয় সঞ্জয়কে, যেখানে হয় প্যাশনের খেলা অথবা চাকরি- যে কোনও একটা বেছে নিতে হবে। তারপরেই খেলাকে পুরোপুরি বিদায় জানান উঠতি তারকা।
প্যারা এশিয়ান গেমসে চতুর্থস্থান অর্জন করেও শুধুই হতাশা সঞ্জয়ের (এক্সপ্রেস ফটো: শশী ঘোষ)
স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা গলায় নিয়ে সঞ্জয় বলে চলেছিলেন, "বাবার চাকরি চলে যাওয়ার পরে ব্যাপক সমস্যায় পড়ে যাই। এশিয়ান গেমসে অংশ নিয়ে কলকাতায় ফিরে অন্য খেলায় ভাগ্য বদলের চেষ্টা করি। কাজের কাজ হয়নি। এরপরে বাধ্য হয়েই ফ্লিপকার্টের ডেলিভারি বয়ের চাকরি জুটিয়ে নিই।"
সাইকেলের প্যাডেলে যে পায়ে রঙিন জগতের স্বপ্নে বুঁদ ছিলেন, সেই পা আপাতত বাইকে। ক্রেতাদের পণ্যের সওয়ারিতে বন্দি পুরোনো স্বপ্ন।
আরও পড়ুন: পোল্যান্ড বর্ডার পেরোতে পারব কিনা জানি না! আতঙ্কের ভিডিওয় EXCLUSIVE ইউক্রেন ফিজিও
প্রতিকুলতা শুধু আর্থিক ক্ষেত্রেই নয়, খেলার জগতেও মুখোমুখি হয়েছেন, "মালয়েশিয়া, চীন, জাপানের সাইক্লিস্টদের পরিকাঠামোগত সুবিধা রয়েছে। আমাদের পরিকাঠামো তো অনেক দূর, আমাদের দেশের প্রতিযোগীরা টুর্নামেন্টের প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত ডায়েটিংও করতে পারেন না। অর্থের অভাবে। এমন প্রতিবন্ধকতা নিয়েও ১.১৭.২৭ সেকেন্ডে ফিনিশ করে চতুর্থ স্থান অর্জন করেছিলাম।"
আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে জীবনের দিক বদলে গিয়েছে অন্যদিকে (এক্সপ্রেস ফটো: শশী ঘোষ)
কেন্দ্রীয় সরকার তো বটেই রাজ্য স্তরেও কোনও আর্থিক আনুকূল্য পাননি। প্রতিবন্ধী এথলিটদের জন্য রাজ্য স্তরে বিশেষ অনুদানের আবেদন করেছেন। তবে এখনও সেই আবেদন মঞ্জুর হয়নি।
হারিয়ে গিয়েছেন সঞ্জয়। শতশত সঞ্জয় হয়ত ভবিষ্যতেও হারিয়ে যাবেন। এর শেষ কোথায়? প্রশ্ন তুলে দিচ্ছেন ডানলপের ট্র্যাজেডির নায়ক।