ভারতে নিয়মিত খেলে যাওয়া বিশ্বকাপারদের নাম উঠলে শুরুর দিকেই থাকে তাঁর নাম। গোয়া তো বটেই দাপিয়ে খেলেছেন কলকাতা ময়দানে খেলেছেন বছরের পর বছর। সেই অ্যান্থনি উলফ এখন পুরোদস্তুর পুলিশ অফিসার। ফুটবল ছেড়ে আপাতত চোর-ডাকাতদের শায়েস্তা করাই এখন তাঁর চ্যালেঞ্জ।
মাঠে বিপক্ষ ডিফেন্ডারদের ঘুম উড়িয়ে দিতেন উলফ। রক্ষণের ফুটবলারদের কাছে ত্রাস হয়ে উঠতেন বিপক্ষ অর্ধে বল পেলে। তিনি এখন মূর্তিমান আতঙ্ক অপরাধীদের কাছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে অ্যান্থনি উলফ বলে দিলেন, "কেরিয়ার প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। জীবনে স্থিরতা খুঁজছিলাম। সারাজীবন ফুটবল খেলে যাওয়া সম্ভব নয়।"
আরও পড়ুন: প্রিয় ইস্টবেঙ্গল নয়, পুজোর আগেই জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্মান দিল বেঙ্গালুরু! আবেগে একাকার লজেন্স মাসি
উলফের পিতাও ছিলেন পুলিশ অফিসার। নিজের কেরিয়ারের দ্বিতীয় অংশে রয়েছে বাবার ইচ্ছাপূরণের গল্পও। ত্রিনিদাদ এবং টোব্যাগোর হয়ে বিশ্বকাপে খেলা তারকা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার কাছে অকপট, "বাবা দীর্ঘদিন পুলিশ আধিকারিক হিসাবে দেশের সেবা করেছেন। বাবা সবসময় চাইতেন আমি যেন তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করি। তবে শৈশব থেকেই ফুটবলকে দারুণভাবে ভালবাসতাম।"
বাবার শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে খেলা ছেড়ে দেওয়ার পর উলফ আপাতত পুলিশ (ছবি- অ্যান্থনি উলফ)
"তাই ফুটবলকে আগে ছাড়তে পারিনি। এখন ফুটবল ছেড়ে দেওয়ার পরেই মনে হয়েছিল পুলিশে যোগ দেওয়ার এটাই সেরা সময়। তারপরেই অফিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চাকরি পেয়েছি। এখন গর্বের সঙ্গে দেশ এবং নাগরিকদের সেবা করতে পারব।"
২০০৬ সালে হঠাৎ করেই সকলকে অবাক করে জাতীয় দলের বিশ্বকাপগামী স্কোয়াডে জায়গা পেয়ে গিয়েছিলেন। জার্মানিতে মুলারদের ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের যাবতীয় আকর্ষণ চাক্ষুস করেছিলেন ফুটবলার হিসাবে।
আরও পড়ুন: বাগান ছেড়ে ইস্টবেঙ্গল নয়, চ্যাম্পিয়ন তারকা যোগ দিলেন ISL-এর নক্ষত্রখচিত ক্লাবে
সবমিলিয়ে জাতীয় দলের হয়ে ৩৫টি ম্যাচ খেলে ফেলা অ্যান্থনি উলফের ভারতে পদার্পণ ঘটে চার্চিল ব্রাদার্সের হয়ে। চার্চিলের হয়ে ভারতে প্ৰথম মরশুম খেলার পরে উলফ পরবর্তী সিজনেই নাম লেখান স্পোর্টিং গোয়ায়। এরপরে আরও দু-দফায় চার্চিলে খেলেছেন। কলকাতা লিগে টালিগঞ্জ অগ্রগামী, পিয়ারলেসের হয়ে বছরের পর বছর খেলতে দেখা গিয়েছে ত্রিনিদাদের সুপারস্টারকে। কলকাতা লিগের অন্যতম আকর্ষণই হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।
২০১৯-এ কলকাতা লিগের ৬১ বছরের ইতিহাসে তিন প্রধানের বাইরে প্ৰথম দল হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হয় পিয়ারলেস। সেই ট্রফি জয়ী পিয়ারলেস দলের অন্যতম সেরা অস্ত্র ছিলেন অ্যান্থনি উলফ।
কলকাতা লিগে পিয়ারলেসকে ইতিহাস গড়ে চ্যাম্পিয়ন করার পর উলফ (ছবি- অ্যান্থনি উলফ)
এখন ভীষণ ব্যস্ত পুলিশের চাকরিতে। আরংগেজ শহরে পিওএস এলাকায় ডিউটি করার সময়েই তিনি বলছিলেন, "মাঝেমধ্যে ভারতীয় ফুটবলের খবর রাখি। তবে সময় হয়ে ওঠে না সবসময়। ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ ক্ষীণ হয়ে গেলেও ক্রোমা, প্রিয়ন্ত সিং, সতীশ সহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রয়ে গিয়েছে এখনও।"
আরও পড়ুন: DTDC-র সঙ্গে জুড়ে গেল ইস্টবেঙ্গলের নাম! কৃতী বঙ্গসন্তান বড় দায়িত্ব নিয়ে লাল-হলুদে
বিপক্ষ দলের সামনে যেমন মূর্তিমান আতঙ্ক ছিলেন, চোর-অপরাধীদের কাছেও সেই ত্রাসের সঞ্চার করতে বদ্ধপরিকর তিনি। তাতে যতই মৃত্যুর ঝুঁকি থাকুক না কেন!