/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2022/06/Lluis-cortes_1.jpg)
যুদ্ধের আতঙ্ক এখনও চোখে মুখে কিংবদন্তী কর্তেজের ( ছবি- লুইস কর্তেজ )
বিশ্ব ফুটবলে জনপ্রিয়তা এখনই গগনচুম্বী। মধ্য তিরিশ পেরোতে না পেরোতেই ইউরোপের প্ৰথম সারির ফুটবল মগজাস্ত্র হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন। লুইস কর্তেজ স্বপ্নপূরণের এক নাম। বার্সেলোনার মহিলা দলের হয়ে ঐতিহাসিক ট্রেবল জিতেছেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সহ। আবার ইউক্রেনীয় মহিলা ফুটবল দলকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন। সম্মানের রাজমুকুট পরেছেন। আবার যুদ্ধ বিধ্বস্ত শহর থেকে পালিয়ে আসার অভিজ্ঞতাও হয়েছে। নিজেকে উজাড় করে দিলেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র কাছে।
১) বিশ্ব ফুটবলে আপনি এখনই রীতিমত সাড়া জাগানো এক নাম। মহিলা ফুটবল প্রশিক্ষক হিসাবে অভূতপূর্ব সাফল্যের অংশ হয়েছেন। জীবনের দিকে ফিরে তাকালে কেমন অনুভূতি হয়?
কর্তেজ- আমরা গত মরশুমে ঐতিহাসিক ট্রেবল জিতেছিলাম। বার্সেলোনায় আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে মহিলা ফুটবলে কার্যত কোনও কিছুই সাফল্য ছিল না। তবে ত্রিমুকুট অর্জনের পরে নিজের জন্য তো বটেই ক্লাবের সাপোর্ট স্টাফ, ম্যানেজমেন্ট সকলের জন্যই গর্বিত। ইতিহাসের অংশ হওয়া সম্পূর্ণ আলাদা এক অনুভূতি।
২) কোচিং কেরিয়ারে সবথেকে তৃপ্তিদায়ক মুহূর্ত কোনটা?
কর্তেজ- অবশ্যই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় সবথেকে স্পেশ্যাল। বলা যতটা সহজ, এই অর্জন মোটেই ততটা সহজ নয়। ওটাই আমার কেরিয়ারে সেরা মুহূর্ত হয়ে থাকবে আজীবন। সেমিফাইনালে পিএসজির বিরুদ্ধে জয়-ও আলাদা তৃপ্তি এনে দিয়েছিল। এছাড়া ২০১৯-এ বায়ার্ন মিউনিখের সঙ্গে ড্র করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে প্ৰথমবার উঠেছিল বার্সেলোনা মহিলা দল। সেই জয়ও ভীষণ স্পেশ্যাল।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2022/05/Barcelona.jpg)
বার্সেলোনার ঐতিহাসিক ত্রিমুকুট জয়ের কারিগর লুইস কর্তেজ (ছবি: লুইস কর্তেজ)
আরও পড়ুন: পোল্যান্ড বর্ডার পেরোতে পারব কিনা জানি না! আতঙ্কের ভিডিওয় EXCLUSIVE ইউক্রেন ফিজিও
৩) বার্সেলোনায় থাকার সময় কিংবদন্তি ফুটবলারদের সঙ্গে সান্নিধ্যের সুযোগ পেয়েছিলেন?
কর্তেজ- বার্সেলোনায় কোচিং করানোর সময় পুরুষ দলের সঙ্গে খুব বেশি সাক্ষাতের সুযোগ হয়ে ওঠেনি। কারণ করোনা আবহে আমাদের জন্য আলাদা আলাদা বাবলের ব্যবস্থা ছিল। বার্সেলোনা দুনিয়ার অন্যতম সেরা ক্লাব। ক্লাবের মধ্যে পুরুষ, মহিলা দলের পরিকাঠামো- যেমন মাঠ, অনুশীলনের মাঠ সমস্ত কিছুই আলাদা। তবে একবার পুরুষ দলের সঙ্গে ফটো সেশন করতে হয়েছিল। ওদের ম্যানেজারের সঙ্গেও মিটিং করেছি একবার। তবে ফুটবলারদের সঙ্গে সেভাবে সাক্ষাৎ হয়নি।
৪) যুদ্ধের পরে ইউক্রেনে কোচিংয়ের জন্য ফেরাটা কতটা কঠিনতম হতে চলেছে?
কর্তেজ- এই মুহূর্তে পরিস্থিতি মোটেই স্বাভাবিক নয়। যাঁরা এখনও ইউক্রেনে রয়েছেন, দেশকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন। অনেকে আবার পরিবার নিজেকে বাঁচানোর তাগিদে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2022/05/Barcelona-1.jpg)
মহিলা ফুটবলে এখনই কিংবদন্তিসম চরিত্র লুইস কর্তেজ (ছবি লুইস কর্তেজ)
পুরুষ এবং মহিলা ফুটবল দল বর্তমানে বিদেশে খেলছে। আমাদের ক্যাম্প চালু হচ্ছে জুন থেকে। স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে আমাদের ম্যাচ রয়েছে। খেলা হবে হাঙ্গেরিতে। ইউক্রেনে খেলা সম্ভব নয়, তাই নয় দেশে এই সমস্ত অফিসিয়াল ম্যাচ খেলতে হচ্ছে আমাদের। ইউক্রেনের পার্শ্ববর্তী দেশ হওয়ায় পোল্যান্ডে খেলার বন্দোবস্ত করছে ইউক্রেনীয় ফুটবল সংস্থা।
৫) রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় ভয়ার্ত অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
কর্তেজ- একজন ইউক্রেনীয়ের থেকে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অবশ্যই আলাদা ছিল। কারণ আমি স্প্যানিশ। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে আমি এবং জর্দিকে (জর্দি এসকুরা, মহিলা ফুটবল দলের ফিটনেস ট্রেনার) কার্যত পালাতে হয়েছিল। আমরা স্পেনে নিরাপদে ছিলাম। তবে ইউক্রেনে কোচিং করানোর সুবাদে ফুটবল সংস্থার কর্তা হোক বা খেলোয়াড়- আমাদের মধ্যে হৃদ্যতা তৈরি হয়েছিল। যুদ্ধের সময় আমরা দেশে ফিরে গেলেও ওঁদের জন্য আমাদের দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না।
সেইসময় আমরা যেকোনও উপায়ে ইউক্রেনকে সাহায্য করতে প্রস্তুত ছিলাম। বিদেশ থেকে ট্রাকে করে খাবার, ওষুধ, পোশাক পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলাম আমরা। সেই মুহূর্তে সেটাই সবথেকে।বেশি প্রয়োজনীয় ছিল।
৬) যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে কীভাবে ইউক্রেন ছাড়লেন, সেই রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা:
কর্তেজ- যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় আমি অন্যান্য সাপোর্ট স্টাফদের সঙ্গে কিয়েভে ছিলাম। একদিন সকালে জর্দি আমাদের জানায়, যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে। আমাদের প্ৰথম উদ্দেশ্যই ছিল তড়িঘড়ি করে কিয়েভ ছেড়ে লিভের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা। ইউক্রেন ফুটবল সংস্থার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটা গাড়ি এবং ড্রাইভারের ব্যবস্থা করা হয়। সেই সময় লিভ অপেক্ষাকৃত ভাবে নিরাপদ ছিল। তবে যাত্রাপথ মোটেই মসৃণ ছিল না। রাস্তায় প্রবল যানজটের মুখে পড়তে হয়।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2022/05/Lluis-Cortes.jpg)
ইউক্রেনে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখে লুইস কর্তেজ (ছবি: লুইস কর্তেজ)
সকলেই সেই সময় কিয়েভ ছাড়ছিল, তাই রাস্তায় সারি সারি গাড়ি নেমে পড়েছিল। সাধারণ সময়ে কিয়েভ থেকে লিভ পৌঁছতে ঘন্টা চারেক লাগে। তবে সেই সময় আমাদের ২০ ঘন্টার বেশি রাস্তায় কাটাতে হয়।
লিভে পৌঁছে এক রাত কাটিয়েই আমরা চেমসিলে রওনা হই ট্রেনে করে। চেমসিল সেই সময়ে পোল্যান্ডের সঙ্গে একমাত্র কানেকটিং স্টেশন ছিল। সেই কারণেই বহু ইউক্রেনীয় ট্রেনে করে চেমসিলে পালিয়ে যাচ্ছিল। পোলিশ সেই শহরে প্রায় কুড়ি ঘন্টা কাটিয়ে আমরা ক্রাকো যাই। সেখান থেকে মিউনিখের ফ্লাইট ধরি। মিউনিখ থেকে শেষমেশ বার্সেলোনা পৌঁছই আমরা।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে বোমা-বারুদের মধ্যে আটকে চ্যাম্পিয়ন দাবাড়ু! দ্রুত দেশে ফেরার আর্জি বাবা-মার
গোটা যাত্রাপথ মোটেই স্বস্তির ছিল না। গাড়িতে হোক বা ট্রেনে- যেখানেই যাচ্ছিলাম, দুঃখের প্রলেপ লেগে ছিল। সর্বত্রই হাহাকার। হৃদয় মুচড়ে দিচ্ছিল আমাদের।
৭) রাশিয়াকে বিশ্বপর্যায়ের সমস্ত টুর্নামেন্ট থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটা কী সঠিক পদক্ষেপ?
কর্তেজ- উয়েফা, অলিম্পিক কমিটি রাশিয়ার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে বড় টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। রাজনীতিবিদ নই। তাই এটা সঠিক পদক্ষেপ কিনা, তা বলতে পারব না। হয়ত এই বিষয়ে আমি মন্তব্য করার মত উপযুক্ত ব্যক্তি নই। এই পদক্ষেপ রাশিয়াকে যুদ্ধ থেকে বিরত রাখবে কিনা, সেটাও জানি না।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2022/05/Lluis.jpg)
ঐতিহাসিক সেই ট্রফি হাতে স্প্যানিয়ার্ড (ছবি: লুইস কর্তেজ)
৮) ভারতীয় ফুটবল সম্পর্কে আপনার ধারণা কীরকম?
কর্তেজ- ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সৌজন্যে ভারতীয় ফুটবলের সমস্ত বিষয় নজর রাখি। আইএসএল নিয়ে আমার আগ্রহ রয়েছে। গত কয়েক বছরে লিগ আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই লিগের হাত ধরে ভারতীয় ফুটবলের মানও নিঃসন্দেহে বেড়ে চলেছে। তবে যেকোনও বিষয়েরই উন্নতির অবকাশ থাকে।
আইএসএল থেকে যদি ভালো প্রস্তাব আসে, তাহলে নিশ্চয় ভেবে দেখব। আমি মহিলা ফুটবল দলের ম্যানেজার হলেও পুরুষদের ফুটবলেও কোচিং করাতে সমানভাবে আগ্রহী। মহিলা হোক বা পুরুষ- দিনের শেষে আমি একজন ফুটবল প্রশিক্ষক।
/indian-express-bangla/media/agency_attachments/2024-07-23t122310686z-short.webp)
Follow Us