Advertisment

ক্রিকেট বড়লোকদের, ফুটবল গরিবের! বিশ্বকাপে খেলা রহিমদের জীবন বদলের উপলব্ধি বাবার

যুব বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া বাংলার তিন তারকার পরিবারে দিন বদলেছে। এমনটাই জানাচ্ছেন তারকাদের পরিবার। ক্রিকেটের সঙ্গে তুলনায় যেতে নারাজ সকলেই।

author-image
Subhasish Hazra
New Update
NULL

"ক্রিকেট বড়লোকদের খেলা, গরিবরাই ফুটবল খেলে",,,
এক নিঃশ্বাসে বলে চলেছিলেন রহিম আলির পিতা। যুব বিশ্বকাপে টিম ইন্ডিয়ার হয়ে খেলা রহিম আলি।

Advertisment

কেউ ভ্যান চালান, কেউ পুরসভার জঞ্জাল ফেলার ময়লা গাড়ি বহন করেন। কেউ আবার দিন মজুর। তাঁদের ছেলেরাই ভারতের জার্সিতে কয়েক বছর আগে যুব বিশ্বকাপে খেলেছিলেন। বাংলার দামাল ফুটবলার হিসাবে ব্লু টাইগারদের দলে নাম লিখিয়েছিলেন রহিম আলি, জিতেন্দ্র সিং, অভিজিৎ সরকাররা। কয়েক বছর কেটে যাওয়ার পরে প্রত্যেকের পরিবারের তরফে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, বিশ্বকাপে অংশগ্রহন আমূল বদলে দিয়েছে তাঁদের জীবনযাত্রা। যদিও তা নিতান্তই সামান্য।

যুব বিশ্বকাপে কয়েক দিন আগেই ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। সামনেই আইপিএলের নিলাম। বিশ্বকাপজয়ী অনেক যুব তারকাই কোটি কোটি টাকায় নিলামে হয়ত দল পেয়ে যাবেন। তবে ফুটবল? কোটির জায়গায় এখানে বেতন সাকুল্যে কয়েক লাখ। এখানেই প্রশ্ন…

আরও পড়ুন: অমিত কুমারের সঙ্গে লতার ডুয়েট ইস্টবেঙ্গল মাঠে! এখনও অমলিন লাল-হলুদ সেই স্মৃতি

আইএসএলে বর্তমানে জিতেন্দ্র সিংয় জামশেদপুর এফসির হয়ে খেলছেন। ফোনে কলকাতা থেকে দাদা সুরজ সিং বলছিলেন, "আগে প্রবল দারিদ্র্য নিয়ে বেঁচে থাকতে হত। খুব কষ্টের মধ্যে আমরা দিন কাটিয়েছি। এখন সেই সমস্যার অনেকটাই সুরাহা হয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই।"

অভিজিৎ সরকার বর্তমানে আইএসএলে ব্রাত্য। আইলিগে সুদেবা এফসির হয়ে খেলছেন। লক্ষ্য ফের একবার আইএসএলের কক্ষপথে প্রবেশ করে জাতীয় দলে খেলা। দাদা তিলক সরকার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলছিলেন, "সমস্যার যে উন্নতি হয়েছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তবে বাবা এখনও ভ্যান চালান। বাবা জানিয়েছেন, কঠিন সময়ে ভ্যান চালিয়ে আমাদের বড় করেছেন। এখন তাই কিছুটা ভালবাসার টানেই সেই কাজ করে চলেছেন।"

জিতেন্দ্র সিং আবার বাবাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি খেলছেন, তাই আর দিনমজুরের কাজ করার দরকার নেই। কাঁচা বাড়িতে শহরের এক কোনে কোনওরকমে দিন গুজরান করতেন জিতেন্দ্র সিংয়ের পরিবার। দাদা সুরজ দিল্লিতে কয়েক বছর ফুটবল খেলে বর্তমানে রেনবোয় খেলছেন। ভবিষ্যতে কোচিংয়ের পেশায় যেতে চান। তিনি সহজ ভাবেই বলছিলেন, "ক্রিকেটের পরিধি অনেক বড়। মার্কেট বড়। ফুটবল এখনও সেই পর্যায়ে পৌঁছতে পারেনি। তবে ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। ক্রিকেটের মত ক্রোড়পতি না হলেও, ফুটবলাররা কিন্তু লাখপতি। অন্তত জীবন ধারণ করা তো যাচ্ছে!" নিজেকেই যেন স্বান্ত্বনার চাদরে জড়িয়ে নেন স্বপ্ন দেখা তরুণ।

রহিম আলির পিতা অবশ্য রাখঢাক না করে বলে দিলেন, "ইচ্ছা ছিল ছেলেকে ক্রিকেটার বানাবো। তবে ক্রিকেট তো বড়লোকদের খেলা। গরিবদের খেলা ফুটবল। তাই ইচ্ছা থাকলেও ছেলেকে ফুটবলে এগোতে দিলাম। ক্রিকেটের মত হাজার হাজার টাকার সরঞ্জাম না কিনে হাফপ্যান্ট পরেই ফুটবল শিখেছে ছেলে।"

ময়লা গাড়ির ভ্যান আর চালান না। স্ত্রী-ও পরিচারিকার কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। যেদিন থেকে ছেলে রহিম দেশের ফুটবলের এক নম্বর লিগে নাম লিখিয়েছেন। বিশ্বকাপ পর্ব সমাপ্ত করে। নিজের আর্থিক পরিস্থিতিতে সন্তুষ্ট। বলে দিচ্ছেন, "মুখ্যমন্ত্রীর তরফে সাহায্য করা হয়েছে। রহিম নিজেও নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে টাকা উপার্জন করছে। আমাদের পরিস্থিতি আগের থেকে অনেকটাই ভাল হয়েছে।"

আরও পড়ুন: “হারাটা ইস্টবেঙ্গল অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছে!” প্রাক্তনীদের বিষ্ফোরক চিঠি ক্লাবকে

যুব ক্রিকেটারদের সঙ্গে তুলনা নয়, বরং দিন বদলের বাস্তবে দাঁড়িয়েই যাবতীয় সন্তোষ বাঙালি বিশ্বকাপারদের আত্মীয়দের।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

indian football team Indian Football
Advertisment