"চুনী না থাকলে বলরাম হতে পারত না"

বলরাম, চুনীর সান্নিধ্যেই ১৯৬২-র এশিয়ান গেমসে সোনা জয়। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কিংবদন্তি বলছিলেন, ও আমাকে অনেক গোলের পাস বাড়িয়েছিল।

বলরাম, চুনীর সান্নিধ্যেই ১৯৬২-র এশিয়ান গেমসে সোনা জয়। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কিংবদন্তি বলছিলেন, ও আমাকে অনেক গোলের পাস বাড়িয়েছিল।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

চুনী গোস্বামী নাম শুনলেই ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠতেন তুলসিদাস বলরাম। এই ঈর্ষার বশবর্তী হয়ে কত যে বিনিদ্র রাত্রিযাপন করেছেন তিনি তার ইয়ত্তা নেই। ভারতীয় ফুটবলের ত্রিমুর্তির একজন তুলসিদাস বলরাম। পিকে, চুনী আর বলরাম- এই তিনজনই ভারতীয়  ফুটবলের ব্রহ্ম, বিষ্ণু, মহেশ্বর। চুনী গোস্বামীর প্রয়াণের পর তিনিই পিটিআইকে বলছিলেন, "তুলসিদাস বলরাম হতে পেরেছি একমাত্র চুনী গোস্বামীর জন্য। আমিও যে ওঁর থেকে কম যাই না। তা প্রমাণ করতে চেয়েছিলাম। ক্রীড়াবিদদের মধ্যে স্বাভাবিক ঈর্ষাপরায়নতা জন্মেছিল আমার। ভালো করে ঘুমাতে পারতাম না। সবসময় ওর কথা ভাবতাম। স্বপ্ন দেখতাম। নিজেকে প্রমাণ করতে চেয়েছিলাম।"

Advertisment

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবারই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন চুনী গোস্বামী। স্মৃতিচারণ করতে বসে বলরাম জানাচ্ছিলেন, "ওকে যখন প্রথম দেখি, তখন ও বেশ তরুণ বয়সের। অসংখ্য গুণমুগ্ধদের মাঝে। সন্তোষ ট্রফি জেতার পর বেশ নাম ডাক হয়েছিল। সিনিয়রদের কাছে ওর বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম।"

নিজেদের মধ্যে সম্পর্কের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ৬২-র সোনাজয়ী দলের অন্যতম এই সদস্য জানালেন, "বাংলার হয়ে এক মরশুম দারুণ খেলেছিল। ওঁর আর আমার শারীরিক গঠন, উচ্চতা একই ছিল। খালি ও একটু ফর্সা ছিল। আমি কালো ছিলাম। তার পরেই নিজেকে বলি, ও যদি এত ভালো খেলতে পারে, আমি পারবো না কেন! আমাদের মধ্যে এমন একটা ব্যাপার ছিল যে ও আমাকে প্রতিদ্বন্দিতায় আহ্বান করত। আমি সেই চ্যালেঞ্জ নিই। ওকে যদি সেদিন না দেখতাম, তাহলে আজকের বলরাম হতাম না।"

নিজেদের মধ্যে অদৃশ্য প্রতিযোগিতা বেশ উপভোগ করতেন তিনি। সেবিষয়েই বলরাম জানাচ্ছিলেন, "পরের দিকে আমরা ভালো বন্ধু হয়ে গিয়েছিলাম। আমাদের মধ্যে কে বেশি ভালো, তা নিয়ে মিডিয়ায় লেখালেখি হত। এটা আমরা উপভোগই করতাম। আমাদের মধ্যে মাঠের লড়াই বাদ দিলে দারুন বন্ধু ছিলাম দুজনে। ম্যাচের পরে মোহনবাগান টেন্টে গেলে ও আমাকে সফট ড্রিঙ্কস অফার করত।"

Advertisment

বলরাম, চুনীর সান্নিধ্যেই ১৯৬২-র এশিয়ান গেমসে সোনা জয়। সেই জয়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কিংবদন্তি বলছিলেন, "ও আমাকে অনেক গোলের পাস বাড়িয়েছিল। অধিকাংশই গোল করেছিলাম। ওই টুর্নামেন্টের প্রতি মুহূর্ত এখনো মনে রয়েছে।" ভারত গোটা টুর্নামেন্টে ৩৬ গোল করেছিল। তার মধ্যে ২০ গোলই এসেছিল দুজনের পা থেকে।

তুলসিদাস বলরামের গলা ধরে আসে সেই স্মৃতিচারনার সময়। তিনি বিষন্ন গলায় বলে যান, "পরের মাসেই হয়ত আমার পালা। মৃত্যুর কথা কেউ বলতে পারে না। ডাক এলে যেতে হবেই। প্রত্যেককেই যেতে হয়। পিকের পর এত তাড়াতাড়ি চুনী চলে যাবে, তা ভাবতেই পারছি না।"

Chuni Goswami