/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2018/09/Tutu-Bose.jpg)
মধ্যমণি টুটু বসু
হাতে আর এক মাস তিন দিন। তারপরেই ময়দানে ফের ‘ডার্বি’! যদিও এই মহারণ ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগানের নয়। মোহনবাগান বনাম মোহনবাগানের চিরাচরিত নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বীতা। ভোট ময়দানে গদি দখলের লড়াইয়ে মুখোমুখি দুই প্রাণের বন্ধু অঞ্জন মিত্র ও টুটু বসু। যে জিতবেন সেই হবেন নয়া সচিব। মঙ্গলবার বিকেলে ছিল মনোনয়ন জমা দেওয়ার পালা।
এদিন দুপুর থেকেই মোহনবাগান তাঁবুতে উত্তেজনার আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল। বিকেল গড়াতেই রীতিমতো তেতে উঠল গঙ্গাপারের শতাব্দী প্রাচীন ক্লাব। সভ্য সমর্থকদের ভিড় আর স্লোগানের ঢেউ আছড়ে পড়েছিল সবুজ-মেরুণ তাঁবুতে। এর মধ্যেই চমকে দিয়েছিলেন তৃণমূলের নির্বাসিত সাংসদ কুনাল ঘোষ। ছ’জন সঙ্গীকে নিয়ে মনোনয়ন জমা দিয়ে যান তিনি। এসে জানিয়ে দেন যে, তাঁর ২২ জনের প্যানেলর বাকিরা দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিভক্ত। জানা গিয়েছে যুগ্মসচিব পদেই কুনালবাবু নিজের মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। কুনাল ঘোষ চলে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মোহনবাগানের গেটের বাইরে একপ্রকার শব্দব্রহ্ম তৈরি হয়। টুটু বসু ও সৃঞ্জয় বসুর গাড়ি ঘিরেই টুটু বসুর নামে জয়ধ্বনি দিতে শুরু করেন একদল সমর্থক। তাঁদের স্লোগান ছিল, “সব ভোট টুটু বোস, শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, টুটু বোস ভরসা।”
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2018/09/two.jpg)
টুটু-সৃঞ্জয়রা এদিন চমকের পর চমক সাজিয়ে রেখছিলেন। একদা টুটুবাবুর বিরুদ্ধে নির্বাচনে দাঁড়ানো বলরাম চৌধুরি আজ তাঁর পাশে। ক্লাবে এসে টুটুর প্রতি সমর্থন জানিয়ে গেলেন খোদ রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও। টুটু গোষ্ঠীর প্রাক নির্বাচনী জৌলুস আর বৈভব কোথাও যেন বার্তা দিচ্ছে যে, তাঁরাই আসতে চলেছেন ক্ষমতায়। তাঁদের শরীরি ভাষায় আত্মবিশ্বাস ফুটে উঠছে। অন্যদিকে বিরোধী শিবির যেন ধুঁকছে। অসুস্থতার জন্য হাজির থাকতে পারলেন না অঞ্জন মিত্র। বিরোধীদের মুখ বুলতে অঞ্জনের কন্যা সোহিনী মিত্র ও জামাই কল্যাণ চৌবে।
টুটু বসু এদিন নিজের জয়ের ব্যাপারে রীতিমতো আত্মবিশ্বাসী। তিনি বললেন, “মোহনবাগানিরা জানে ক্লাবের জন্য টুটু বসু কী! আমায় সেটা প্রমাণ করতে হবে না।” সেই কথা ধরেই বলরাম বাবু বললেন, “টুটু দা-কে নিজেকে প্রমাণ করার পরীক্ষা দেওয়া মানে, আমাদের লজ্জার ব্যাপার।” টুটুবাবুর আরও সংযোজন, “কম কথা বলে যারা কাজ বেশি করে তাঁদের জন্য এরকম স্লোগান তৈরি হয়।” অঞ্জনবাবুর সঙ্গে লড়াই মানতে নারাজ তিনি। বললেন, “আমার কাছে এটা কোনও লড়াই নয়। ক্লাবের প্রয়োজনে নির্বাচন হচ্ছে। সেখানে আমি অংশ নিচ্ছি। মানুষের ভালবাসার দাম দিতেই ৭২ বছর বয়সে এখানে। মোহনাবাগানের মানুষ ঠিক করবেন তাঁরা টুটু না অঞ্জনকে চায়” অন্য়দিকে টুটু বসুর পাসে বসা সুব্রত মুখোপাধ্য়ায় বললেন,”টুটু বসুকে বাদ দিয়ে মোহনবাগান ভাবা যায় না।” কুনাল ঘোষের মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রসঙ্গে সুব্রতর সংযোজন, “দেখুন উনি সাজাপ্রাপ্ত নন। ফলে মোহনবাগানের নির্বাচনে দাঁড়াতেই পারেন।”
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2018/09/Sohini-Mitra.jpg)
অন্যদিকে অঞ্জন গোষ্ঠী সদস্যরা এদিন মনোনয়নকে কেন্দ্র করেই মূলত ক্লাবের কাঁচের ঘরেই বন্দি ছিলেন। যা দেখে টিপ্পনি করতে ছাড়লেন না সৃঞ্জয় বসু। বললেন, “এখন তো আর শাসক গোষ্ঠী নই, আর এসি ঘরে বসারও উপায় নেই।” এদিন টুটু-সৃঞ্জয়রা ২২ জনের প্যানেলের নামও জানিয়ে দিলেন মেইল করে। সেখানে অঞ্জন গোষ্ঠীর কেউই মনোনয়ন নিয়ে একটা কথাও বললেন না। ২২ জন তো দূরের কথা, একজনেরও নামও জানালেন না তাঁরা। শাসক গোষ্ঠীর লড়াইয়ের মুখ সোহিনী বললেন, “আমরা তিন তারিখের আগে কিছু বলতে পারব না মনোনয়ন নিয়ে। নির্বাচনের দায়িত্বে যে তিন প্রাক্তন বিচারপতি আছেন তাঁরাই জানাবেন সময়মতো” তাঁর মতে এই নির্বাচনটা কোথাও কাঙ্খিত ছিল না। তাঁর সংযোজন, “এটা প্রত্যাশিত ছিল না। কিন্তু মিডিয়া এটাকে ডার্বি বলছে। আমি বলব ম্য়াচ যখন শুরুই হয়ে গেছে, আশা করি দু’পক্ষই প্রস্তত আছে। দেখা যাক এবার!” টুটু বসুর সমর্থনে শয়ে শয়ে সমর্থক যেখানে, সেখানে অঞ্জনের হয়ে গলা ফাটাচ্ছেন হাতে গোনা কয়েকজন। এ বিষয়টা নিয়েও সোহিনী মাথা ঘামাচ্ছেন না। তাঁর মতে এটা যার যার নির্বাচনী কৌশল।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2018/09/Meeting.jpg)
টুটু গোষ্ঠীর যে প্যানেল পাওয়া গিয়েছে সেখানে সহকারি সাধারণ সচিব পদে সৃঞ্জয়বাবু, অর্থসচিব পদে দেবাশিস দত্ত, ফুটবল সচিব পদে বাবুন বন্দ্যোপাধ্য়ায়, কোষাধ্যক্ষ পদে সত্যজিৎ চট্টোপাধ্য়ায়রা রয়েছেন। বাবুনবাবু বললেন, “ ভোটের ফল ২২-এ ২২ হবে। টুটু দা’র সঙ্গে ছিলাম, আছি ও থাকব। ওনার সঙ্গে কাজ করার মজাই আলাদা। আগেও করেছি জানি। আর আমি ফুটবল সচিব পদে আছি। ওই পদেই কাজ করব।” টুটু বসু এদিন বাগান সমর্থকদের জন্য দুটি বার্তা দিয়েছেন। ভোটে জিতে সচিব হয়ে আসলে তিনি সবার আগে আইএসএল-এর জন্য ঝাঁপাবেন। ইস্টবেঙ্গলের মতোই ক্লাবের পরিকাঠামো গড়ে তুলবেন।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2018/09/Supporters.jpg)
অন্যদিকে শোনা যাচ্ছে যে, অঞ্জন গোষ্ঠীর মধ্যে এই মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়েই চাপানউতোর অব্যাহত। কল্যাণ চৌবে নাকি বাবুনবাবুর বিরুদ্ধে লড়াইতে নামতে চাননি।এদিন সকালে অঞ্জন গোষ্ঠী নতুন করেই মনোনয়নপত্র তুলে জমা দিয়েছে বলে খবর। জানা যাচ্ছে কাশীনাথ দে অর্থসচিব ও মদন দত্ত কোষাধ্যক্ষের পদে লড়ছেন। সোহিনী চৌবে ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট সচিব পদে লড়ছেন। এখন থেকেই একটা অঙ্ক মাথায় ঘুরছে ময়দানের অনেকের মাথায়। নির্বাচনে যদি টুটুবাবু জিতে যান, তাহলে পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ সুব্রতবাবুকেই দেখা যাবে বাগানের নয়া প্রেসিডেন্ট পদে। অন্যদিকে আগামী ৩ তারিখ মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। ময়দানের একাংশের মত অঞ্জন গোষ্ঠীর বিবাদের সমাধানসূত্র যদি বেরিয়ে না-আসে তাহলে অঞ্জনবাবু অ্যান্ড কোং ওয়াক-ওভারের পথেও হাঁটতে পারে।